কালের পরিক্রমায় এবারে এসেছে বৈশাখ। কিন্তু বৈশাখ আসলেও হাওরপাড়ের মানুষের মধ্যে বৈশাখের কোনো আনন্দ নেই, নেই উৎসবের রঙ। দুর্নীতিবাজ পাউবো’র কর্মকর্তা এবং অসাধু ঠিকাদার সিন্ডিকেট কৃষকের মুখের হাসি কেড়ে নিয়েছে, কেড়ে নিয়েছে মুখের গ্রাস। আজ হাওরজুড়ে হাহাকার, কৃষকের বুকফাটা আর্তনাদ। তাদের সান্ত¦না দেয়ার ভাষা আমাদের জানা নেই।
এবারে চৈত্রমাসেই পাউবো’র বাঁধ ভেঙে ফসল হারিয়েছেন হাওরপাড়ের মানুষ। বোরো ধান হারিয়ে হাজার হাজার কৃষক করছেন আহাজারি। চোখে তাদের অন্ধকার। এর দায় পাউবো এবং ঠিকাদারদের। এছাড়া প্রকৃতিও এবার আমাদের সহায় হয়নি এ কথাটিও সত্য। ভারি বৃষ্টিপাত, পাহাড়ি ঢল যেমন বোরো ধানের সর্বনাশ করেছে, তেমনি শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে নষ্ট হয়েছে রবিশস্য। এমন অবস্থায় হাওরে চলছে দুর্দিন। নিঃস্ব কৃষক তার শেষ সম্বলটুকুও বিক্রি করে দিচ্ছেন। অনেকে কাজের সন্ধানে ছুটছেন গ্রাম থেকে শহরে, শহর থেকে নগরে। দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। খোলাবাজারে চাল বিক্রি হলেও সবার কপালে তা জুটছে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার দেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন করছে। কিন্তু সরকারের সব সাফল্য ম্লান করে দিতে চাচ্ছে কিছু দুর্নীতিবাজ। ফসল রক্ষা বাঁধের জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয় না। কৃষক কাঁদলেও, হাসে পাউবো’র দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, ঠিকাদাররা। বাঁধের কাজ না করলেও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও ঠিকাদার তাদের ষোলআনাই পকেটে ঢুকিয়ে নেয়। এবারো এর ব্যতিক্রম হয়নি। প্রভাবশালী ঠিকাদাররা সিন্ডিকেট তৈরি করে সবই কেড়ে নিয়েছে। তাদের কোটি টাকা লাভের জন্য, কৃষকের হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হল। আমরা এই দুর্নীতিবাজদের ধিক্কার জানাই। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
আমরা জানি, এখনো কৃষিই দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। ৮০ শতাংশ মানুষ এখনো কৃষির ওপর নির্ভরশীল। হাওর অঞ্চল বিপন্ন হলে পুরো দেশই বিপন্ন হয়ে পড়বে। তাই জরুরি ভিত্তিতে সামগ্রিক পরিকল্পনা নিয়ে হাওর অঞ্চলের কৃষিজীবীদের রক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বাঁচিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে হবে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলতে চাই, নতুন বছর হোক নতুন দিনের সূচনা। ভেঙে না পড়ে আবার বুক বেঁধে দাঁড়াতে হবে কৃষকদের। রবি ঠাকুরের কাছ থেকে ঋণ করে বলিÑ
‘বুক বেঁধে তুই দাঁড়া দেখি, বারে বারে হেলিস নে ভাই!
শুধু তুই ভেবে ভেবেই হাতের লক্ষ্মী ঠেলিস নে ভাই॥
একটা কিছু করে নে ঠিক, ভেসে ফেরা মরার অধিক-
বারেক এ দিক বারেক ও দিক, এ খেলা আর খেলিস নে ভাই॥
মেলে কিনা মেলে রতন করতে তবু হবে যতনÑ
না যদি হয় মনের মতন চোখের জলটা ফেলিস নে ভাই!
ভাসাতে হয় ভাসা ভেলা, করিস নে আর হেলাফেলা
পেরিয়ে যখন যাবে বেলা তখন আঁখি মেলিস নে ভাই