1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১২:৩৬ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

হাওরে হাহাকার : ‘ঘরে ধান নেই, ঈদের আনন্দও নেই’

  • আপডেট সময় শনিবার, ২৪ জুন, ২০১৭

জাকির হোসেন ::
ঈদের আনন্দ সবার হৃদয়ে কড়া নাড়লেও সুনামগঞ্জের হাওরপাড়ের মানুষের অনুভূতি ভিন্ন। ভাটির জনপদে এখন শুধুই হাহাকার। চলতি বছর অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে হাওরের একমাত্র বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় ঈদের আনন্দ নেই কৃষকের ঘরে।
সারাদেশে ঈদের বাজারে ক্রেতাদের উপচেপরা ভিড় থাকলেও সুনামগঞ্জের দৃশ্যপট অন্যরকম। ঈদ মানেই নতুন জামা-জুতা। কিন্তু সুনামগঞ্জের হাওর এলাকার বেশির ভাগ কৃষকই সন্তানদের নতুন জামা কাপড় দিতে পারছেন না। যেখানে রমজানে সেহরি ও ইফতারের আয়োজনই নিশ্চিত নয়; সেখানে উৎসব তো বিলাসিতারই নামান্তর। এবার তাই ঈদের আনন্দটা ফিকে সুনামগঞ্জের কৃষক পরিবারগুলোতে। আবার অনেককেই পরিবারের ছোট ছোট শিশুদের আব্দার মেটাতে ঋণ করে ঈদের জামা-কাপড় কিনতে হচ্ছে।
হাওরের জেলা সুনামগঞ্জ। এখানের কৃষকরা একমাত্র বোরো ফসলের ওপর নির্ভরশীল। বোরো ধানের ফলন ভালো হলে সচ্ছলতা থাকে কৃষক পরিবারে। আর বোরো ফসলহানি ঘটলে বিপাকে পড়েন তারা। ধান না পেলে পরিবারের লোকজনকে নিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। এ বছর হাওরপাড়ে যে বিপর্যয় নেমে এসেছে, তেমনটি আগে কখনো ঘটেনি। বাঁধ ভেঙে ফসলহানির প্রভাব পড়েছে প্রতিটি পরিবারে, যা শিগগিরই কাটিয়ে উঠা সম্ভব নয়। এই দুর্যোগে হাওরপাড়ের প্রতিটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত।
কৃষকদের মতো জেলেরাও পড়েছে বিপাকে। তাদের দিন কাটছে অর্ধাহারে-অনাহারে। হাওরে বা নদীতে মাছ না পেয়ে জেলেদের এখন ঘরে বসেই দিন কাটাতে হচ্ছে।
মৎস্যজীবীরা কেউ কেউ পেটের তাগিদে হয়েছেন দিনমজুর বা রিকশাচালক। তারা সরকারি কোনো প্রকারের সাহায্য পাচ্ছেন না। মাছ ধরার আশায় নৌকা নিয়ে জেলেরা নদীতে বা হাওরে গেলেও দিন রাত কষ্ট করে লাভ হচ্ছে না; বাড়ি ফিরতে হচ্ছে শূন্য হাতে। অনেকে মাছ ধরায় ব্যবহৃত নৌকা নদী থেকে ডাঙায় তুলে রেখেছেন।
প্রান্তিক জেলেরা জানান, নদীতে গেলে মাছ পান না তারা। ঘরে ছেলেমেয়ের খাবার ও সংসারের খরচপাতি নিয়ে মহাবিপদে আছেন। একটি বছর কিভাবে সংসারের খরচ জোগান দেবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না। তাদের জেলে কার্ড থাকলেও এ পর্যন্ত কোনো সরকারি সাহায্য পাননি। ৪৮ হাজার জেলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৮ হাজার জেলে পেয়েছেন ডিজিএফ কার্ড। আর বাকি জেলেরা কোনো সহায়তা পাবেন কি না তা তারা নিজেরাও জানেন না।
গাজিনগর গ্রামের কৃষক বদরুল ইসলাম বলেন, কর্জ (ঋণ) করে টাকা এনে ছেলেমেয়েদের জন্য নতুন কাপড় কিনেছি। হাওরপাড়ের মানুষজন জানান, যে বছর বোরো মৌসুমে ভালো ধান হয় সে বছর কৃষকের ঈদ আনন্দ বেশি হয়। গ্রামের হাটবাজার থেকে পরিবারের সদস্যদের জন্য কেনা হয় নতুন জামা-কাপড়। এ বছর হয়েছে ব্যতিক্রম। ঘরে ধান নেই, তাই আনন্দও নেই। রাজপুর গ্রামের আছিয়া বেগম বলেন, ছোট ছোট বাচ্চাদের মুখের দিকে তাকানো যায় না। আমরা বড়রা বুঝি, কিন্তু বাচ্চারা তো বোঝে না। বার বার ঈদের কাপড়ের জন্য বায়না ধরে।
জেলার সিংহভাগ লোক কৃষিজীবী। তাই ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত জেলার অধিকাংশ মানুষ। তাদের পাশে বলতে গেলে কেউ নেই। জনপ্রতিনিধি, বিত্তশালীরা এগিয়ে এলে কিছুটা হলেও উপকৃত হতো দরিদ্র মানুষগুলো। ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে গ্রামে গ্রামে ত্রাণ বিতরণ করতে দেখা গেছে। তবে তা খুবই অপ্রতুল।
ফসলহানির শিকার মানুষের কান্না বাতাসে শুধুই হাহাকার ছড়ায়। সীমাহীন দুর্দশার মধ্যে, অনিশ্চয়তার অন্ধকারে তাদের দিনরাত একাকার। দক্ষিণ সুনামগঞ্জের ধামপাড়া গ্রামের কৃষাণি আমেনা বেগম বলেন, খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকাই আমাদের একমাত্র স্বপ্ন। ঈদের কোনো প্রস্তুতি নেই। এ বছর অতিরিক্ত কোনো চাহিদা নেই। আমাদের একটাই চাহিদা, আমরা যেনো খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকতে পারি।
এ শুধু একজন আমেনা বেগমের গল্প নয়। এমন শত শত আমেনা বেগমের ঘরে এবার ঈদের প্রস্তুতি নেই। সবারই একই কথা। কোনো রকমে খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকতে চান তারা। প্রত্যাশা, অন্তত এ বছর যেনো তারা পরিবার নিয়ে একটু স্বস্তিতে জীবন কাটাতে পারেন- সরকার সেই ব্যবস্থা করে দিক। ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার কথাও তারা ভুলেননি।
জয়গুণ বিবি নামের এক কৃষাণি বলেন, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করানোও কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন পাঠাচ্ছি, কয়েকদিন পর হয়ত মাসিক বেতন দিয়ে তাদের স্কুলেও পাঠাতে পারব না। যদি তাদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায় তাহলে আমাদের বেঁচে থাকার স্বপ্নটাও মরে যাবে। এখন আমরা অসহায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমাদের আবেদন, তিনি যেনো হাওরপাড়ের মানুষগুলোর স্বপ্ন বাঁচাতে চেষ্টা করেন।
সংসারে যখন অভাব আর অভাব, তখন কিসের ঈদ- এমন মন্তব্য করেন বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খিরদরপুর গ্রামের বর্গাচাষি সিরাজ মিয়া। তিনি বলেন, ‘অন্য বছর কমবেশি অইলেও কিছু ধান পাইতাম, ইবার কাঁচাধান পানির তলে গেছে। একটা ধানও পাইছি না। মানুষের কাছ তাকি যে টেকা
হাওলাত আইনছিলাম ওগুনও দিতে পাররাম না। ঈদের কথা তো স্বপ্নেও ভাবরাম না। ৫ ফুরুত্তা নিয়া যে ইবছর কিলা কাটাইমু আল্লায়ও জানৈন।
জেলার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলা তাহিরপুর। এ উপজেলার প্রায় ২ লাখ মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন বর্তমানে। তাদের ঈদ নিয়ে বলছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল, ‘অন্যন্য সময় তো ফসল তোলার পরে আমাদের হাওর এলাকার কৃষক তার সন্তানের লেখাপড়া, বিয়ে- এসবের ব্যবস্থা করে থাকেন। কিন্তু এ বছর হাওরের ফসল নেই, মাছও নেই। তাই ঈদের আনন্দ নেই বললেই চলে।’ ঈদ উপলক্ষে সরকারি কোনো সহযোগিতা না থাকলেও তিনি বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন বার বার, যেনো অন্তত তাহিরপুর উপজেলার হতদরিদ্র পরিবারগুলোতে এক প্যাকেট লাচ্ছি-সেমাই দেয়া যায়।
ক্ষতিগ্রস্ত হাওরবাসীর জন্য একটু ব্যতিক্রমী চিন্তা করেছেন বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানিয়া সুলতানা। তার উপজেলা পরিষদে কর্মরত সকল কর্মকর্তা কর্মচারী একত্রিত হয়ে যার যা সাধ্য আছে তা দিয়ে ত্রাণ দিবেন হাওর এলাকায়।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com