1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১১:২৪ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের জন্য বিশেষ ভিজিএফ : এখনো চূড়ান্ত হয়নি তালিকা

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৭

শামস শামীম ::
সুনামগঞ্জের হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের জন্য সরকার ঘোষিত বিশেষ ভিজিএফ তালিকা গত চারদিনেও চূড়ান্ত করা যায়নি। তালিকা তৈরিতে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, সমন্বয়হীন অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় কৃষকের কাছে এখনো যায়নি কৃষি বিভাগ বা তালিকা তৈরিতে নিয়োজিত জনপ্রতিনধিরা। তালিকা তৈরিতে ইউনিয়ন পর্যায়ে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা সদস্য হিসেবে থাকলেও তারা সেই দায়িত্ব সম্পর্কেও অবগত নন। তারপরও কিভাবে কৃষি বিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে পাঠিয়েছে সেটা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন ২৮ এপ্রিলের মধ্যেই চূড়ান্ত তালিকা স¤পন্ন করে বিশেষ ভিজিএফ প্রদান করা হবে।
কৃষি বিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৪ সনে সরকার যে কৃষি কার্ড করেছিল তার তালিকা ধরেই এই প্যাকেজের সুবিধা পাবেন অধিকাংশ কৃষক। ফলে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা তালিকা থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ‘হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও’ আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান বলেন, যারা এই গুরুত্বপূর্ণ তালিকা করবে তাদের মধ্যে কোন সমন্বয়ও নেই। সবাই চেয়ারম্যান-মেম্বারদের উপর নির্ভর করে বসে আছে।
গত বুধবার জেলা প্রশাসন জনসংখ্যার হার বিবেচনা করে ১১টি উপজেলা ও ৪ পৌরসভায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের নামে মন্ত্রণালয় যে বরাদ্দ দিয়েছে তা বন্টন করে দিয়েছে। প্রশাসন প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদকে নির্ধারিত কোটা উল্লেখ করে তালিকা পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত কোন তালিকাই চূড়ান্ত হয়নি। ফলে ২৮ এপ্রিল ভিজিএফ বরাদ্দ বন্টন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের কৃষক রফিক মিয়া বলেন, ‘আমি আইধ্যা ৩ কিয়ার জমিনে ধান লাগাইছিলাম। পানি আইয়্যা বান্দ বাইঙ্গা ফসল নিয়া গ্যাছে। তিনদিন তকি বিশ্বম্ভরপুর ডিলারের দোকানে লাত্থিগুতা খাইয়া লাইনে দাঁড়াইলেও চাউল পাইছি একদিন’। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক হিসেবে তার নাম তালিকায় উঠেছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘টিভিতে হুনছি ৩০ কেজি চাল ও ৫০০ টাকা দিব। কিন্তু কোন চেয়ারম্যান-মেম্বার আমরারে খবর দেয় নাই’। দেখার হাওরপাড়ের গ্রাম বাহাদুরপুর গ্রামের কৃষক মনির উদ্দিন বলেন, ‘এই হাওরে আমার ৩ একর জমি ছিল। সম্পূর্ণ জমি গত রোববারে তলিয়ে গেছে। কারা তালিকা করছে তাও জানিনা। কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। কোথায় যোগাযোগ করতে হবে সেটাও জানিনা। উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাকেও চিনেননা এই কৃষক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছে, জনসংখ্যার অনুপাতে প্রথমে মন্ত্রণালয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের উপজেলা ও পৌরসভা ওয়ারি পরিসংখ্যান পাঠানো হয়েছিল। গত সোমবার রাতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় পুরনো তালিকা ধরে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার বিষয়টি সামনে আসলে সুধীজন প্রতিবাদ করে। ফলে প্রশাসন এই তালিকা সংস্কার করে নতুন ক্ষতিগ্রস্তদেরও অন্তর্ভুক্তির নির্দেশনা দেয়। অন্যদিকে দ্রুততম সময়ে তালিকা তৈরির নির্দেশনা দেওয়ায় ইাউপি চেয়ারম্যান-মেম্বাররাও বিপাকে পড়েছেন। মাঠের বদলে অফিসে বসে কাজ করা কৃষি বিভাগের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তাবৃন্দও চেয়ারম্যান-মেম্বারদের উপর নির্ভরশীল থাকায় প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করতে বিলম্ব হচ্ছে। জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তের তুলনায় বরাদ্দ কম থাকায় তালিকা করতে সমস্যা হচ্ছে। তাছাড়া সরকারের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে কি না তার জন্যও দেরি হচ্ছে।
গত বুধবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখায় কৃষি বিভাগের পাঠানো এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে জেলার হাওর-বাঁওরে এ বছর চাষ হয়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার ৮৮২ হেক্টর। এর মধ্যে হাওরে ১ লক্ষ ৬৬ হাজার ৬৮২ হেক্টর। হাওরের বাহিরে বিভিন্ন গ্রামের নিচু জমিতে চাষ হয়েছে আরো ৫৬ হাজার ৪০০ হেক্টর। প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত জেলার হাওরের ৯০ ভাগ ফসলের ক্ষতি হয়েছে। হাওরের বাইরে ১৭ হাজার ৩৮৮ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষীর সংখ্যা ২ লাখ ৭৭ হাজার ১৮৮ জন। কৃষি বিভাগের পাঠানো এই তালিকা ধরেই জেলা প্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ১ লক্ষ ৫০ হাজার কৃষকের সহায়তাপ্রাপ্তির পরিসংখ্যান পাঠিয়ে দিয়েছে। এখন কৃষকের নাম চূড়ান্ত করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে উপজেলা প্রশাসনকে। উপজেলা প্রশাসন স্থানীয় প্রশাসনকে নিয়ে সেই কাজ করলেও এখনো চূড়ান্ত হয়নি তালিকা।
কৃষি বিভাগের মতে, ২০১৪ সন থেকে এ পর্যন্ত ৩ লাখ ৩১ হাজার ৩১৬ জন কৃষক কৃষি কার্ড পেয়েছেন। এই তালিকা ধরেই মন্ত্রণালয়ের তাড়ায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুনামগঞ্জের ২ লাখ ৭৭ হাজার ১৮৮ কৃষকের পরিসংখ্যান প্রেরণ করে। ‘গড়পড়তা’ এই তালিকা ধরেই যাচাই-বাছাই না করে ক্ষতিগ্রস্ত দেড় লাখ কৃষক পরিবারের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তাদের এই তালিকা তৈরির বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন মাঠপর্যায়ে থাকা কৃষি কর্মকর্তারা।
জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়নের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা আকলিমা আক্তার বলেন, আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ২০১৪ সনে যে কৃষি কার্ড তৈরি হয়েছিল তার তালিকা আমরা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কাছে দিয়েছি। তারাই তালিকা করে আমাদের কাছে দিবেন। তারা কবে তালিকা দিবেন আমরা জানিনা।
সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা রেজিয়া সুলতানা বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা তৈরির কোন নির্দেশনা অফিস থেকে আমরা পাইনি। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বললে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা করব। তবে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের ক্ষতিগ্রস্তদের নাম দেওয়ার জন্য আমরা বলেছি। তালিকা তৈরির কমিটিতে তিনি সদস্য হিসেবে আছেন এই বিষয় সম্পর্কেও অবগত নন এই কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের এই কর্মকর্তা।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, কোন উপজেলায় কত পরিবার এই বিশেষ সহায়তা পাবে তা চূড়ান্ত হয়ে গেছে। এখান থেকে একটিও কম বেশি করা যাবেনা। প্রাপ্ত বরাদ্দ ১১ উপজেলা ও চার পৌরসভায় বিতরণ করা হয়ে গেছে। এখন ক্ষতিগ্রস্তদের নাম চূড়ান্ত হলেই বিতরণ শুরু হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. জাহেদুল হক বলেন, পুরনো তালিকা ধরে কাজ করলেও যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারাও তালিকাভুক্ত হবেন। এই লক্ষ্যে আমাদের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা ইউপি চেয়ারম্যানদের সমন্বয়ে কাজ করছেন। তাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক কৃষকদের অন্তর্ভুক্তির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান বলেন, চূড়ান্ত তালিকা এখনো হাতে পাইনি। আশা করি শুক্রবার পেয়ে যাব। তালিকা চূড়ান্ত হলেই বিশেষ এই ত্রাণ সহায়তা কৃষকদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com