সুনামগঞ্জের ফসল রক্ষা বাঁধে দুর্নীতি-অনিয়ম এখন দেশজুড়ে আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। বাঁধে দুর্নীতির শিকড় গড়িয়েছে অনেক দূর। দুর্নীতিবাজ পাউবো কর্মকর্তা, ঠিকাদার ও পিআইসি কর্মকর্তাদের দেশবাসী ধিক্কার জানাচ্ছেন। গত মঙ্গলবার পাউবো’র সিলেট বিভাগের তিন প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। নানা সূত্র বলছে, সুনামগঞ্জের আলোচিত ৬ ঠিকাদারের বিরুদ্ধে যেকোন মুহূর্তে মামলা হতে পারে।
এদের দুর্নীতির কারণে সুনামগঞ্জের ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে সবক’টি হাওরের ফসল তলিয়ে গেছে। লাখ লাখ কৃষক পরিবার সব হারিয়ে পথে বসেছেন। হাওরাঞ্চলের এই সংকটের জন্য দায়ী করা হচ্ছে পাউবো’র দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী, ঠিকাদার ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি)-কে। দুর্নীতির বিষয়টি প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় সুনামগঞ্জের পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী আফছার উদ্দিনকে কিছুদিন আগে প্রত্যাহার করার পর মঙ্গলবার তাকে কর্মস্থল থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সাথে সিলেট অঞ্চলের পাউবো’র আরো দুই কর্মকর্তা আব্দুল হাই ও নূরুল ইসলামকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
ফসলরক্ষা বাঁধ নিয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং দুদক পৃথকভাবে তদন্ত করছে। গত মঙ্গলবার একটি কমিটিতে পরিবর্তন আনা হয় এবং বলা হয়েছে দেড় মাসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার জন্য।
এদিকে ঠিকাদারদের ব্যাপক দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ে নানা আলোচনা-জল্পনা-কল্পনা চলছে জেলাজুড়ে। পাউবোতে ঠিকাদারি করে ‘আঙুল ফুলে তালগাছ’ বনে যাওয়া ঠিকাদারদের নাম রয়েছে আলোচনার শীর্ষে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, পাউবো কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া শুরু হওয়ার পর এখন ঠিকাদার ও পিআইসি’র গাফিলতির বিরুদ্ধে নেয়া হচ্ছে ব্যবস্থা। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হতে পারে। আর মামলা হলেই কোটিপতি বনে যাওয়া ঠিকাদারদের সব দুর্নীতি বেরিয়ে আসবে এবং দুর্নীতিবাজরা জেলে ঢুকবে। এই সূত্রটি বলছে, লাইসেন্স যারই হোক যারা কাজগুলো বাগিয়ে নিয়েছে তাদেরই মূলত ধরা হবে।
প্রসঙ্গত, এক ঠিকাদার ইতোমধ্যে গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমরা এসব ছোটখাটো কাজ করি না। আমার ঠিকাদারি লাইসেন্স ব্যবহার করে অন্যরা হাওরের এ কাজ নিয়েছে। কাজের গাফিলতি ও নি¤œমান নিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।’
জানা যায়, সজীব রঞ্জন দাশ, মেসার্স খন্দকার শাহীন আহমদ, নূর ট্রেডিং, মেসার্স গুডম্যান এন্টারপ্রাইজ, নুনা ট্রেডার্স, মেসার্স ইব্রাহিম ট্রেডার্স এন্ড শামিম আহসান, মেসার্স ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স, মেসার্স হান্নান এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স বোনাস ইন্টারন্যাশনাল, মেসার্স সোয়েব এন্টারপ্রাইজ, কাজী নাসিম উদ্দিন, মেসার্স নিম্মি এন্ড মুমু কন্সট্রাকশন, মেসার্স মালতী এন্টারপ্রাইজ, মো. আতিকুর রহমান, মেসার্স বসু নির্মাণ সংস্থা, শেখ আশরাফ উদ্দিন, মেসার্স প্রীতি এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স রেনু মিয়া, মেসার্স আকবর আলী এবার হাওর রক্ষা বাঁধের সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ পায়। এর মধ্যে বেশ কয়েক জন সরকার দলীয় একটি সংগঠনের নেতাও রয়েছেন। যারা প্রভাব খাটিয়ে সিন্ডিকেট করে কাজ বাগিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তারা হাওরে কাজ না করেই টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন বলে বিভিন্ন সংবাদপত্র, টেলিভিশনের সচিত্র প্রতিবেদনে উঠে আসে।
হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের সংগঠনের একাধিক নেতৃবৃন্দ জানান, শুধু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেই হবে না। তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। যাতে পরবর্তীতে হাজার হাজার কৃষকের রুটিরুজি নিয়ে কেউ ছিনিমিনি না খেলে।
গত ৩০ এপ্রিল শাল্লায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে গাফিলতি প্রমাণ পেলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আমরাও চাই, দুর্নীতিবাজদের আইনের কাঠগড়ায় এনে এদের বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেবে সরকার।