স্টাফ রিপোর্টার ::
দক্ষিণ সুনামগঞ্জের পাগলা বাজার এলাকায় বারবার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ভাংচুর, নির্যাতন, হামলার পরও পার পেয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল আলম নিক্কুর আত্মীয়-স্বজনরা। আওয়ামী লীগ নামধারী এই নেতার উশৃঙ্খল আত্মীয়-স্বজনদের কারণে সমালোচিত হচ্ছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে সংগঠনটি বিব্রতও। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার হিন্দু সম্প্রদায়ের দুইবারের জনপ্রিয় তরুণ জনপ্রতিনিধি দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় মসজিদে ঢুকে বেধড়ক মারধর করেছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে পাগলা এলাকার শত্রুমর্দন গ্রামের কুমারপাড়া এলাকায় সংখ্যালঘুর বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। রেজাউল আলম নিক্কুর চাচাতো ভাই মোস্তফা মিয়ার নেতৃত্বে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জেলাব্যাপী প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়। প্রথমে থানা মামলা নিতে অপারগতা প্রকাশ করায় থানার ওসি (বর্তমান ওসি) আল আমিনকে দায়িত্বে অবহেলায় ক্লোজড করা হয়েছিল। ওই সময় ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছিল। গ্রেফতার করা হয়েছিল ৭ জনকে। তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছিলেন জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম ও তৎকালীন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ। ওই মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন অবস্থায় আছে। তবে মামলার পর তাদের এখন পর্যন্ত হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই এলাকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন ওই প্রভাবশালী পরিবারের কারণে তটস্থ থাকেন বলে এলাকাবাসী জানান।
গত ১৫ মে পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য রণজিত সূত্রধরকে কান্দিগাঁও মসজিদে ঢুকে হাতুড়ি, রড ও চাকু দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে অজ্ঞান অবস্থায় ফেলে যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার ‘অপরাধ’ ছিল এলাকার একটি কালভার্টের কাজে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। এই জন্য তাকে বেধড়ক মারধর করেন রেজাউল আলম নিক্কুর ভাই, ভাতিজা, ভাগ্নেসহ নিকটাত্মীয়রা। এভাবে বারবারই দক্ষিণ সুনামগঞ্জের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা করা হচ্ছে। বারবার হামলা ও নির্যাতনের ঘটনায় এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলেও প্রশাসনিক উদাসীনতায় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
পশ্চিম পাগলা ইউপি চেয়ারম্যান মো. নূরুল হক বলেন, এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় আমি নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। যারা ইউপি সদস্যকে আমাদের পবিত্র স্থান মসজিদে ঢুকে মারধর করেছে তাদের শাস্তি দাবি করি। অবিলম্বে এই সন্ত্রাসীদের ধরে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার ওসি আল আমিন বলেন, আপনারা সংখ্যালঘু বলেন কেন। দুটি পক্ষের মধ্যে এসব ঘটনা ঘটছে। ২০১৪ সনের মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। গত মঙ্গলবারের ঘটনায় এখনো অভিযোগ করা হয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী স্টাইলে আক্রমণের পরও কেন দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছেনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের পেলে গ্রেফতার করব।