স্টাফ রিপোর্টার ::
সুনামগঞ্জের হাওর ও নদীতে বিরাজ করছে মাছের আকাল। জেলেরা দিন-রাত বৃথা কষ্ট করে হাওর বা নদীতে মাছ না পেয়ে বাড়ি ফিরছেন খালি হাতে। নদী ও হাওরে মাছ শিকার করতে না পারায় জেলেরা পড়েছেন বিপাকে। তেমনি বাজারের মাছ ব্যবসায়ীরাও পড়েছে বেকায়দায়।
সম্প্রতি পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে পাউবো’র ‘বালির বাঁধ’ ভেঙে জেলার হাওরগুলোতে কাচা ধানগাছ পচে গিয়ে পানিতে অ্যামোনিয়া গ্যাসের সৃষ্টি হয়। এ অ্যামোনিয়া গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে হাওর ও নদীতে মাছের মড়ক দেখা দেয়। ফলে এক সপ্তাহ ছোট হাওরগুলোতে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে জেলা প্রশাসন। পরিস্থিতির উন্নতি হলে গত মঙ্গলবার মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়।
পানিতে দূষণের কারণে এবারের মৌসুমে ৫০ মেট্রিক টন মাছ মরেছে বলে দাবি করেছে জেলা মৎস্য বিভাগ। মৎস্য অধিদপ্তরের মতে, সুনামগঞ্জ জেলায় প্রতিবছর ৮৯ হাজার টন মাছ উৎপাদিত হয়। জেলার স্থানীয় চাহিদা ৫৪ হাজার টন। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত থাকে ৩৫ হাজার টন।
শহরতলির ইব্রাহিমপুর গ্রামের বাসিন্দা জেলে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গত ১৫ দিন ধরে বেকার। এখন দু’একদিন ধরে মাছ শিকারে যাই, কিন্তু মাছ শিকার করতে পারি না। কারণ হাওরে মাছ নেই, নদীতেও মাছ নেই।’
একই এলাকার জেলে রিয়াজ উদ্দিন ও নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা তো বিপদে পড়েছি। মাছ শিকার করতে না পারলে সংসার চালাব কেমন করে। দিন-রাত কষ্ট করে খালি হাতে বাড়ি ফিরি।’
সুনামগঞ্জের মাছ বাজারের ব্যবসায়ী আবু মিয়া, বকুল মিয়া, সবর আলী, নুর জামাল, জুলন মিয়া, খোকন মিয়া, দেলোয়ার হোসেন, রেনু মিয়া, সবর আলী, বেলাল হোসেন, মোছদ্দর মিয়াসহ আরও অনেকে বলেন, ‘জেলেদের কাছ থেকে মাছ কেনার আশায় বসে থাকি বাজারে। কিন্তু যাদের সাথে দেখা হয়, তাদের টুকরিতে মাছ নেই। তারা জানান, হাওর ও নদীতে মাছ নেই। তাই তারা মাছ শিকার করতে পারছেন না।’
বাজারে মাছ কিনতে আসা স্কুল শিক্ষক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘হাওরে ও নদীতে মাছ না থাকায় জেলেরা মাছ শিকার করতে পারছেন না। এ কারণে আমরাও মাছ কিনতে পাচ্ছি না।
তাহিরপুরের শনির হাওরের পাড়ের জেলে রহিম উদ্দিন বলেন, ‘আমার পরিবারের লোকজন ধানের সময় ধান কেটে সংসার চালাই। বর্ষায় মাছ মেরে। এবার মাছ ধরতে পারছি না। হাওরে মাছ নেই।’
বিশ্বম্ভরপুরের খরচার হাওরের জেলে সুভাষ চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমরা জাতিগত মাছ শিকারি। মাছ ধরে পরিবার চালাই। গত তিনদিন ধরে হাওরে মাছ ধরতে যাই। কিন্তু মাছ পাই না। আজ আমার জালে কয়েকটি মেনি মাছ ধরা পড়েছে। বিক্রি করেছি ৫০ টাকায়।’
জামালগঞ্জের পাকনার হাওরপাড়ের জেলে সুমন বর্মণ বলেন, ‘গত দুইদিনে হাওরে মাছ মেরেছি ১শ’ টাকার। পরিবারে খরচ লাগে দৈনিক ৪শ’ টাকা। মাছ নেই হাওরে। সংসার চালাই কেমনে।’
দক্ষিণ সুনামগঞ্জের দেখার হাওর পাড়ের জেলে সুজন মিয়া বলেন, ‘আগে প্রতিদিন বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করতাম ৩-৪ শত টাকার। কিন্তু গত তিনদিনেও ২শত টাকার মাছ মারতে পারিনি। হাওরে মাছ নেই। মনে হয় সব মরে গেছে।’
এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শঙ্কর রঞ্জন দাশ বলেন, মাছের বিষক্রিয়া বিষয়ে এখনও জেলেদের ভয় কাটেনি। আগের মত হাওরের মাছ ধরছে না জেলেরা। হাওর বা নদীর মাছ ধরলে বা খেলে কোনো সমস্যা নেই। তিনি জানান, ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবার হাওরে ছাড়া হবে রেণুপোনা। হাওরের পানিতে পচে থাকা ধান গাছ থেকে প্ল্যাংকটন জন্মাবে। এতে হাওরের মাছের খাবারের ঘাটতি থাকবে না। বৃদ্ধি হবে উৎপাদন।