1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ১১:৪২ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

৯২ কোটি টাকার গোখাদ্য বিনষ্ট

  • আপডেট সময় বুধবার, ২৪ মে, ২০১৭

শামস শামীম ::
হাওরবাসীর দুঃসময়ে ফসলহারা কৃষককে সান্ত¦না ও সহায়তা দিয়ে গেছেন রাষ্ট্রপ্রধান মো. আবদুল হামিদ ও সরকার প্রধান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। ফসলহারা নিঃস্ব কৃষকের একটি অংশ তিন স্তরের খাদ্য নিরাপত্তার আওতায় এসেছে। মৎস্যজীবীরাও সহায়তার আওতায় এসেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের দু’বেলা ডাল-ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা হলেও জেলার কৃষি অর্থনীতির চাকা সচল রাখা ৪ লক্ষ ৭৯ হাজার গবাদিপশু এখন খাদ্য সহায়তার বাইরে রয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত গবাদিপশুর মালিকদের তালিকা সম্পন্ন করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট বিভাগ। তবে এ সংখ্যা প্রায় ৫৮ হাজার হবে বলে জানিয়েছেন প্রাণিসম্পদ বিভাগ। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারদের দিয়ে এই তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে।
জানা গেছে, গত ৩০ এপ্রিল সুনামগঞ্জের দুর্গত হাওর পরিদর্শনে এসে শাল্লা উপজেলায় সুধী সমাবেশে গবাদিপশুর খাদ্য সহায়তার ঘোষণা দিয়ে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার ২৩ দিন পরও এখনো গোখাদ্য সহায়তা মিলেনি, প্রস্তুত হয়নি তালিকা। গোখাদ্যের সংস্থান না করতে পেরে অনেক কৃষক অল্প দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন গবাদিপশু। ফলে আগামীতে হাওরের কৃষি অর্থনীতি আরো ক্ষতির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সরকারি হিসেবে পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণে ফসলের ক্ষতির পাশাপাশি সুনামগঞ্জের ৯২ কোটি ৯ লাখ টাকার গোখাদ্য নষ্ট হয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৯১টি ইউনিয়ন এবার পাহাড়ি ঢলে সম্পূর্ণ ফসল তলিয়েছে। এতে ধানের সঙ্গে নষ্ট হয়েছে ৪ লাখ ৭৯ হাজার গবাদিপশুর একমাত্র খাদ্য খড়। সূত্র মতে ১ লক্ষ ৪৯ হাজার ৯২৫ হেক্টর জমির গোখাদ্য সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষিভূমি প্লাবিত হওয়ায় ৫ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা মূল্যের ৫ হাজার ৬০০ টন গোখাদ্য (দানাদার) বিনষ্ট হয়েছে। ৭৭ কোটি ১৯ লক্ষ টাকার ৩ লক্ষ ৮ হাজার ৭৬০ টন খড় বিনষ্ট হয়েছে। এছাড়া অতিবর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে গবাদিপশুর খাদ্য (ঘাস) ৪৬ হাজার ৫০০ টন বিনষ্ট হয়েছে। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৯ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সম্প্রতি এই ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে প্রেরণ করলেও ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা এখনো প্রস্তুত করতে পারেনি। জানা গেছে, প্রায় ৫৮ হাজার চাষীকে ক্ষতিগ্রস্ত ধরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারদের মাধ্যমে এই তালিকা তৈরির কাজ চলছে। তবে এলাকাবাসী জানিয়েছেন, চেয়ারম্যান-মেম্বাররা হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের যে ভিজিএফ তালিকা হয়েছে তাতে দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির ঘটনা ঘটেছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগের তালিকা একই লোকদের দিয়ে করানোয় অনিয়মের আশঙ্কা করছেন চাষীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সুনামগঞ্জের ৯০ ভাগ ফসল নষ্ট হয়ে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সব হারিয়ে নিঃস্ব হাওরবাসী এখন বেঁচে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করছেন। ধান কাটার পর হাওরের খড়ই ছিল গবাদিপশুর একমাত্র খাদ্য। এখন গবাদিপশুর খাদ্য না থাকায় অল্পদামে কৃষকরা বাধ্য হয়ে গবাদিপশু বিক্রি করে দিচ্ছেন।
শাল্লা উপজেলার প্রতাপপুর গ্রামের কৃষক তরণী দাস বলেন, হাওরের সম্পূর্ণ ফসল তলিয়ে আমরা এখন নিঃস্ব। প্রতি বছর হাওরে গবাদিপশুর মাধ্যমে হালচাষ করে। ধান কাটার পর খড়কে আমরা গবাদি পশুর খাবার হিসেবে ব্যবহার করি। ধান তলিয়ে যাওয়ায় খড়ও বিনষ্ট হয়েছে। এখন কৃষক নিজের খাদ্যের পাশাপাশি গবাদি পশু বাঁচানোর চিন্তায় অস্থির। তিনি বলেন, নেত্রী আমাদের এখানে এসে গবাদি পশুকে বাঁচানোর ঘোষণা দিয়ে সহায়তার কথা জানালেও এখনো সেই সহায়তা পাইনি আমরা।
জামালগঞ্জের পাগনার হাওরের কৃষক সাধন দাশ বলেন, ‘ক্ষেত নিছে পাইন্যে, মাছ গ্যাছে মইরা, এখন গরু-বাছুরের খেড়ও নাই’। তিনি জানান, গোখাদ্যের অভাবে অনেক কৃষক অল্পদামে গরু-বাছুর বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
‘হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন’র যুগ্ম আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান বলেন, হাওরের কৃষি অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে গবাদিপশু। এখনো ৯০ ভাগ মানুষ সনাতনী এই সহজলভ্য পদ্ধতিতেই হালচাষ করেন। কিন্তু এবার ফসলের সঙ্গে গোখাদ্যও তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা সস্তায় গরু-বাছুর বিক্রি করে দিচ্ছেন। গত ৩০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর গবাদিপশুর সহায়তা ঘোষণায় আমরা খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত সহায়তা মিলেনি।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. বেলাল হোসেন বলেন, গত ১৭ মে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারদের দিয়ে প্রায় ৫৮ হাজার গবাদিপশুর ক্ষতিগ্রস্ত মালিকদের তালিকা প্রস্তুত করছি। শিঘ্রই পূর্ণাঙ্গ তালিকা করে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠাব। আশা করি শীঘ্রই সহায়তা পাওয়া যাবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com