হাওরবাসীর আর কি হারালে দুর্গত এলাকা ঘোষণা হবে। বাঁধ ভেঙে কৃষকের ধান গেছে, হাওরের মাছ গেল, গবাদি পশুর খাদ্য নেই, হাওরজুড়ে হাহাকার, আর্তনাদ।
হাওরপাড়ের মানুষের বেঁচে থাকার বিকল্প অবলম্বন ছিল মাছ। সে মাছও আর নেই। হাওরপাড়ের তেমন কর্মসংস্থানের সুযোগ-সুবিধা না থাকায় লাখ লাখ মানুষ এখন কী করবেন এ নিয়ে দিশেহারা। তাদের জীবন কাটছে অনাহার আর অর্ধাহারে। অনেকে কাজের খোঁজে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় পাড়ি জমাচ্ছেন।
একে একে ঘটে যাওয়া এতো দুর্যোগের পরও কি সুনামগঞ্জকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করা হবে না? আর কী দুর্গতি ঘটলে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করা হবে? দুর্গত কাকে বলেÑ সেই হিসেব মিলাতে পারছেন না সুনামগঞ্জবাসী।
১৫ টাকা বা ১০ টাকা যত কম দামেই চাল বিক্রি হোক না কেন, সেই চাল কেনার জন্য কি টাকার প্রয়োজন হবে না। মানুষের হাতে তো কোন টাকা নেই। চাল কিনবে কি দিয়ে। তারা তো সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে।
হাওরাঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি উঠেছে জোরেসুরে। সরকারের পক্ষ থেকে যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা পর্যাপ্ত নয় বলে দাবি করেছেন অনেকে। আমরা পর্যাপ্ত বরাদ্দের দাবি জানাই।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, ফসল রক্ষা বাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি আর ঠিকাদারেরা মিলে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করার কারণেই তো আজ হাওরবাসী নিঃস্ব। এই ত্রিশক্তি একজোট হয়ে একটা স্থায়ী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে সুনামগঞ্জে। বছরের পর বছর তারা হাওরের বাঁধ নির্মাণের নামে সাগরচুরি করে চলেছে।
ঠিকাদার বাঁধের কাজ করবে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে, কিন্তু তারপরও সময় বাড়িয়ে নিয়েছিল ৩১ মার্চ পর্যন্ত। কিন্তু কই, সেই সময়ের মধ্যেও তো বাঁধের কাজ করেনি তারা। বরং কৃষকদের প্রতি তারা উপহাস করেছে।
হাওরাঞ্চলের একটি কথা প্রচলিত আছে- পাউবো’র দুর্নীতিবাজরা বাঁধের মাটি কাটে অফিসে বসে কলম দিয়ে। কত বড় ধোঁকাবাজ পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা সেটা আমরা অতীতে দেখেছি। খাতাপত্রে তাদের হিসাব নিকাশে কারচুপি নেই, ধীরস্থির মস্তিষ্কে দুর্নীতি করেছে, অনিয়ম করেছে ঠিকাদারদের সাথে জোট বেধে। আমরা এই দুর্নীতিবাজদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
তাই সুনামগঞ্জকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করা সরকারের দায়িত্ব। আমরা মনে করি এতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে না। বরং এই দুর্গতি থেকে মুক্তি পাওয়ার মাধ্যমে তারা প্রমাণ করবে- সরকার দুর্যোগ মোকাবেলায় কত সফল। এতে সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।