সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
অসময়ে প্রকৃতির বিরূপ আচরণকেই হাওরে মহাবিপর্যয়ের প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সময়মত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বোর্ড এবং স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্বে কোনো অবহেলা রয়েছে কি না তা তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলে তারা মত প্রকাশ করেছেন।
পাশাপাশি দুর্গত পরিবারগুলোর এ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে এবং ভবিষ্যতের নিরাপত্তার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং সংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের ওপর জোর দিয়েছেন তারা।
স্মরণকালের মধ্যে হাওর অঞ্চলের ভয়াবহ ফসলহানি ও জলজ প্রাণি মৃত্যুর কারণ কী? এসব বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারাবিলিটি স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মাহবুবা নাসরিন এবং পানি বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক কাজী মতিন উদ্দিন আহমেদ।
অধ্যাপক মাহবুবা নাসরিন বলেন, অসময়ে অতিবৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলের ফলেই মূলত: এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বাঁধ দিয়ে আর কতটুকু নিয়ন্ত্রণ করা যায়? কত উঁচু করে বাঁধ নির্মাণ করতে পারবেন আপনি? তারপরেও বিভিন্ন রিপোর্টে হাওরাঞ্চল তদারককারী বোর্ড ও স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে অনেক অনিয়মের অভিযোগ এসেছে। আমি মনে করি এগুলো যথাযথা তদন্ত হওয়া উচিত। যদি কেউ আসলেই অনিয়ম করে থাকেন তবে তাদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত।
কেবল ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করে কৃষকের বেশিদিন নিরাপত্তা দেওয়া যাবে না বলে মনে করেন এ দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
‘ত্রাণ দিয়ে আর কতদিন কৃষকদের নিরাপত্তা দেয়া যায়? তাদের সামাজিক এবং আর্থিক নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে আনা প্রয়োজন। ওই অঞ্চলের কৃষকদের জন্য শস্যবীমা ও সম্পদবীমার ব্যবস্থা করা যায় কি না সে ব্যাপারে ভেবে দেখতে হবে।’
কৃষি মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়সহ হাওরাঞ্চলের সঙ্গে জড়িত প্রতিটি সংস্থা এবং স্থানীয় প্রশাসন একযোগে এগিয়ে না আসলে হাওরের মানুষদের ভাগ্যন্নোয়ন সম্ভব নয় বলে মত দিয়ে তিনি বলেন, কৃষকদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি গ্রহণসহ বিকল্প কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবেলা, তাদের গবাদি পশুর নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতন করতে হবে।
এছাড়া দুর্যোগকালে তারা যেন মনোবল ধরে রাখতে পারেন সেজন্য তাদের মনস্তাত্ত্বিক সমর্থনও দেয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
পানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক কাজী মতিন উদ্দিন আহমেদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়া ইদানিং বেশিই বিরূপ আচরণ করছে। আমরা যত প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছি, সে ততই আমাদের ওপর বিরূপ হয়ে উঠছে। আমরা যেটাকে বলি প্রকৃতির ‘ইরাটিক বিহ্যাবিয়ার’। অসময়ে এমন অতিবৃষ্টি এবং এবং পাহাড়ি ঢল হলে বাঁধ দিয়ে আসলে কিছু করা যায় না। তারপরেও পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য যে বাঁধগুলো হাওরাঞ্চলে আছে তার নিরাপত্তা আরো বেশি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে সেগুলো অধিক চাপ সহনীয় হয় এবং সহজে ভেঙে না পড়ে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
চলতি বছরের এপ্রিলে দেশে গত তিন দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের রিপোর্ট অনুযায়ী, স্বাভাবিকের তুলনায় ২০১৭ সালের ২৩শে এপ্রিল পর্যন্ত ১১৯ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। মাসের বাকি সময়টা আর বৃষ্টি না হলেও স্বাভাবিকের তুলনায় এমাসে ৬৮ শতাংশ বেশি বৃষ্টি থাকবে।
বাংলাদেশে এপ্রিল মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫.২৮৬ মিলিমিটার। এপ্রিলে এর চেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছিল সর্বশেষ ১৯৮৭ সালে। সেটি ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে ৭৬ শতাংশ বেশি।