স্টাফ রিপোর্টার ::
নবাগত জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম সুধীজনের সাথে মতবিনিময় করেছেন। মঙ্গলবার বেলা ১২টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টার মতবিনিময় সভায় নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ জেলা প্রশাসকের কাছে তুলে ধরেন সুধীজন।
মতবিনিময় সভায় বক্তারা হাওরের বাঁধ নির্মাণে অনিয়মকারী দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দাবি, ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের দিয়ে ভিজিএফ ও অন্যান্য তালিকায় অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধ, ওএমএস’র চালের বরাদ্দ বৃদ্ধি ও ডিলার সংখ্যা বৃদ্ধি, ওয়ার্ডভিত্তিক কার্ডের মাধ্যমে সহায়তা বণ্টন, হাওরের পোনা নিধন বন্ধ ও প্রকৃত জেলেদের সুষ্ঠু তালিকা প্রণয়ন, হাওরপাড়ের শিক্ষার্থীসহ সকল স্থানের শিক্ষার্থীদের সহায়তা প্রদান, ক্যাপিট্যাল ড্রেজিংয়ের আওতায় এনে নদী খনন, ক্ষুদ্র ঋণ আদায় স্থগিত ও সুদমুক্ত ঋণ প্রদানসহ নানা বিষয়ে বক্তব্য রাখেন।
মতবিনিময় সভায় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের তৈরিকৃত তালিকায় তাদের পরিবার ও স্বজন এবং তাদের পক্ষের সচ্ছল ভোটারদের নাম তালিকাভুক্ত করার অভিযোগ তোলে ধরা হয়। এ ছাড়াও ভিজিএফ’র তালিকা করতে টাকা নেয়ার বিষয়েও অভিযোগ জানানো হয়। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও জেলেরা সঠিকভাবে কোনো সহায়তা পাচ্ছেন না বলে সাংবাদিকরা বক্তব্য তোলে ধরেন। হাওরের বাঁধ নির্মাণে ঠিকাদার ও পিআইসি’র দুর্নীতির বিষয়ে এবং দুর্নীতিবাজদের শাস্তির দাবিতে জোরালো বক্তব্য রাখেন উপস্থিত সুধীজন।
মতবিনিময় সভায় সুধীজনদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম বলেন, ‘পত্রিকায় ছাপানো সকল প্রকার অনিয়ম-দুর্নীতির রিপোর্ট আমার দপ্তরে জমা দেবেন সাংবাদিকরা। কেউ যদি লিখিত আকারে অভিযোগ করেন আমি এ বিষয়েও তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেব। বাইরে থেকে আসা রিলিফ স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো সহযোগিতা করবেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও জেলেদেরকে সঠিকভাবে সহায়তা পাওয়ার জন্য সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের সুনির্দিষ্ট তালিকা প্রণয়ন করা হবে। কৃষকদের বীজ ও সার এবং হাওরের পোনা মাছ অবমুক্ত করে তা সম্প্রসারণ করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘ফসলহানির ঘটনায় তদন্ত কমিটি আগামী ১৩ জুনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবেন। ভিজিএফ’র অনিয়মের ক্ষেত্রে আপোস করা হবে না। ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ে এনজিওদের চিঠি দেয়া হবে এবং একইভাবে ব্যাংক ঋণের বিষয়ে দেখা হবে। হাওরের শিক্ষা সহায়তা বিষয়ে এখনো কোনো কিছু আসেনি। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে হবে। যৌক্তিকমূল্যে যাতে ক্রেতারা পান সেদিকে লক্ষ রাখা হবে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি (১০ টাকা করে প্রতি মাসে ৩০ কেজি) ৩০ এপ্রিল বন্ধ হয়ে যাওয়া কর্মসূচির চাল প্রদান আবারও চালু করার ব্যবস্থা করা হবে। বজ্রপাত কমিয়ে আনতে গৃহনির্মাণ আইন যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে।’
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধা সন্তান জহির আহমদ সোহেল অভিযোগ করে বলেন, জামায়াতের রোকন রুহুল আমিন সোহেল তার ফেসবুক আইডিতে দেশের দুই প্রধানকে নিয়ে সমালোচনা করেছে। তিনি ফেসবুক আইডিতে লেখা মন্তব্য পড়ে শুনান উপস্থিত সুধীজনদের। এ মন্তব্য শোনে জেলা প্রশাসক দ্রুত তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপস্থিত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাপস রঞ্জন ঘোষকে নির্দেশ দেন।
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাপস রঞ্জন ঘোষ, অ্যাড. শফিকুল আলম, অ্যাড. সৈয়দ শায়েখ আহমদ, অ্যাড. মতিউর রহমান পীর, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি সিরাজুর রহমান সিরাজ, সদর উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন, সুনামগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি খায়রুল হুদা চপল, পৌর প্যানেল মেয়র হোসেন আহমদ রাসেল, সুনামগঞ্জ পৌর কলেজের সহকারী অধ্যাপক শাহ আবু নাসের, অ্যাড. এনাম আহমদ, অ্যাড. রইছ উদ্দিন আহমদ, জেলা কৃষক লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম সেরুল, জাসদ নেতা মাহিন হোসেন।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কামরুজজামান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সফিউল আলম, জাসদ নেতা আ.ত.ম সালেহ, শিক্ষাবিদ ধূর্জটি কুমার বসু, প্রফেসর পরিমল কান্তি দে, প্রফেসর ন্যাথানায়েল এডউইন ফেয়ারক্রস, প্রফেসর দিলীপ কুমার মজুমদার, ডা. মকব্বির আলী, সচেতন নাগরিক কমিটি সনাক’র সাবেক সভাপতি নুরুর রব চৌধুরী, নারীনেত্রী শীলা রায়, দৈনিক সুনামগঞ্জের ডাক’র সম্পাদক ও প্রকাশক এবং সুনামগঞ্জ পৌর কলেজের অধ্যক্ষ শেরগুল আহমেদ, সুনামকণ্ঠ সম্পাদক বিজন সেন রায়, সাপ্তাহিক সুনামগঞ্জ বার্তা’র সম্পাদক কামরুজ্জামান চৌধুরী, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান ইমদাদ রেজা চৌধুরী, নারীনেত্রী সঞ্চিতা চৌধুরী, সাংবাদিক খলিল রহমান প্রমুখ।
গণমাধ্যম কর্মীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আকরাম উদ্দিন, শামস শামীম, বিন্দু তালুকদার, আল হেলাল, মাহতাব উদ্দিন তালুকদার, শাহজাহান চৌধুরী, হিমাদ্রি শেখর ভদ্র, সেলিম আহমদ তালুকদার, দেওয়ান গিয়াস চৌধুরী, রাজু আহমদ রমজান, জসীম উদ্দিন, শহীদ নুর আহমদ প্রমুখ।