২৮ এপ্রিলের মধ্যেও সুনামগঞ্জের হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের জন্য সরকার ঘোষিত বিশেষ ভিজিএফ তালিকা চূড়ান্ত করা হয়নি। ১ মে থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে সাহায্য প্রদানের কথা রয়েছে। তালিকা চূড়ান্ত করতে গিয়ে ইতোমধ্যেই অব্যবস্থাপনা, সমন্বয়হীনতার অভিযোগ উঠেছে। হাওরাঞ্চলের কৃষকদের অভিযোগ, তালিকা তৈরিতে নিয়োজিত লোকজন এখনো তাদের কাছে যায়নি। তালিকা তৈরিতে ইউনিয়ন পর্যায়ে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা সদস্য হিসেবে থাকলেও তাঁরা সেই দায়িত্ব সম্পর্কে অবগত নন। তারপরও কৃষি বিভাগ মনগড়া ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠিয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কৃষিবিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তাদের বক্তব্য হাস্যকর তো বটেই, তা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ভিজিএফ কার্ড থেকেও বঞ্চিত হবেন। কৃষি বিভাগ বলছে, ২০১৪ সনে সরকার যে কৃষি কার্ড করেছিল, তার তালিকা ধরেই এই প্যাকেজের সুবিধা পাবেন অধিকাংশ কৃষক।
পুরনো তালিকা ধরে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার বিষয়টি সামনে নিয়ে আসলে বর্তমান ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক সরকারের সাহায্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবেন এটা নিশ্চিত। প্রশাসনকে এসব বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে নতুন করে। তাছাড়া মাঠের বদলে অফিসে বসে কাজ করা কৃষি বিভাগের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাবৃন্দ ও চেয়ারম্যান-মেম্বারদের উপর নির্ভরশীল থাকায় প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করা যেমন বিলম্ব হচ্ছে, তেমনি প্রকৃত কৃষক তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
গত বুধবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ত্রাণ ও পুর্নবাসন শাখায় কৃষি বিভাগের পাঠানো প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জেলার হাওর-বাঁওরে এ বছর চাষ হয়েছে ২লাখ ২৩ হাজার ৮৮২ হেক্টর ফসলি জমি। এর মধ্যে হাওরে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬৮২ হেক্টর হাওরের বাইরে বিভিন্ন গ্রামে নিচু জমিতে চাষ হয়েছে আরো ৫৬ হাজার ৪০০ হেক্টর। প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত জেলার হাওরে ৯০ শতাংশ ফসলের ক্ষতি হয়েছে। হাওরের বাইরে ক্ষতির পরিমাণ ১৭ হাজার ৩৮৮ হেক্টর। ক্ষতিগ্রস্ত চাষীর সংখ্যা ২লাখ ৭৭ হাজার ১৮৮ জন। কৃষি বিভাগের এই ক্ষতির পরিমাণ ধরেই জেলা প্রশাসন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ১ লাখ ৫০ হাজার কৃষকের সহায়তা প্রাপ্তির পরিসংখ্যান পাঠিয়েছে। এখন কৃষকের নাম চূড়ান্ত করা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে উপজেলা প্রশাসনকে। উপজেলা প্রশাসন স্থানীয় প্রশাসনকে নিয়ে কাজ করলেও এখনো চূড়ান্ত হয়নি তালিকা। কৃষি বিভাগের মতে ২০১৪ সন থেকে এ পর্যন্ত ৩ লাখ ৩১ হাজার ৩১৬ জন কৃষক কৃষি কার্ড পেয়েছেন। এ তালিকা ধরেই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুনামগঞ্জের ২ লাখ ৭৭ হাজার ১৮৮ কৃষকের পরিসংখ্যান প্রেরণ করে। গড়পড়তা এই তালিকা ধরেই যাচাই-বাছাই না করে ক্ষতিগ্রস্ত দেড়লাখ কৃষক পরিবারের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তাদের এই তালিকা তৈরির বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন মাঠ পর্যায়ে থাকা কৃষি কর্মকর্তারা।
এই দায়সারা তালিকা প্রণয়নে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বঞ্চিত হবেন সরকারি সাহায্য পাওনা থেকে। তালিকা প্রণয়নে প্রশাসনকে আরো কঠোর নজর দিলেই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক উপকৃত হবেন।