মোসাইদ রাহাত ::
হাওরপাড়ের জেলেদের দিন কাটছে অর্ধাহারে-অনাহারে। অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে পাউবো’র নড়বড়ে বাঁধ ভেঙে ফসলহানির পর কৃষকরা যেরকম অসহায় হয়েছেন; ঠিক তেমনই পানির নিচে ধান পচে সৃষ্ট অ্যামোনিয়া গ্যাসে হাওরের মাছ মরে বিপাকে পড়েন জেলেরা। হাওরে বা নদীতে মাছ না পেয়ে জেলেদের এখন ঘরে বসেই দিন কাটাতে হচ্ছে। কেউবা পেটের তাগিদে হয়েছেন দিন মজুর বা রিকশা চালক। পাচ্ছেন না সরকারের দেওয়া সহায়তা।
সরেজমিনে সুনামগঞ্জের জেলেপল্লী এলাকা সুরমা ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, জেলের ব্যবহৃত নৌকা নদী থেকে ডাঙায় তুলে রাখা হয়েছে বা নদীর পাড়ে নৌকাটি বেঁধে রেখেছেন। কেউবা মাছের আশায় নৌকা নিয়ে যাচ্ছেন নদীতে কিন্তু ফিরছেন শূন্য হাতে। ঘরে ভাত নেই অনেকের।
কথা হয় প্রান্তিক জেলে আমজদ মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, নদীতে গেলে মাছ পাই না। ঘরে পোলা মাইয়া আছে তাদের কি খাওয়ামু কিছুই বুঝি না। সরকার থেকে আমরা কোনো সাহায্য পাইছি না।
তার মতই কথা বললেন জেলে সূর্য বর্মণ। তিনি বলেন, ঘরে খাবারের কিছু নাই। নদীতে একদিন গেলে সাত দিন ঘরে কাটাইতে হয়। আমার জেলে কার্ড থাকলেও কোনো রকম সাহায্য-সহযোগিতা করা হয় না।
সূর্য বর্মণের বৃদ্ধ মা অঞ্জলি বর্মণ বলেন, আমার পোলাটা সারাটাদিন ঘরে বইয়া থাকে। কাজ কাম পায় না কি করব। নাতি নাতনির মুখ দিয়ে চাওয়াই যায় না। মানুষের বাসায় যে কাম করমু এই শক্তিটাও এখন আর নাই।
জেলে রাম প্রসাদ বর্মণ বলেন, মেম্বার চেয়ারম্যানের কাছে গেলে তারা কয় এখনো কোনো ত্রাণ আইছে না। আমরা কিভাবে বাঁচতাম। অন্যদিকে ঝড়ে ঘর বাড়ি নিছেগি উড়াইয়া। কোনো রকম সাহায্য সহযোগিতা না পাইলে মরা ছাড়া কোনো পথ নাই।
জেলা মৎস্য স¤পদ অধিদপ্তর বলছে, জেলায় ১০০টিরও বেশি জেলে সম্প্রদায়ভুক্ত গ্রাম আছে। এবারের ধান পচে জেলায় মাছ মরেছে ৪৯.৭৫ মেট্রিক টন। যার মূল্য ১ কোটি ৫৮ লক্ষ টাকা। জেলায় মৎস্যজীবীদের সংখ্যা ৮৪২৪৮ জন। সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত ৪৪৪৪৫ জন মৎস্যজীবী।
জেলা মৎস্য স¤পদ কর্মকর্তা শংকর রঞ্জন দাস বলেন, এবারের ফসলহানির কারণে ধান পচে মাছের মড়ক লেগেছে। হাওরের কৃষকের পাশাপাশি জেলেরাও ক্ষতিগ্রস্ত। জেলায় দেড় লক্ষ কৃষকদের ভিজিএফ এর চাল ও টাকা দেওয়া হচ্ছে। আমি জেলা প্রশাসক মহদোয়কে বলেছি কৃষকের সাথে জেলেদের ও যেন এই ত্রাণ সহায়তায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং এখন বিভিন্ন উপজেলায় জেলেরা ভিজিএফ এর চাল ও ৫০০ টাকা পাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, তাছাড়া আমরা অধিদপ্তরের মাধ্যমে মৎস্যজীবীদের একটা সংখ্যা পাঠিয়েছি। যেহেতু হাওরে মাছ নেই তাই বিভিন্ন হাওরে মাছের পোনা ছাড়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।