বিশেষ প্রতিনিধি ::
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। এটাই তাদের পরিচয়। এরকম প্রায় অর্ধশত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সুনামগঞ্জে পদবি বিহীন অবস্থায় আছেন। জেলা আ.লীগের পূণাঙ্গ কমিটি না থাকায় ও সহযোগী সংগঠনে স্থান না পাওয়ায় নিজেদের পরিচয় বিহীন থাকতে হচ্ছে তাদের। অনেকেই রাজনীতি থেকে নিজেদের গুটিয়েও নিয়েছেন।
নেতাকর্মীরা জানান, জেলা আ.লীগের সর্বশেষ কমিটি হয়েছে বছর দেড়েক আগে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি কবে হবে তা জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজেই জানেন না। এর আগে প্রায় দেড় যুগ এক কমিটি পার করে দিয়েছে। ফলে সম্ভাবনাময় অনেক সাবেক ছাত্রনেতাই আ.লীগে ঢুকতে পারেন নি। কৃষক লীগের কমিটি হলেও জেলা পর্যায়ের অনেক ছাত্রনেতার ঠাঁই হয়নি কমিটিতে। এসব কমিটিতে উপজেলা পর্যায়ের নেতারা জেলা কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। যুবলীগের অবস্থা আরো করুণ। আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়কদের একজন আগে রাজনীতির সঙ্গে তেমন জড়িতই ছিলেন না। হঠাৎ করেই তারা কমিটি নিয়ে আসেন ঢাকা থেকে। যুব লীগের সদস্যদের অনেকেই আছেন, যারা ছাত্রলীগের রাজনীতির মিছিলেও কোন দিন দেখা যায়নি। ওলামা লীগ ও তাঁতীলীগের নেতাদের অনেকেই রাজপথে কোন দিনে দেখা যায়নি বলে শোনা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জিতেন্দ্র তালুকদার পিন্টু, আক্তারুজ্জামান সেলিম, তনুজ কান্তি দে, সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম ছিদ্দিকী উজ্জ্বল, ছাত্রলীগের সাবেক তুখোড় নেতা মণীষ কান্তি দে মিন্টু, আতিকুল ইসলাম আতিক, চঞ্চল কুমার লোহ, অমল কান্তি চৌধুরী হাবুল, আবুল আজাদ রুমান, পীর তারেক হাসান দাউদ, হাসান মাহমুদ সাদী, শামীম আহমদ চৌধুরী, গোলাম সাবেরীন সাবু, শাহরিয়ার কবির সায়েম, ছিদ্দীক আহমদ, হোসেন আহমদ রাসেল, মতিউর রহমান মতিসহ অর্ধশতাধিক নেতার পরিচয় এখন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। সভা-সমাবেশে তাদের পরিচয় সাবেক ছাত্র হিসেবে। সদ্য সাবেক জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ফজলে রাব্বী স্মরণ ও সাধারণ সম্পাদক রফিক আহমেদ চৌধুরীও পদ বিহীন অবস্থায় আছেন।
নব্বই দশকের এক ছাত্রলীগ নেতা অনেক কষ্টের সুরে বলেন, দল ক্ষমতায় কিন্তু আমাদের কি, সব তো সুবিধাবাদীদের দখলে। আ.লীগের নাম ভাঙিয়ে, কামিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। যাদের কোনদিন রাজপথে দেখা যায়নি।
টাকার জোরে ঢাকা থেকে কমিটি নিয়ে আসছে। সভা, সমাবেশে মানুষ আনছে ভাড়াটে করে। সামনে নির্বাচন আসছে, তখন তাদের পাবেন না। আর দল যদি ক্ষমতায় না থাকে তাহলে তাদের হারিকেন জ্বালিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এমরানুল হক চৌধুরী বলেন, পুরো জেলায় শতাধিকের উপরে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আছেন যাদের পদ-পদবি নেই। যাদের পরিচয় সাবেক ছাত্র নেতা। বর্তমান যে অবস্থা, ঢাকায় দৌড়াদৌড়ি, তেলবাজি আর টাকা না থাকলে আ.লীগে ও সহযোগী সংগঠনে ঢুকা অনেক কষ্টকর। হাইব্রিড নেতারা সুখে থাকলেও যারা দলের দুর্দিনে রাজপথে ছিলেন, তাদের দিন কাটছে কষ্টে। অনেকে অভিমানে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও পৌর কাউন্সিল হোসেন আহমদ রাসেল বলেন, এখন সময় এসেছে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মূল্যায়ন করার, কারণ সামনে নির্বাচন, নির্বাচনে সাবেক ছাত্রনেতারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন।
জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নূরে আলম ছিদ্দিকী উজ্জ্বল বলেন, আ.লীগ ক্ষমতায় কিন্তু আমার খুব হতাশ, দল যে ক্ষমতায় আছে আমার বুঝতেছি না। আ.লীগ কমিটি হয়েছে কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি, আগে বলা হয়েছিল সাবেক ছাত্রনেতারা পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান পাবে, নেত্রীরও এরকম নির্দেশ ছিল, এখন আমি বুঝতে পারছি, তারও সম্ভাবনা অনেক কম। জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে কিছু সুবিধাবাদীরা ঘুরঘুর করছে, পদ-পদবি নেয়ার জন্য। তারা পদবি পেলে আবার ঘরে চলে যাবে, এরা নির্বাচনেও কোন কাজে আসবে না, রাজপথেও কোন কাজে লাগবে না, সংগঠনের কাজেও না। তাদের কারণে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের পদ বঞ্চিত সম্ভাবনা দেয়া দিয়েছে। সামনে নির্বাচন আসছে, আ.লীগের ও সহযোগী সংগঠনগুলোর অবস্থা খুব খারাপ, জেলা যুবলীগের কার্যক্রম নেই, পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতিতে জড়িয়ে অনেকেই এলাকা ছাড়া। যুবলীগের নতুন কমিটি জরুরি। ছাত্রলীগের অবস্থা আরো করুণ। যে সহযোগী কমিটিগুলো আসছে তা সাবেক ছাত্রনেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কমিটি আসে নি। আ.লীগ নেতাদের নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য কমিটি আসছে, আ.লীগ, নৌকার স্বার্থে আসে নি, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, ছাত্রদলের সাবেক ছাত্র নেতারা এখন বিএনপি’র নেতৃত্ব দিচ্ছে, আর আমাদের ছাত্রলীগ নেতাদের কোন মূল্যায়নই নেই।
এদিকে জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আগে জানিয়েছিলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মূল্যায়ন করা হবে। তবে তিনি দেশের বাইরে অবস্থান করার তার বক্তব্য নেয়া যায়নি।