বিশেষ প্রতিনিধি ::
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ট্যাকেরঘাট খনি প্রকল্প এলাকায় নির্মিতব্য ‘নিলাদ্রী ডিসি পার্ক’ নামকরণের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রতিবাদের ঝড় ওঠেছে। প্রতিবাদকারীরা পুরো প্রকল্প এলাকাকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত নামে নাকরণের দাবি জানিয়েছেন।
জানা গেছে, এই জেলার বাইরের কিছু পর্যটক কিছুদিন আগে এখানে বেড়াতে এসে পাহাড়ের পাদদেশে ঘননীল এই লেকটিকে প্রথমে নিলাদ্রী নামে আখ্যায়িত করে। এরপর থেকেই স্থানীয় কিছু অসচেতন ও ইতিহাসবিমুখ মানুষ সেই চাপিয়ে দেওয়া নামটি প্রচার করতে থাকে। তবে এর বাইরে সচেতন মানুষজন মুক্তিযুদ্ধের অনন্য স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শহীদ সিরাজের নামে নামকরণের দাবি জানান। অনেকে পুরো প্রকল্প এলাকাটিকেই মুক্তিযুদ্ধের ভাবাবেগের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। বছর দুয়েক আগে স্থানীয় তরুণেরা সিরাজের নামে একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছিলেন।
জানা গেছে, সুনামগঞ্জের সাবেক জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলামের আগ্রহে সেই নামটিই গ্রহণ করে এর সঙ্গে ডিসি যুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল। বর্তমান জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম এসে প্রকল্প প্রস্তুত করে রাখা ছিল বলেই পার্কের উদ্বোধন করেন। এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোড়ন শুরু হয়। দেশ-বিদেশে অবস্থানরত সচেতন মানুষজন প্রতিবাদ জানিয়ে করপোরেট পার্কের বদলে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবাহী স্থাপনার আওতায় নিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছেন। এদিকে এই নামকরণের বদলে পুরো প্রকল্প এলাকাকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবাহী কোন নামে নামকরণ করে ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও রক্ষার দাবি জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিপরিষদ। আজ এই সংগঠনটি এই দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখক-গবেষক হাসান মোরশেদ বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে দায়িত্বজ্ঞানহীন, ইতিহাস অসচেতন তথাকথির পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয় এদিকে। তাদের কেউ ফেসবুকে এই লেকের নাম লিখে ‘নিলাদ্রী লেক’। স্থানীয় তরুণেরা এর প্রতিবাদে ‘শহীদ সিরাজ লেক’ নামে একটি সাইনবোর্ড স্থাপন করে পর্যটকদের অনুরোধ জানান শহীদ যোদ্ধাদের কবরস্থানের পবিত্রতা রক্ষার জন্য। কিন্তু আজ কফিনের শেষ পেরেক হিসেবে এই আয়োজন আজকে চোখে পড়লো। দ্রুত নাম পরিবর্তনের দাবি জানাই। পুরো এলাকাকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত নামে নামকরণের উদ্যোগ নেওয়া হোক।’
জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও সংস্কৃতিকর্মী মুক্তাদীর আহমদ বলেন, ডিসি পার্ক শব্দটাই আপত্তিকর। নিলাদ্রী শব্দটিও করপোরেট আবিষ্কার। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এই অনন্য স্থানটি সংরক্ষিত করার উদ্যোগ নেওয়া হোক। হোক ছোট ছোট নানা স্থাপনা। নতুন প্রজন্ম এখানে এসে মুক্তিযুদ্ধকে জানুক-সেই চেষ্টাই করা উচিত।
সুনামগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি পরিষদের আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান বলেন, ঐতিহাসিক এমন স্থানে এমন নামের স্থাপনা আমরা চাইনা। আমাদের দাবি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই নামকরণের। সুন্দর করে এই পুরো সাব সেক্টরের কার্যালয়টি সংরক্ষিত করা গেলে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার প্রতি আগ্রহী হবে। এই দাবিতে আমরা আজ স্মারকলিপি প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের আগের জেলা প্রশাসক এই প্রকল্পটি প্রস্তুত করে গেছেন। আমি শুধু উদ্বোধন করেছি। উদ্বোধনের আগে যদি আমাকে কেউ বলতো তাহলে আমরা এটা এই নামে করতাম না। তাছাড়া উদ্বোধনের পরেও যদি কেউ বলতো আমি তাৎক্ষণিক একটি ঘোষণা দিয়ে আসতাম। মুক্তিযোদ্ধা শহীদ সিরাজের নামেই নামকরণ হবে বলে জানান তিনি।