1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩:৪৪ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

হাওরের জলজ জীববৈচিত্র্য বাঁচাতে জরুরি ব্যবস্থা নিন

  • আপডেট সময় শনিবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৭

সুনামগঞ্জের হাওরে মাছ ও জলজ প্রাণীর অস্বাভাবিক মড়ক এবং পানির গুণাগুণ নষ্ট হওয়ায় সরকারের বিভিন্ন দফতরের গবেষকদল হাওরে কাজ শুরু করেছেন। দু’টি গবেষণা দল একাধিক হাওর পরিদর্শন করে জানিয়েছেন এমোনিয়া গ্যাস বৃদ্ধি, অক্সিজেন ও পিএইস অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় মাছ মারা যাচ্ছে এবং পানি দূষিত হচ্ছে। পানিদূষণ রোধে মন্ত্রণালয় থেকে ক্ষতিগ্রস্ত তিনটি উপজেলায় চুন ও জিওলাইট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
মাছের মড়ক বিষয় নিয়েই হাওরে গবেষণায় নেমেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের গবেষণা দল। গত সপ্তাহে কাজ করে চলে গেছে আরেকটি দল। তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন মাছের মড়ক ও পানি দূষণের প্রকৃত কারণ জানতে হলে আরো ১০-১৫ দিন সময় লাগবে। দলটি আরো জানিয়েছে, বিশ্ব ঐতিহ্য টাঙ্গুয়ার হাওরে মাছ ও জলজ প্রাণী মারা গেলেও অন্য হাওরের তুলনায় তা কম। তবে হাওরের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান তাঁরা।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন, মৎস্য অধিদপ্তর এবং প্রাণিসম্পদ অফিস জানায়, গত ১৬ এপ্রিল রাতে কালবৈশাখী ঝড় হয়। পরদিন থেকেই মাছ মরা শুরু হয়। জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়ার হাওরে প্রথমে মাছ মরার কথা জানায় মৎস্য অফিস এবং সেখানে প্রথমে চুন ও জিওলাইট ছিটানো হয়। জেলার প্রথমেই এই উপজেলার নলুয়ার হাওরটি বাঁধ ভেঙে কাচা ধান নিয়ে তলিয়ে যায়। পরদিন জেলার সকল হাওরেই কম বেশি মাছ মরতে থাকে। ১৮ এপ্রিল থেকে মাছের মড়কের পাশাপাশি হাওরে দুঃসহ গন্ধ বেরুতে থাকে। কাঁচা ধানের পচা গন্ধ ও মাছ মরে পচে যাওয়ার গন্ধ ভয়াবহ রূপ নেয়। হাওরঘেরা গ্রামের বাসিন্দারা তীব্র দুর্গন্ধের কারণে চলাফেরা করতে পারছেন না। এই সময় মাছের সঙ্গে শামুক, জোঁক, শাপসহ নানা জলজ প্রাণীও মারা যায়। যা হাওরের জীববৈচিত্র্যের উপর সুদূর প্রসারি প্রভাব পড়বে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
জেলায় প্রথমেই মাছের মড়ক অনুসন্ধানে নামে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ময়মনসিংহ। তাঁরা গত সপ্তাহে নেত্রকোণা ও সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার বিভিন্ন হাওরে মাছের মড়ক অনুসন্ধান করে এমোনিয়া গ্যাসের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ও অক্সিজেন কমে যাওয়ার কথা জানান।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট চাঁদপুরের ও নদীকেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মাসুদ হোসেন খানের নেতৃত্বাধীন একটি দল শুক্রবার পরিদর্শনে নামে। এই তিনটি দল ওইদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সদর উপজেলার দেখার হাওর, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওর এবং তাহিরপুর উপজেলার মাটিয়ান হাওর পরিদর্শন করে। দলটি হাওরের পানির গুণাগুণ পরীক্ষায় পানির নমুনা সংগ্রহ ও মরা মাছের নমুনা সংগ্রহ করে। শুক্রবার সন্ধ্যায় এই দলটি সুনামগঞ্জ ত্যাগ করে। এ সময় দলের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মাসুদ হোসেন খান জানান, হাওরের পানি পরীক্ষা ও মরা মাছ পরীক্ষা করে প্রাথমিক কারণ হিসেবে আমরা দেখেছি হাওরে অস্বাভাবিক অক্সিজেন কমে যাওয়া এবং মাত্রাতিরিক্ত এমোনিয়া গ্যাসের আধিক্য। অন্য কোন কারণ আছে কি না তা জানতে আরো বিশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার দরকার। সেই পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে ১৫-২০ দিন সময় লাগবে।
একই সময়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব সৈয়দ মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আরেকটি প্রতিনিধি দল পানির গুণাগুণ পরীক্ষা ও মাছের মহামারির কারণ অনুসন্ধানে নামে। দলটি বিশ্ব ঐতিহ্য রামসার সাইট টাঙ্গুয়ার হাওর, মাটিয়ান হাওর, শনির হাওর এবং খরচার হাওরের বিভিন্ন পয়েন্টে পানির গুণাগুণ পরীক্ষা করে এমোনিয়া গ্যাসের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, পানিতে পিএইস ও অক্সিজেন অস্বাভাবিক কম। ওই দলটি টাঙ্গুয়ার হাওর যেহেতু বিশ্ব ঐতিহ্য সে কারণে আরো গুরুত্ব দিয়ে কাজ করার কথা জানায়।
শুক্রবার সন্ধ্যায় সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের প্রতিনিধি দলের প্রধান যুগ্ম সচিব সৈয়দ মেহেদী হাসান জানান, হাওরে পানি পরীক্ষা করেছি, জেলেদের সঙ্গে কথা বলেছি। পচা ধান ডুবে যাওয়ার কারণে পচে পানির গুণাগুণ নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি আরো জানান, টাঙ্গুয়ার হাওরে পানি পরীক্ষা করে দেখেছি, যেখানে অন্য হাওরের তুলনায় গুণাগুণ ভালো এবং মাছও মরেছে কম। এমোনিয়া গ্যাস ও পিএইস এর মাত্রা বৃদ্ধি এবং অক্সিজেন অস্বাভাবিক কমে যাওয়ার কারণেই মাছ মরে যাচ্ছে এবং পানি দূষিত হচ্ছে। এ সময় স্থানীয়রা জানিয়েছেন মরা মাছ খাওয়ায় তারা ডায়রিয়ায় ভোগছেন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে উপ-পরিচালক মো. রমজান আলী জানান, হাওরাঞ্চলের মানুষকে মাইকিং করে মাছ খেতে নিষেধ করেছি। মাছ ধরাও নিষিদ্ধ করেছি।
মাছের মড়ক বিষয় নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের প্রধান প্রফেসর মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে আরেকটি দল গত শুক্রবার সন্ধ্যায় সুনামগঞ্জ এসে পৌঁছেছে। হাওরের ফসল পচে গিয়ে মাছসহ জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ মরে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করবে এই দলের প্রতিনিধিবৃন্দ। তারা সঙ্গে পরীক্ষার জন্য নানা যন্ত্রপাতিও নিয়ে এসেছেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রফেসর মনিরুজ্জামান জানান, আমরা খবর পেয়েছি সম্প্রতি হাওরের পানির গুণাগুণ নষ্ট হয়ে গেছে। মারা যাচ্ছে জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী। কতটুকু নষ্ট হয়েছে এবং এই পানি ব্যবহার করলে কি কি ক্ষতি হতে পারে গবেষণা করব আমরা। তাছাড়া মাছের মাইক্রোস্কোপিক যে অগ্রানিজম আছে সেগুলি এখানে বর্তমান আছে কি না পানির স্যাম্পুল নিয়ে গিয়ে আমরা বিশেষভাবে পরীক্ষা করব। এসব বিষয়ে আমরা অধিকতর গবেষণা করে প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন জমা দেব যাতে সরকার পদক্ষেপ নিতে পারে।
এই দলের সহকারি প্রধান ড. আজমল হোসেন ভূইয়া জানান, আমরা শোনেছি এখানের হাওরের পানির গুণাগুণ নষ্ট হয়ে গেছে। পানির গুণাগুণ পরীক্ষা করে পানির কোয়ালিটি কোন পর্যায়ে আছে তা দেখব। এবং ডিজেল অক্সিজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড, ফসফেট ফসফরাস সহ নানা প্যারামিটার আমরা পরীক্ষা করে দেখব। আমাদের অনুমান হাওরের জলজ পরিবেশে এমোনিয়া গ্যাসের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণেই এই সমস্যা হয়েছে।
আমরা হাওরবাসী আশা করছি, জেলার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ রক্ষায় বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল পেয়ে সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন সহজে। যত তাড়াতাড়ি বৈজ্ঞানিক ফলাফল সংশ্লিষ্টরা পাবেন, তত তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নিলে আমাদের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ রক্ষা পাবে। আমরা জেলাবাসী তাকিয়ে আছি সরকারি পদক্ষেপের দিকে। আশা করি, জনবান্ধব সরকার এ ব্যাপারে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com