স্টাফ রিপোর্টার ::
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জয়নগর বাজার মঈনুল হক কলেজ ক্যাম্পাসে কয়েকজন ছাত্র ও বহিরাগতদের কটূক্তিমূলক স্লোগানের পরও দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। এ ঘটনায় একাধিক মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্লোগানের ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ ক্ষোভে ফুঁসছে।
উল্লেখ্য, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি জয়নগর বাজার মঈনুল হক কলেজের অধ্যক্ষ ও প্রতিষ্ঠাতার মধ্যে দ্বন্দ্বের জের ধরে শিক্ষার্থীদের দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার ঘটনায় আওয়ামী লীগবিরোধী একটি চক্র প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করছেন। তারা কলেজের সমস্যাকে জিইয়ে রেখে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তুলতে চায়।
জানা গেছে, গত শনিবার কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রদের দুই পক্ষের সংঘর্ষে ৬-৭ জন ছাত্র আহত হয়। এই সংঘর্ষে কিছু বহিরাগতও যোগ দেয়। প্রতিষ্ঠাতার সঙ্গে কলেজ অধ্যক্ষের দ্বন্দ্বের জের ধরে অধ্যক্ষ মো. মতিউর রহমান কোমলমতি কয়েকজন শিক্ষার্থীদের উস্কে দিয়ে পরিস্থিতি জটিল করছেন বলে কলেজ ব্যবস্থাপনা কমিটির একাধিক সদস্য অভিযোগ করেছেন।
শিক্ষার্থীদের দ্বন্দ্বের জের ধরে গত শনিবার সংঘর্ষের পর রোববার ৮-১০ জন ছাত্র ও জামায়াত-বিএনপির কয়েকজন বহিরাগত প্রতিষ্ঠাতা মঈনুল হকের বিরুদ্ধে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে একটি মিছিল বের করে। মিছিলে প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে গিয়ে এক পর্যায়ের প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কটূক্তিমূলক স্লোগান দেয়। একজন প্রত্যক্ষদর্শী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়ার মুহূর্তটি পেছন থেকে ভিডিও করেন। ২১ সেকেন্ডের এই ভিডিও ক্লিপে দেখা যায় খয়েরি শার্ট ও কালো প্যান্ট পরিহিত এক যুবক হাত উঁচিয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সমানে স্লোগান দিচ্ছে আর তাঁর সঙ্গে কণ্ঠ মিলাচ্ছে ৮-১০ জন যুবক। এই যুবকরাই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে একজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার সঙ্গেও দেখা করে।
এদিকে এর প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক ক্ষোভ প্রকাশ করেন মোহনপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি নিজাম উদ্দিন, সহ সভাপতি তানভির আহমদ জনিক, সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান, জেলা ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। পরদিন তারা এ ঘটনার প্রতিবাদে জয়নগর বাজারে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করে এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দোষীদের গ্রেফতারের দাবি জানান। যুবলীগের প্রতিবাদ সমাবেশের পর স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি প্রতিবাদ মিছিল করায় যুবলীগ নেতৃবৃন্দের কটূক্তি করেন ও হুমকি ধমকি দেন।
জানা গেছে, এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সাংসদ, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নানকে অবগত করেন।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কলেজের প্রাক্তন ব্যবস্থা কমিটির সদস্য আতাউর রহমান বলেন, তুচ্ছ বিষয় নিয়ে অধ্যক্ষ স্থানীয় কয়েকজন দুষ্কৃতিকারীদের পরামর্শে কয়েকজন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দিয়ে আমাদের নেত্রীর বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছে। এরা আমার নেত্রীর বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে পরবর্তীতে অবমাননা ও অসম্মানজনকভাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নাম নিয়েও উপহাস করেছে। এদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
কলেজ প্রতিষ্ঠাতা ও জেলা কৃষকলীগের সিনিয়র সদস্য মঈনুল হক বলেন, অধ্যক্ষের ইন্ধনে দুইদল শিক্ষার্থীর সংঘর্ষের ঘটনায় আমরা মর্মাহত। কলেজ ক্যাম্পাসে রক্তারক্তি হোক এটা আমাদের কারো কাম্য নয়। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে গিয়ে আমার নেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়াটা আমরা কেউ মেনে নিতে পারছিনা। এ ঘটনায় স্থানীয় নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। আমরা তাদের শান্ত করে রেখেছি।
এ বিষয়ে অধ্যক্ষ মতিউর রহমান সুনামকণ্ঠকে বলেছেন, তিনি এসব ঘটনায় জড়িত নন। ছাত্রদের উপর আঘাত করায় তারা এই বিক্ষোভ করেছে বলে তিনি জানান।
সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মো. শহিদুল্লাহ বলেন, জয়নগর বাজারে মঈনুল হক কলেজের দ্বন্দ্ব নিয়ে উত্তেজনা ছিল। পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেছি। প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করা হয়েছে শুনেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কটূক্তি করা হয়েছে কি না আমাদের কেউ জানায়নি। তবে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।