মাহমুদুর রহমান তারেক ::
অটোরিকশার দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন শহরবাসী। সম্প্রতি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় গুরুতর আহত ব্যক্তি মারা গেছেন। এছাড়া বিচ্ছিন্ন ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো অনেকে। এমন অবস্থায় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে অবৈধ অটোরিকশা বেপরোয়া চলাচল বন্ধ ও বাতি ছাড়া না চালানোর নির্দেশনা দিয়ে মাইকিং করা হয়েছে। কিন্তু নির্দেশনা কানে তোলছেন না মালিক ও চালকরা।
শহরের ষোলঘর এলাকার বাসিন্দা মিঠু চৌধুরী বাজার থেকে অটোরিকশা করে তার বাসার কাছেই নামছিলেন। এসময় তাকে আরেকটি অটোরিকশা ধাক্কা দেয়। গুরুতর আহত মিঠু চৌধুরীকে প্রথমে সুনামগঞ্জ, পরে সিলেট এবং পরবর্তীতে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় নেয়া হয়। তবে শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো যায়নি।
বেপরোয়া গতির অটোরিকশার কারণে শহরের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। আহত হচ্ছেন অনেকে। প্রতিবাদ করতে গিয়ে আবার চালকদের হাতেই যাত্রী এবং পথচারীদের লাঞ্ছিত হতে হচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশ দিয়েও তাদের বেপরোয়া চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
জানা যায়, অটোরিকশা চালকদের দুটি সংগঠন আছে। দুটি সংগঠনে সদস্য সংখ্যা প্রায় হাজারের উপরে। এর মধ্যে অনেকের বয়স ১৮ বছরের নিচে এবং তারা অদক্ষ। তাদের হাতেই অনেক মালিক তোলে দিচ্ছেন স্টিয়ারিং।
ষোলঘর এলাকার ফুজায়েল জনি বলেন, সড়কে অটোরিকশা বেপরোয়াভাবে চলাচল করে। অনেক সময় একে অন্যের সাথে পাল্লা দিয়ে প্রতিযোগিতায় নামে। প্রতিবাদ করতে গেলে উল্টো নাজেহাল হতে হয়।
হাসননগর এলাকার তানভীর আহমেদ বলেন, ছোট ছোট ছেলেরা এখন অটোরিকশা চালক। এসব অদক্ষ চালকরা বেপরোয়াভাবে অটোরিকশা চালায়। প্রায় সময় তাদের কারণে পথচারীরা আহত হন।
চালকদের সংগঠন ইজিবাইক শ্রকিলীগের দেখভাল করেন জেলা শ্রমিকলীগের যুগ্ম সম্পাদক সাইফুল ইসলাম মুবিন। তিনি বলেন, আমরা সড়কে চলাচল করা ইজিবাইক চালকদের প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য একটি কর্মশালার আয়োজন করবো। এছাড়া মালিকদের পরিচয়পত্র, যাত্রীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার এবং ১৮ বছরের নিচে কোন চালককে অটোরিকশা না দেয়ার জন্য মালিকদের অনুরোধ করবো।
অটোরিকশা চালক শাহ আলম বলেন, আমি আমার ওস্তাদের হাতে গাড়ি চালানি শিখছি। আগে ঢাকা চালাইতাম। আমার গাড়ির লাইসেন্স আছে। তবে তিনি লাইসেন্স দেখাতে পারেননি।
কদর আলী নামের আরেক চালক বলেন, সব তো আর এক না। আমি আমার লিমিটের ভিতরে চালাই। যতোটুকু আমার চিনার ভিতরে আছে আমি ততটুকু চালাই। যে রাফ চালায় সে তো মানুষ মারবই। ১০ জন তো এক লাখান হইতো পারে না। ড্রাইভিং লাইসেন্স সম্পর্কে তিনি বলেন, এখানে যতোজন ড্রাইভার আছে ১০০ জনের মধ্যে ২ জনের লাইসেন্স আছে।
চালক শাহিনুর মিয়া শাহিন বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স নাই। লাইসেন্স করমু। কওয়া হইছে লাইসেন্স করার লায়। কিন্তু আমার গাড়ির লাইসেন্স আছে। আমি কিছু দিন আগে মাত্র শুনছি লাইসেন্স করার কথা। তিনি আরো বলেন, দুর্ঘটনা হঠাৎ; এটাতো আর কইয়া আয় না।
জানা যায়, বছর দু’য়েক আগে সকাল ৮টা থেকে রাত পর্যন্ত জেলা প্রশাসকের বাংলোর এলাকার চৌরাস্তা থেকে আলফাত স্কয়ার হয়ে কালিবাড়ি মোড় পর্যন্ত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ ছিল। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি তদারকি করা হত। কিন্তু মাস দু’য়েক ধরেই সেই ব্যবস্থা শিথিল হয়ে গেছে। একারণে শহরের জেলা প্রশাসকের বাংলো, পৌরমার্কেট, আলফাত স্কয়ার, কালিবাড়ি মোড়ে দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানামা করায় অটোরিকশার চালকরা। এতে ব্যস্ততম এলাকায় সৃষ্টি হয় যানজট। ভোগান্তিতে পড়েন নাগরিকরা।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার বরকতুল্লাহ খান বলেন, শহর যাতে যানজটমুক্ত থাকে সেই ব্যবস্থাই নেয়া হবে।