মোসাইদ রাহাত ::
জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম বলেছেন, আজকের প্রশাসন ব্রিটিশ আমলের প্রশাসন না। স্বাধীন বাংলাদেশ হওয়ার পর যে প্রশাসন হয়েছে তা হচ্ছে জনসাধারণের প্রশাসন। এ প্রশাসনে শুধু প্রশাসন ক্যাডার না, পশুসম্পদ অধিদপ্তর থেকে শুরু করে, কৃষি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে আজকে অন্য যারা মাঠপর্যায়ে শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা যারা সরকারের সাথে যুক্ত আছি তারা সবাই প্রশাসনের একটি অংশ।
তিনি বলেন, আমাদের বেতনটা আসলে কোথা থেকে আসে, বেতনটা আসে জনগণের দেওয়া ট্যাক্স থেকে। আমাদের বেতন যদি হালাল করতে হয়, যাদের ট্যাক্সের টাকায় বেতন আসে তাদের জন্য আমাদের কাজ করতে হবে।
জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম মঙ্গলবার বিকেলে সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত ‘কৃষি প্রযুক্তি মেলা’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপর্যুক্ত কথাগুলো বলেন।
সদর উপজেলা কৃষি অফিসার সালাউদ্দিন টিপুর সঞ্চালনায় ও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. জাহেদুল হকের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. কামরুজ্জামান, শিক্ষাবিদ পরিমল কান্তি দে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কৃষিবিদ স্বপন কুমার সাহা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মো. সাবিরুল ইসলাম আরো বলেন, আজকে সুনামগঞ্জে যেখানে বন্যার সময় না, শুকনা মৌসুম। তাহলে কৃষকদের ধান কেন তলিয়ে গেল। এটা একটা মৌলিক প্রশ্ন। এটা যদি ময়মসিংহ বা আমার এলাকা পাবনায় হতো তাহলে আমরা এতো বেশি চিন্তা করতাম না। কারণ সেখানে ৩ ফসলি জমি। সেখানে ৩ রকমের ফসলই হয়। আজকে যেখানে হাওরের এক ফসলি জমি সেখানে বোরো ফসল যদি নষ্ট তাহলে বাকি ২ ফসল কিভাবে আসবে। আমরা যারা কাজ করে যাচ্ছি সরকারের সাথে সরকারি কর্মচারী হিসেবে, আমরা যারা দায়িত্বে আছি আমরা কেন এই বিষয়টা দেখিনি। অনেকে দায় সারতে পারেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড বিষয়টি দেখেনি। তাদের কার্যক্রম আসলে কিভাবে হচ্ছে। কে দায়িত্ব পালন করল কি করল না সেটা পরে বিবেচনার বিষয়। বিবেচনার বিষয় নিয়ে কথা বলে লাভ নাই, ক্ষতি হয়ে গেছে। এখন যদি যারা দায় গ্রহণ করেনি, দায়িত্ব পালন করেনি বলে তার শাস্তিও হয় তাহলে এটা হবে তার ব্যক্তিগত শাস্তি। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সুনামগঞ্জের অর্থনীতির যে ক্ষতি হল সার্বিকভাবে যে ক্ষতি হলো সেই ক্ষতিটা কি আসলে পোষানো সম্ভব?
জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম আরো বলেন, আমি এখানে আসার আগে কৃষিমন্ত্রী মহোদয়ের সাথে দেখা করে এসেছি। কারণ এ জেলার বন্যার কারণে ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। আগামী একবছর কিভাবে যাবে না যাবে অধিকাংশ মানুষের কিন্তু সেই চিন্তা। শুধু খাওয়ার বিষয় না। রিলিফ যদি দেওয়া হয় যদি ৩৮ কেজি চাল আর ৫০০ টাকা হচ্ছে এগুলো ভিজিএফ-এর মাধ্যমে যাচ্ছে। আজকে যে ছেলে বা মেয়েটা এসএসসি পাস করল তাকে ভর্তি করাতে গেলে কিন্তু অর্থের প্রয়োজন। সেই অর্থটা আসবে কোথা থেকে। সে স্কুলে যাবে নৌকায় করে, তার ভাড়া প্রয়োজন, সে টাকা কোথায় পাবে। আমরা যদি প্রশাসন মনে করি ভিজিএফ কার্ড তৈরি করে আমাদের দায় শেষ হয়ে গেছে তাহলে আমরা ভুল করব।
তিনি বলেন, যারা মধ্যবিত্ত পরিবারে আছেন যে সমস্ত কৃষক বাড়িতে ভাত-চাল না থাকলেও কারো দুয়ারে যাবেন না। হয়তো কারো কাছ থেকে টাকা ধার করবেন। সেই সকল মানুষগুলো দিন আসলে কিভাবে যাবে। এই জিনিসগুলো আমাদের বিবেচনা করতে হবে।