সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
বিএনপি’র জাতীয় ত্রাণ কমিটি ত্রাণ তৎপরতা চালানোর জন্য সুনামগঞ্জে যেতে প্রস্তুতি গ্রহণ করলে প্রধানমন্ত্রীর সফরের অজুহাত তুলে স্থানীয় প্রশাসন বিএনপি’র ত্রাণ প্রতিনিধি দলের সফর বানচাল করে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।
বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
রিজভী বলেন- সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জসহ হাওর এলাকায় পাহাড়ী পানির ঢলে ব্যাপক বিপর্যয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার উপদ্রুত মানুষ এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে নিপতিত হয়েছে। অধিকাংশ উপদ্রুত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারগুলোর জন্য সরকারের তরফ থেকে কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। হাওর পাড়ের বিপন্ন মানুষগুলোর কাছে পৌঁছায়নি সরকারের কোন সহায়তা।
হাওর অঞ্চলে সরকারি ত্রাণের সমালোচনা করে তিনি বলেন, নেত্রকোণায় হাওর এলাকায় সরকারের এক মন্ত্রী মাত্র গুটিকয়েক দুর্গত মানুষকে ত্রাণ দিয়ে ঢাকায় চলে এসেছেন। এসময় হাজার হাজার নিরন্ন মানুষ ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করতে থাকলেও মন্ত্রী কেবল হাত নাড়িয়েই চলে আসেন। ভোর থেকে হাজার হাজার মানুষ খোলা বাজারে চাল ও আটা কেনার জন্য লাইনের দাঁড়ালেও দুইশো জনের বেশি তা কিনতে পারবেন না। ফসলহারা নিরন্ন ক্ষুধার্ত মানুষ নিরাশ হয়ে খালি হাতে নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তন করছেন। সামান্য চাল বা আটার জন্য হাহাকার চলছে।
সরকার হাওর পাড়ের এই পাহাড়ি ঢলে বিধ্বস্ত জনপদকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসা নানা সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকেও ত্রাণ তৎপরতা চালাতে দিতে বাধা দিচ্ছে।
তিনি বলেন, পাহাড়ি ঢলের প্রথম আঘাতেই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেত্রকোণা জেলার দুর্গত এলাকার মানুষদের পাশে দাঁড়ান। বিএনপি’র পক্ষ থেকে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান এর নেতৃত্বে বিএনপি’র ত্রাণ প্রতিনিধি দল ত্রাণসামগ্রী বিতরণের জন্য শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) শুক্রবার সুনামগঞ্জে যাওয়ার দিন ধার্য ছিল। বুধবার আবদুল্লাহ আল নোমান এর নেতৃত্বে বিএনপি’র জাতীয় ত্রাণ কমিটি ত্রাণ তৎপরতা চালানোর জন্য সুনামগঞ্জে যেতে প্রস্তুতি গ্রহণ করলে প্রধানমন্ত্রীর সফরের অজুহাত তুলে স্থানীয় প্রশাসন বিএনপি’র ত্রাণ প্রতিনিধি দলের সফর বানচাল করে দেয়। জরুরি পরিস্থিতিতে উপদ্রুত মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছানো এই মুহূর্তে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এখানে কোন অজুহাত তুলে সমাজের নানা শ্রেণি পেশার মানুষ বা সংগঠনের ত্রাণ তৎপরতায় বাধা প্রদান করা একদলীয় দুঃশাসনেরই বহিঃপ্রকাশ। সুনামগঞ্জের উপদ্রুত এলাকায় যে দুর্ভিক্ষের ছায়া নেমে এসেছে সেটি আরো দুর্বিষহ মাত্রায় উপনীত হবে শুধুমাত্র সরকারের মৌনতা ও নিষ্ক্রিয়তায়। এরা ক্ষুধার্ত মানুষের উপরেও শাসনযন্ত্রের দমন ক্ষমতা কাজে লাগায়। হাওর পাড়ের দুর্গত মানুষদের ত্রাণ দেয়ার ক্ষেত্রেও দলীয়করণ করা হচ্ছে। প্রায় অর্ধকোটি মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেলেও সরকারের প্রধানের ভাবখানা যেন এমন, যে দেশে কিছুই হয়নি।
বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, এই মহাদুর্যোগময় পরিস্থিতিতে হাওর প্রকল্পের মহাপরিচালকসহ ৯ জন কর্মকর্তা বর্তমানে বিদেশে রয়েছেন। সুতরাং মানুষের অসহায় অবস্থাকে নিয়ে সরকার যে উপহাস ও তাচ্ছিল্য করছে সেটি আজ সকলের কাছে ¯পষ্ট। চারিদিকে হাহাকার, ক্ষুধার্ত মানুষের আহাজারি, ক্ষেতের একমাত্র বোরো ফসল ঢলের পানিতে ভেসে যাওয়া খাদ্যহারা-জীবিকাহারা মানুষের জীবন যেখানে বিপন্ন হতে চলেছে, মাছ-হাঁসসহ সমস্ত জলজ প্রাণী এবং গবাদি পশুর যখন মড়ক শুরু হয়েছে তখন সরকারের ত্রাণ সচিব বলছেন-অর্ধেক মানুষ মারা না গেলে সেখানে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করা যাবে না। এই বক্তব্য অসহায় মানুষের প্রতি ক্ষমতাসীনদের কঠিন বিদ্রƒপ।
সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, একমাত্র ভোটারবিহীন সরকার ক্ষমতায় আছে বলেই এধরনের মন্তব্য করার সাহস পায় আমলারা। পাহাড়ি ঢলে সংশ্লিষ্ট এলাকা বিপন্ন হওয়ার কারণ মনুষ্য সৃষ্ট। ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতির কারণেই উক্ত এলাকাগুলোতে মানুষের দুর্ভোগ ব্যাপকতা লাভ করেছে।
আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি’র পক্ষ থেকে অবিলম্বে পাহাড়ি ঢলে আক্রান্ত হাওর এলাকাগুলোকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি দেশের সকল বেসরকারি সংস্থা, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ দেশের বিত্তশালীদেরকে দুর্গত এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা আরো আহ্বান জানাচ্ছি এক্ষেত্রে সরকারি প্রশাসন যেন কোনো বাধা সৃষ্টি না করে।