মোসাইদ রাহাত ::
সিলেট বিভাগকে বাল্যবিবাহ মুক্ত রাখার শপথগ্রহণ করা হয়েছে। বুধবার সকালে সিলেটস্থ কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে সিলেট বিভাগকে বাল্যবিবাহ মুক্ত রাখার ঘোষণা দেয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে সুনামগঞ্জে র্যালি, আলোচনা সভা ও শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সিলেট বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের আয়োজনে এবং সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় বুধবার সকালে জেলা শিল্পকলা একাডেমি থেকে র্যালি বের হয়। র্যালি শেষে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও শপথ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম।
সভায় বক্তারা সুনামগঞ্জ জেলাকে বাল্যবিবাহমুক্ত হিসেবে অব্যাহত রাখার পাশাপাশি যৌতুক প্রতিরোধেও কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। এছাড়া বাল্যবিবাহ ও যৌতুককে সামাজিকভাবে প্রতিরোধের অঙ্গীকার করেন।
অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম সিলেট বিভাগকে বাল্যবিবাহমুক্ত রাখার শপথনামা পাঠ করান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম বলেন, সরকার আইন করেছে আইন বাস্তবায়নের জন্য। আজকে বাল্যবিবাহ মুক্ত রাখাটা কিন্তু আইনের একটা অংশ, একটা বিষয়। আজকে বাল্যবিবাহ মানুষ কেন দিচ্ছে, কেন হচ্ছে, বাংলাদেশে কেন আমরা এই বিষয়টা নিয়ে এতো জাগ্রত হচ্ছি। এই বিষয়গুলো শুনতে হবে।
জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম আরো বলেন, এখন রেজিস্ট্রেশন ছাড়া বিয়ে হয় না, এই রেজিস্ট্রেশনে যারা যুক্ত আছেন হিন্দু ও মুসলিম দুই ধর্মেরই যারা রেজিস্ট্রেশন করেন তাদেরকে একটা কথা মনে রাখতে হবে এটা হচ্ছে উনাদের চাকরির দায় ও তাদের দায়িত্ব। সরকার একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করেছে। যে এই বয়স না হলে বিবাহ হবে না বা বিবাহ রেজিস্ট্রি হবে না। সুতরাং এই ক্ষেত্রে কোনো ঘটনা আমাদের পরিলক্ষিত হয় এই বিষয়ে যিনি যুক্ত থাকবেন তার বিরুদ্ধে আমরা প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব। দ্বিতীয় বিষয় জন্ম নিবন্ধন। জন্মনিবন্ধনের জন্য আমি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে অনুরোধ করব তিনি যেন ডিডি এলজিকে এটা বলে দেন প্রয়োজনে একটা চিঠি পাঠান। ভুয়া জন্ম নিবন্ধন দেখিয়ে যদি কারো বিয়ে হয় আর এটি যদি প্রমাণিত হয় তাহলে আমরা আমাদের প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নিব। সে ইউনিয়ন পরিষদের সচিব হোক বা পৌরসভার সচিব। ভুল তথ্য দিয়ে একটা বাল্যবিয়েকে বৈধ করার জন্য একটা কাগজ অসত্য ডকুমেন্ট তৈরি করা সরকারের সুনির্দিষ্ট আইন আছে দ-বিধি আছে। তাছাড়া বাল্যবিবাহে যে যুক্ত থাকবেন তার বিরুদ্ধে আমরা প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব। বাল্যবিবাহের সাথে আরেকটা জিনিস যুক্ত আছে তা হলো যৌতুক। এটা নিয়ে আমরা কোনো কথা বলছি না, আমরা বাল্যবিবাহ মুক্ত করতে চাই। বাল্যবিবাহ ও যৌতুক একে অপরের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে যুক্ত। শুধু মাত্র বাল্যবিবাহ মুক্ত না সিলেট বিভাগের অংশ এই সুনামগঞ্জ জেলাকে যৌতুকের বিষয়ে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। যৌতুক বা বাল্যবিবাহ যেকোনো ক্ষেত্রে আপনারা জেলা প্রশাসকের ফোনে কল করবেন যতদূর সম্ভব হয় আমরা আপনাদের সেবা দেয়ার চেষ্টা করব।
সহকারি কমিশনার শাকিল আহমদের পরিচালনায় ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আইনুর আক্তার পান্নার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সঞ্জয় সরকার, সিভিল সার্জন ডা. আশুতোষ দাস, নারীনেত্রী শীলা রায়, প্রফেসর দিলীপ কুমার মজুমদার, সরকারী জুবলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মফিজুল হক মোল্লা, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নিগার সুলতানা কেয়া, নারীনেত্রী সঞ্চিতা চৌধুরী, হিন্দু বিবাহ নিবন্ধক সুবিমল চক্রবর্র্তী চন্দন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সরকারি এসসি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী তাছনিমা রহমান ও সুনামগঞ্জ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী ইমা আক্তার।