মো. আমিনুল ইসলাম ::
প্রতি বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলের অপেক্ষায় থাকা শিক্ষার্থীরা ফল প্রকাশের পর আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠেন। জেলায় যে কয়টি কলেজ বরাবরই ভালো ফলাফলের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে তাদের অধিকাংশের বেলায়ই শিক্ষার্থীদের জিপিএ-৫ পাওয়া নিয়ে একরকম প্রতিযোগিতা চলে। কিন্তু এবছর ঘটেছে তার উল্টো। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে জিপিএ ৫ প্রাপ্তির দিক থেকে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে সুনামগঞ্জ। তবে ফলাফলে অন্যান্য বছরের চেয়ে ভালো করেছে সুনামগঞ্জের মেয়েরা। এবছর তারা মেধায় ছেলেদেরকেও টপকে গেছে।
এ বছর ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে সুনামগঞ্জে জিপিএ ৫ পেয়েছে ১০ জন শিক্ষার্থী। এরমধ্যে ৫ জন ছেলে ও ৫জন মেয়ে শিক্ষার্থী। রোববার দুপুরে প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে সিলেট শিক্ষাবোর্ড সূত্রের বরাতে, এ বছর সুনামগঞ্জ জেলায় ১১ হাজার ৮২৬ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। এরমধ্যে মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৮ হাজার ৬৬৯ জন পরীক্ষার্থী।
তাদের মধ্যে মেয়ে পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন ৬ হাজার ৫৩৫ জন এবং ছেলে পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন ৫ হাজার ২৯১ জন। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা ৪ হাজার ৮৫৩ জন। মেয়ে শিক্ষার্থীদের পাসের হার ৭৪.২৬%। অন্যদিকে, পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছেলেদের সংখ্যা ৩ হাজার ৮১৬ জন। তাদের পাসের হার ৭২.১২%।
জেলায় এ বছর মোট পাসের হার ৭৩.৩০%। মেয়ে পরীক্ষার্থীদের উত্তীর্ণের হার ৭৪.২৬% ও ছেলে পরীক্ষার্থীদের উত্তীর্ণের হার ৭২.১২%।
এবছর সুনামগঞ্জ জেলা শহরের অন্যতম নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সুনামগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৭৪৯জন ছাত্রী। তাদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৫৬৪জন। তবে এবছর এ কলেজে কোন জিপিএ ৫ আসেনি।
অন্যদিকে, জেলার ঐতিহ্যবাহী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয় ১১শ ২জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয় ৮৬৪জন। পাসের হার ৭৮.৪০%। এ কলেজে জিপিএ ৫ এসেছে ৫টি।
সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘এ বছর কেবল সুনামগঞ্জ নয় পুরো সিলেট বিভাগেরই একই অবস্থা। আমাদের হাওরে দুর্যোগের কারণে শিক্ষার্থীরা দুশ্চিন্তায় ছিল। তাই এরকম অবস্থা হতে পারে বলে আমি মনে করি। তবে আমাদের কলেজের পাসের হার অনেকটাই ভালো।
জগন্নাথপুর :
জগন্নাথপুরে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে হতাশ হয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জানাগেছে, এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় জগন্নাথপুর উপজেলার ৮টি কলেজ থেকে মোট ১১৮০ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে ৮৮০ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন। পাসের হার ৭৪.৫৮ ভাগ ও জিপিএ ৫ পেয়েছে মাত্র ২টি। এছাড়া উপজেলার ৭টি মাদ্রাসা থেকে আলিম পরীক্ষায় মোট ৩৩৪ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে ১৬৫ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন। পাসের হার ৪৯.৪০ ভাগ ও জিপিএ ৫ পেয়েছে মাত্র ২টি। এর মধ্যে জগন্নাথপুর ডিগ্রি কলেজ ২টি জিপিএ ৫ পেলেও পাসের হারে প্রথম স্থানে রয়েছে রাণীগঞ্জ কলেজ। রাণীগঞ্জ কলেজ থেকে ৯৬ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে ৮০ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন। পাসের হার ৯৬.৮০ ভাগ। তবে ইকড়ছই সিনিয়র মাদ্রাসা ১টিসহ ২ মাদ্রাসায় ২টি জিপিএ ৫ পেলেও পাসের হারে এবার কলেজ থেকে মাদ্রাসা পিছিয়ে রয়েছে।
এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম মখলেছুর রহমান এবারের পরীক্ষার ফলাফলে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, আমরা বুঝতে পারিনি ফলাফল এতো খারাপ হবে। তবে আগামীতে ভাল ফলাফল অর্জন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হবে।
ছাতক :
ছাতকে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে ঝিগলী স্কুল এন্ড কলেজ শীর্ষস্থান লাভ করেছে। তবে কোন শিক্ষার্থীই জিপিএ-৫ লাভ করতে পারেনি। উপজেলার ৭টি কলেজ থেকে ২হাজার ২৬১জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয়েছে ১হাজার ৭০৭ জন শিক্ষার্থী। পাসের হার শতকরা ৭৫.৪৯ ভাগ। এদিকে ৬ মাদ্রাসা থেকে ৩৬৮ জন শিক্ষার্থী আলিম পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয়েছে ১৬২ জন। পাসের হার শতকরা ৪৪.৫৩ ভাগ। উপজেলার একমাত্র সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ৭৪ জনের মধ্যে কৃতকার্য হয়েছে ২৮ জন শিক্ষার্থী। পাসের হার ৩৭.৮৩ ভাগ। ছাতক ডিগ্রী কলেজ মোট পরীক্ষার্থী ৬১২ জনের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৩৬৫ জন । গোবিন্দগঞ্জ কলেজে ৬২০ জনের মধ্যে পাস করেছে ৫১৪ জন। জাউয়া বাজার ডিগ্রি কলেজে ৬৪০ জনের মধ্যে পাস করেছে ৫১৫ জন । জনতা মহাবিদ্যালয়ে ২৭৩ জনের মধ্যে পাস করেছে ২২৩ জন। বুরাইয়া স্কুল এন্ড কলেজের ৪৬ জনের মধ্যে পাস করেছে ৩৩ জন। উত্তর সুরমা আজমত আলী স্কুল এন্ড কলেজের ১২ জনের মধ্যে পাস করেছে ৪ জন। ঝিগলী স্কুল এন্ড কলেজের ৫৮ জনের মধ্যে ৫৩ জন পাস করে উপজেলা পর্যায়ে শীর্ষে রয়েছে।