স্টাফ রিপোর্টার ::
জেলা ছাত্র শিবিরের সাবেক প্রভাবশালী নেতা, জামায়াত-শিবির পরিচালিত শিশু সংগঠন ফুলকুঁড়ির সাবেক জেলা পরিচালক ও জামায়াতের বর্তমান রুকন রুহুল আমিন সোহেল সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে হেয় করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেওয়ায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। ‘আল হেরা জামেয়া’ নামের প্রতিষ্ঠানের বর্তমান শিক্ষক সোহেলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘সুধীজনের মতবিনিময়’ সভায় অভিযোগ করেছেন শহরের আরপিননগর এলাকার মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও সংস্কৃতিকর্মী জহির আহমদ সোহেল। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
জানা গেছে, কয়েকদিন আগে রুহুল আমিন সোহেল নামের ওই জামায়াত নেতা রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সুনামগঞ্জ সফরকে কটাক্ষ করে তার ফেইসবুক আইডি থেকে একটি স্ট্যাটাস দেন। তিনি লিখেন, ‘রাষ্ট্রপতির আগমণে/ মাছ গেল নির্গমনে/প্রধানমন্ত্রীর অবদান/৩০ এপ্রিলের তুফান/ আবুল মাল আসছেন…’। এছাড়াও তিনি তার ফেসবুক আইডি থেকে বরাবর রাষ্ট্র, সরকার ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে লিখছেন। ২০১৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর তিনি শেখ হাসিনাকে ‘পাগল’ আখ্যায়িত করে ‘সোনার বাংলা আজ শ্মশানে পরিণত হয়েছে’ বলেও এই মন্তব্য করে। তবে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে দেওয়া পোস্টটি ইতোমধ্যে সরিয়ে নিয়েছেন তিনি।
শহরের আরপিননগর এলাকার বাসিন্দা জসিম উদ্দিনের সন্তান ও শিল্পী জহির আহমদ সোহেল অভিযোগ করেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের দায় আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর উপর চাপিয়ে তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে জামায়াত নেতা রুহুল আমিন সোহেল। এই জামায়াত নেতা সুনামগঞ্জে যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হলে আন্দোলনকারীদের নানাভাবে ভয়-ভীতি দেখাতো। ওই সময় থেকেই সে উস্কানিমূলক লেখা লিখতো মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে। ওই সময় জামায়াত-শিবির সুনামগঞ্জে যেসব নাশকতা চালাতো তার ছবি জামায়াতি পেইজ ‘বাঁশের কেল্লা’তে পোস্ট করতো।
জানা গেছে, যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর রায়ের বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জ শহরে জামায়াত-শিবিরের যে তা-ব হয়েছিল তার অগ্রভাগে ছিল এই রুহুল আমিন সোহেল। সরকারের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী জামায়াত-শিবিরের নাশকতার বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জে যত অভিযান পরিচালনা করে সাংবাদিক পরিচয় ভাঙিয়ে অভিযানের খবর আগেই পুলিশের কাছে পৌঁছে দিতো সে। এভাবে তিনি দীর্ঘদিন ধরে এখন সাংবাদিকতার নাম ভাঙিয়ে জামায়াত শিবিরের প্রচারণার পাশাপাশি সোর্স হিসেবে কাজ করছেন।
জেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) শাহ আলম সেরুল বলেন, রুহুল আমিন সোহেল দীর্ঘদিন ধরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে ফেসবুকে লেখালেখি করছে। রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী উস্কানীমূলক নানা লেখা শেয়ার করছে। সে বর্তমানে জামায়াতি পত্রিকার নাম ভাঙিয়ে জামায়াত-শিবিরের সোর্স হিসেবে কাজ করছে। যারা এভাবে মুখোশ পরে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত দেশের বিপক্ষে কাজ করছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাপস রঞ্জন ঘোষ বলেন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আমাদের কাছে ওই জামায়াত নেতার ধৃষ্টতার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এর আগে তিনি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ বিষয়ে বক্তব্য রেখেছেন। আমরা ওই জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তদন্ত শুরু করেছি।
পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান বলেন, এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।