1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৭:৩৯ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

হাওরে ফসলহানির প্রভাব : কৃষক পরিবারে বিকল্পকাজে অভাব ঠেকানোর চেষ্টা

  • আপডেট সময় রবিবার, ৯ জুলাই, ২০১৭

আকরাম উদ্দিন ::
হাওরের ফসলহারা কৃষক পরিবারে যখন হাহাকার চলছে, দেখা দিয়েছে অভাব তখন পাঁচটি গ্রামের মানুষ বিকল্প কাজ করে অভাবের থাবা থেকে রক্ষা পেয়েছেন। বর্ষায় হাওরে মাছ ধরার এক প্রকার সরঞ্জাম তৈরি ও বিক্রি করে অভাব মোকাবিলার চেষ্টা চালাচ্ছে সহ¯্রাধিক পরিবার। স্থানীয়ভাবে এসব সরঞ্জামকে ‘চাঁই’, ‘গুই’ বলে।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওর ও আঙ্গারুলি হাওরপাড়ের এই গ্রামগুলো হলো ব্রজনাথপুর, গোপালপুর, চান্দারগাঁও, লক্ষ্মীপুর ও রাজনগর। গ্রামের মানুষ কৃষি নির্ভর। তবে বর্ষায় হাওরে মাছ ধরার পাশাপাশি জ্যৈষ্ঠ থেকে আশ্বিন-এই পাঁচ মাসে মাছর ধরার এসব সরঞ্জাম তৈরির কাজ করেন। এ সময় গ্রামের বয়স্ক নারী-পুরুষ, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, শিশু-সবাই এই সময় এসব তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন।
বিশ্বম্ভরপুর সদর বাজার থেকে আঙ্গারুলি হাওর হয়ে ব্রজনাথপুর গ্রামে যেতে হয়। গ্রামের কাছাকাছি যেতেই মনে হল হাওরের জলের ওপর ভাসছে গ্রামটি। গ্রামের যে ঘাটে নৌকা ভিড়ে সেখানে একটি ছোট্ট দোকানঘর। বারান্দায় বসে হাওরের বাতাস গায়ে মেখে বাঁশ, প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে কী যেন তৈরি করছেন এক নারী। কাছে গিয়ে জানা গেল, এটা হাওরের মাছ ধরার ‘গুই’। টেংরা, চিংড়িসহ ছোট মাছ ধরা হয় এসব দিয়ে। ফুলমতি বিশ্বাস নামের মধ্যবয়সী এই নারী বললেন, ‘আমি একলা না পুরা গ্রামের মানুষ অখন এইটা বানায়। এইটা না অইলে ইবার আমরা না খাইয়া মরলাম অনে।’
গ্রামের ভিতরে যেতেই ফুলমতির কথার প্রমাণ মিলল। বীরেন্দ্র বিশ্বাসের (৭০) ঘরের বারান্দায় সাত-আটজন নারী-পুরুষ চাঁই ও গুই তৈরি করছেন। তাঁর স্ত্রী, ছেলে, ছেলের বউ, স্কুল পড়–য়া নাতনিও আছে কাজে। বারান্দার এক পাশে ঘরভর্তি বানানো চাঁই রাখা। বীরেন্দ্র জানালেন, হাওরে তার পাঁচ একর জমি ছিল। সব পানিতে তলিয়ে গেছে। এই জমির ধান পেলে কোনো চিন্তাই ছিল না তার। বর্ষায়, চাঁই ও গুই বানানোর বাড়তি আয়ে পুরো বছর আরাম-আয়েশে কাটাতে পারতেন।
ব্রজনাথপুরে দুই’শর মতো পরিবার আছে। গ্রাম ঘুরে এমন কোনো ঘর পাওয়া যায়নি যে ঘরে এসব সরঞ্জাম নেই বা তৈরির কাজ হয়না। প্রতিটি ঘরের বারান্দায় এসব তৈরির কাজ চলছে। শিশুরাও কাঠি তৈরি, সুতা কাটায় বড়দের সহায়তা করছিল। চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে গুই ও চাঁই।
বিশ্বম্ভরপুর সদর বাজার থেকে ব্রজনাথপুরে যাওয়ার পথে নৌকায় কথা হয় লক্ষ্মীপুরের গৌরাঙ্গ বিশ্বাস (৪২), গোপালপুরের মায়ারানী বিশ্বাস (৪০), ব্রজনাথপুরের চিত্তরঞ্জন বিশ্বাসের (৩৯) সঙ্গে। তারা বাজার থেকে এসব সরঞ্জাম তৈরির জন্য বাঁশ কিনে গ্রামে যাচ্ছিলেন। গুই ও চাঁই তৈরিতে যে বাঁশ লাগে সেটিকে স্থানীয়ভাবে ‘চিকন-বেতুয়া’ বাঁশ বলে। এটি দাম বেশি। একটি বাঁশে ছয়-সাতটি গুই বা চাঁই তৈরি করা যায়। তারা জানালেন, একটি চাঁই বা গুই তৈরিতে করতে ২০থেকে ২৫টাকা খরচ হয়। বিক্রি হয় ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা। এটি তৈরিতে বাঁশের কাঠি, প্লাস্টিকের সুতা ও শক্ত পলিথিন লাগে। একজনের পক্ষে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২টি করে গুই বানানো সম্ভব। গ্রাম থেকেই এসে পাইকারেরা নিয়ে যায়। বিক্রি হয় কুড়ি হিসেবে। বর্তমানে ২০টির দাম ১২ থেকে ১৩শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গৌরাঙ্গ বিশ্বাস বলছিলেন, জমির ধান পেলে সেই ধানেই তিনি চলতেন। আর গুই তৈরি করে বছরে বাড়তি আয় হত ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। এবার ফসল না পাওয়া এই চাঁই বিক্রি করেই সাত জনের খাওয়া এবং তিন ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া চালাতে হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন ব্রজনাথপুরের সজল বিশ্বাস। তিনিও এই কাজ পারেন। বললেন, ‘এই কাজই তো এবার আমাদের রক্ষা করেছে। আসলে হাওর এলাকার মানুষদের এখন আরও শুধু কৃষির ওপর নির্ভর করলে চলবে না। কৃষির সঙ্গে বিকল্প কাজের খোঁজ করতে হবে।’
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ বলেন, হাওরে প্রতি বছরই কম বেশি ফসলহানি ঘটে। এবার সব গেছে। অতীতে কখনো এমনটা হয়নি। বারবার ফসলহানিতে মানুষ কৃষির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। হারুনুর রশিদ আরো বলেন, ‘এই পাঁচ গ্রামের মানুষেরও অভাব আছে, পাঁঁচ মাস পর কীভাবে তারা চলবে সেটি চিন্তার বিষয়। তবে তাদের হাতে একটি কাজ থাকায় অন্যদের চেয়ে ভালো আছে, আপাতত তারা চলতে পারছে।’
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, সুনামগঞ্জে এবার ১৫৪টি হাওরে দুই লাখ ২৩হাজার ৮২ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল। গত এপ্রিল মাসের অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে এক লাখ ৬৬হাজার ৬১২ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জেলার তিন লাখ ২৫ হাজার ৯৯০ কৃষক পরিবার।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com