ফসল হারিয়ে নিঃস্ব হাওরপাড়ের কৃষক। এই অবস্থায় পল্লীবিদ্যুৎ সংযোগের নামে ফসলহারা কৃষকদের পকেট কেটে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এ সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা কখনো এমপি’র নাম ভাঙিয়ে, কখনো পল্লীবিদ্যুতের বড় কর্তাদের নাম করে এই টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
এ বিষয়ে গত ২০ এপ্রিল বিদ্যুৎ জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ করেছেন সদর উপজেলার কাঠইর ইউনিয়নে গোলেরগাঁও গ্রামের মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান নাসিম। তিনি অভিযোগে ফসলহারা কৃষকের পকেট কেটে নেওয়া এই টাকা উদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সুনামগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ অফিস স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে চাঁদা দাবিকারীদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে সোপর্দের নির্দেশনা দিয়েছে।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, কাঠইর ইউনিয়নের বিদ্যুৎবঞ্চিত ৪-৫টি গ্রাম সরকারের বিশেষ পল্লী বিদ্যুৎ সংযোগ প্যাকেজ ঘোষণায় মাস্টারপ্ল্যানের অন্তর্ভুক্ত হয়। গত ৭ মে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান ইউনিয়নের নোয়াগাঁও, গুলেরগাঁও, উলুতুল, হোসেননগর, মাগুরা ও চোয়াপুর গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের জন্য একটি ডিওলেটার প্রদান করেন। সম্প্রতি এই গ্রামগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এরপরই এলাকার একটি চক্র স্থানীয় সাংসদ অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ’র নাম ভাঙিয়ে গ্রামের লোকদের নানা ভয়-ভীতি-প্রলোভন ও দ্রুত সংযোগ প্রদানের নাম করে প্রায় ১ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে ১০০০-২০০০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছে। এ পর্যন্ত ওই চক্র প্রায় ১৩ লক্ষ টাকা উত্তোলন করেছে বলে জানাগেছে। আবেদনকারী আরো উল্লেখ করেন, স্থানীয় সাংসদ অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ ২০১৬ সনে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য ৫০ কি.মি. বরাদ্দ পান। কিন্তু তিনি ওই ইউনিয়নের তাঁর বরাদ্দ থেকে ১ কি.মি. সংযোগও প্রদান করেননি। অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়, টেন্ডারকৃত কয়েকটি গ্রামে লাইনের কাজ শেষ হলেও এখনো সংযোগ প্রদান করা হয়নি।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ফসলহারা কৃষকরা টাকা ফেরত চাওয়ায় চুয়াপুরের ফারুক, মাগুরার সেলিম, আব্দুস শহীদ, জসিম ও ঠিকাদার হালিম তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ দিবেনা বলে হুমকি দিচ্ছে।
শুধু কাঠইর ইউনিয়নই নয়, মোহনপুর ইউনিয়নের নদীর উত্তরপাড়ের কয়েকটি গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের কথা বলে একজন জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে একটি দুর্নীতিবাজ চক্র হাজারো গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, বিভিন্ন জনের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন স্থানে একটি দুর্নীতিবাজ চক্র গ্রাহকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পেয়ে পল্লী বিদ্যুৎ অফিস গ্রাহকদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। দুর্নীতিবাজ ওই চক্রকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে সোপর্দেরও আহ্বান জানানো হয়েছে।
আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, গত দুই বছর আগে সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নে জাহাঙ্গীরনগর গ্রামে এমন একটি চক্র এলাকাবাসীর কাছ থেকে প্রায় পনের লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এ সময় পল্লীবিদ্যুতের কয়েকজন জড়িত থাকার খবর পত্রিকায় উঠে আসে। গত কয়েক মাস আগেও সুরমা ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামে সংবদ্ধ চক্র তাদের প্রতারণার জাল ফেলে। ঠিকাদার পরিচয়দানকারী এক ব্যক্তির নেতৃত্বে প্রায় ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় সংঘবদ্ধ চক্র। পরে এলাকার বালাকান্দা বাজারে তাদেরকে আটক করে সালিশ করা হয়। ওই ঠিকাদার এলাকাবাসীর সামনে ক্ষমা চাইলেও টাকা ফেরত দেয়নি।
আমরা, সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যদের চিহ্নিত করে তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানাই। আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে অবশ্যই কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।