1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০১:৪৬ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

ত্রাণ সচিবের ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৭

বর্তমান সরকার উন্নয়নের সরকার, কৃষি ও কৃষকবান্ধব সরকার। কিন্তু এই সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে কিছু আমলা। যেমনটি করেছেন দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ‘মাননীয়’ সচিব মো. শাহ কামাল। তার কাণ্ডজ্ঞানহীন বক্তব্য, মন্তব্য বিব্রতকর।
বুধবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এই সচিব সঞ্চালকের দায়িত্ব নিয়ে সুনামগঞ্জকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবিতে আন্দোলনকারীদের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলি। দেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নামে একটা আইন আছে। এই আইনের ২২ ধারায় বলা হয়েছে কোন এলাকার অর্ধেকের উপরে জনসংখ্যা মরে যাওয়ার পর ওই এলাকাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করতে হয়। না জেনে যারা এমন এমন সস্তা দাবি জানায় তাদের কোনপ্রকার জ্ঞানই নেই।’
শাবাশ! আপনার দেশপ্রেম দেখে আমরা বিমোহিত। আপনি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনের ২২ ধারার কথা বলছেন। ওই ২২ ধারার কোন জায়গায় বলা হয়েছে যে, কোনো এলাকাকে দুর্গত ঘোষণা করতে হলে অর্ধেকের উপরে জনসংখ্যা মরে যেতে হবে?
আমরা দেখেছি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন ২০১২-এর ২২ ধারার কোন উপধারায় দুর্গত এলাকা ঘোষণা করতে অর্ধেকের বেশি মানুষ মারা যাওয়ার কোন শর্তের কথা কোথাও উল্লেখ নেই। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন ২০১২-এর ২২ ধারায় ৪টি উপধারা রয়েছে। উপধারা এক-এ বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি স্বীয় বিবেচনায় বা ক্ষেত্রমত উপধারা তিন-এর অধীন সুপারিশ প্রাপ্তির পর এই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে, দেশের কোন অঞ্চলে দুর্যোগের কোন ঘটনা ঘটিয়াছে যাহা মোকাবেলায় অতিরিক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং অধিকতর ক্ষয়-ক্ষতি ও বিপর্যয় রোধে বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করা জরুরি ও আবশ্যক। তাহা হইলে সরকারি গেজেটের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করিতে পারিবেন। উপধারা দুই-এ কোন অঞ্চলে সংঘটিত মারাত্মক ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলায় অতিরিক্ত ব্যবস্থা গ্রহণসহ উক্ত দুর্যোগের অতিরিক্ত ক্ষয়-ক্ষতি ও বিপর্যয় রোধে বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করা জরুরি ও আবশ্যক হইলে স্থানীয় পর্যায়ে কোন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি, কোন সংস্থা অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার নিমিত্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সরকারের নিকট সুপারিশ পেশ করিতে পারিবে। উপধারা তিন-এ উপধারা দুই-এর অধীন কোন সুপারিশ প্রাপ্ত হইলে জেলা প্রশাসক অনতি বিলম্বে বিষয়টির যথার্থতা যাচাইপূর্বক উহার মতামতসহ সংশ্লিষ্ট সুপারিশ সরকারের নিকট প্রেরণ করিবেন এবং সরকার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান সমন্বয় গ্রুপের সুপারিশ গ্রহণ করতঃ বিবেচ্য অঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট সুপারিশ পেশ করিতে পারিবেন। উপধারা চার এই ধারার অধীন দুর্গত এলাকা ঘোষণার বিজ্ঞপ্তি জারি করা হইলে উহার মেয়াদ অনধিক দুই মাস পর্যন্ত বলবৎ থাকিবে। যদি না উক্ত মেয়াদ অতিবাহিত হইবার পূর্বেই রাষ্ট্রপতি কর্তৃক উহা হ্রাস বৃদ্ধি বা প্রত্যাহার করা হয়।
কিন্তু সচিব মো. শাহ কামাল আপনি এ কী শোনালেন! এই ধারার কোনো উপধারায় দুর্গত এলাকা ঘোষণা করতে অর্ধেকের বেশি মানুষ মারা যাওয়ার কোন শর্তের কথা কোথাও উল্লেখ নেই। কেন এই মনগড়া তথ্য দিলেন, কার স্বার্থে এসব কথা আপনি বলছেন? কেন মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাচ্ছেন।
সচিব মহোদয় আপনি সুনামগঞ্জবাসীকে কটাক্ষ করে বক্তব্য দিয়েছেন। আপনাকে এ অধিকার কে দিলো? আপনি বলেছেন, ‘সুনামগঞ্জকে যারা দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন তাদের কোন জ্ঞানই নেই।’ সুনামগঞ্জবাসীকে আপনি অবজ্ঞার সুরে বলেছেন, কিসের দুর্গত এলাকা। একটি ছাগলও তো মারা যায়নি।
আপনি কী বলতে চাইলেন, কী বোঝাতে চাইলেন তা আমাদের বোধগম্য হল না। প্রশ্ন জাগে, যারা হাওরবাসীর পক্ষে আন্দোলন করছেন, দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন তাদের কি কোনো জ্ঞানই নেই?
প্রসঙ্গত, চলতি মৌসুমে ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে, কোথাও বাঁধ না হওয়ায় একের পর এক হাওর তলিয়ে যাওয়ার পর জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার লাখ লাখ বোরো চাষী সর্বস্বান্ত হয়ে গেলে জেলাজুড়ে বিভিন্ন ব্যক্তি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, কৃষক সংগঠন ও রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে জেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি ওঠে। এর ধারাবাহিকতায় গত ৫ এপ্রিল শহরের আলফাত স্কয়ারে সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ জনসভা করে জেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানান। একই দিন দুপুরে শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাঠাগার মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে জেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানান সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট ও সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আয়ূব বখত জগলুল। দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলন করে হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন। সংবাদ সম্মেলন করে জেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানান জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক সাবেক এমপি নাছির উদ্দিন চৌধুরী। জেলা আইনজীবী সমিতিও প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি দিয়ে সুনামগঞ্জ জেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। এদিকে গত ১৭ এপ্রিল রাতে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের সঙ্গে সুধীজনের মতবিনিময় সভায় কিশোরগঞ্জের সাংসদ রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সুনামগঞ্জসহ হাওরাঞ্চলকে দুর্গত এলাকার ঘোষণার দাবি জানান। এর আগে তার সংসদীয় এলাকায় কিশোরগঞ্জকে দুর্গত এলাকার ঘোষণার দাবি জানান ওই সাংসদ। বুধবার সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সুনামগঞ্জকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি রেখেছে। তাহলে আপনি সচিব মো. শাহ কামাল বলতে চান এই বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ‘কাণ্ডজ্ঞান নেই’।
কেন্দ্রীয় আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, দলে কাউয়া, ফার্মের মুরগী ঢুকে গেছে। পাশাপাশি আমরা দেখছি মন্ত্রণালয়েও কাউয়া ঢুকে বসে আছে। বেফাঁস কথা বলে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা করছে। আমরা দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামাল হোসেনের কা-জ্ঞানহীন বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমরা আশা করবো ভবিষ্যতে তিনি কাউকে হেয় করে, অবজ্ঞা করে কথা বলা থেকে বিরত থাকবেন। ভুল তথ্যের অপব্যাখ্যা দিয়ে বিভ্রান্ত করবেন না। আমরা স্পষ্ট ভাষায় আপনাকে বলে দিতে চাই, হাওরবাসীকে নিয়ে বিদ্রƒপ করবেন না, জনগণকে কটাক্ষ করবেন না। আপনি যে বিদ্যালয়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছেন সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জনগণের ট্যাক্সের টাকায় চলে। আপনি যে গাড়িতে চড়েন, যে বেতন পান সেই টাকাও জনগণের ট্যাক্সের টাকায়। জনগণকে হেয় করবেন না। মনে রাখবেন ক্ষমতা চিরস্থায়ী কখনোই নয়। আপনি যে ধৃষ্টতা দেখিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন তা সুনামগঞ্জবাসী তীব্রভাবে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন। আপনাকে সুনামগঞ্জবাসীর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। সুনামগঞ্জের ইতিহাসে আপনার কথা ঘৃণার অক্ষরে লিখা থাকবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com