1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৬:১০ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

পাউবো ঘেরাও কর্মসূচিতে কৃষক-জনতার ঢল : পুলিশি বাধায় রাজপথে বিক্ষোভ সমাবেশ

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৭

বিশেষ প্রতিনিধি ::
খরচার হাওরপাড়ের ফসলহারা কৃষক রজব আলী। ‘হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও’ আন্দোলনের ডাকে এই ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক এলাকার আরো ১০-১৫জন কৃষককে নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে এসেছিলেন। হাফশাদা ময়লা শার্ট ও লুঙ্গি পরিহিত এই কৃষক মাথায় লালপট্টি বেঁধে মিছিলে নামেন। তার অবয়বে ছিল দ্রোহের প্রতিচ্ছবি। তিনি হাত উঁচিয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন ‘সুনামগঞ্জকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করো, করতে হবে’। ঠিক তাঁরই পেছনে লালপুর গ্রামের বৃদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিমও লুঙ্গি আর পাঞ্জাবি পরে ঘেরাও কর্মসূচিতে এসেছেন। তাঁর হাতে একটি ছোট লাঠি। কখনো লাঠি উঁচিয়ে ধরে, কখনো নিচে শব্দ করে তিনিও কণ্ঠে তুলে নিয়েছেন এই স্লোগান।
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া সবাই ঘৃণা ছুড়ে প্রতিবাদ করেছেন দুর্নীতিবাজ পাউবো কর্মকর্তা, পিআইসি ও ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে। ফসলহারানোর ঘটনায় তাদেরকে দায়ি করে বিচার দাবি করেছেন। এই দুই কৃষকের মতো জেলার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে বোরো ফসলহারানো নিঃস্ব কৃষক দলে দলে এসেছিলেন ঘেরাও কর্মসূচিতে। রগচটা সূর্যের চোখরাঙানি উপেক্ষা করে সকাল থেকে তারা আলফাত স্কয়ারে (ট্রাফিক পয়েন্ট) জড়ো হোন। এসেছিলেন নারীরাও। তাদের মাথায় ছিল লাল কাপড় বাঁধা। বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যানার নিয়ে আসেন কৃষক-জনতা। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলে কৃষক সমাবেশ। সংগঠনের নেতাদের বদলে মঞ্চে নিয়ে আসা হয় প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আগত কৃষকদের। লুঙ্গি-শার্ট-পাঞ্জাবি পরা এই কৃষকরা মঞ্চে ভিন্নরকম আলো ছড়িয়েছিলেন।
দুপুর সাড়ে ১২টার পর পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয় মুখে ঘেরাও উপলক্ষে রওয়ানা দেন হাজারো কৃষক-জনতা। সড়কের দু’ধারে থাকা সাধারণ মানুষ হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানান। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে শহর। শহরের কাজীর পয়েন্টে পৌঁছার পর পুলিশি বাধার মুখে পড়ে কৃষক-জনতার মিছিল। তখন উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এগিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন। পুলিশের বাধায় ঘটনাস্থলেই ক্ষুব্ধ কৃষক জনতা-সমাবেশে মিলিত হন। সমাবেশ চলতে থাকে আর স্লোগানও চলতে থাকে। শেষে আগামী দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান ও বিজন সেন রায়।
আলফাত স্কয়ারে কৃষক সমাবেশে হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ানের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব সাংবাদিক বিন্দু তালুকদারের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন শিক্ষাবিদ পরিমল কান্তি দে, নারীনেত্রী শীলা রায়, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাজী নূরুল মোমেন, দোয়ারাবাজার কৃষক নেতা আব্দুল আওয়াল, অমর চাঁদ দাস, জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মিসবাহ উদ্দিন, সঞ্চিতা চৌধুরী, জেলা উদীচীর সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, সাংবাদিক একে কুদরত পাশা, এমরানুল হক চৌধুরী, মাসুম হেলাল, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি তারেক চৌধুরী, জাগরণী স্কাউটস গ্রুপের সহ সম্পাদক আহসান রাজিব, আবিদ খান হৃদয়, জেলা খেলাঘরের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজু আহমেদ, দেওয়ান গিয়াস চৌধুরী প্রমুখ।
এদিকে ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশি বাধায় কাজীর পয়েন্টে সমাবেশে মিলিত হন আন্দোলনকারীরা। এখানে বক্তব্য রাখেন অ্যাড. সালেহ আহমেদ, অ্যাড. রুহুল তুহিন, অ্যাডভোকেট শেরেনূর আলী, সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল হক আফিন্দী, কৃষক নেতা রুহুল আমিন, সালেহীন চৌধুরী শুভ ও সাংবাদিক শামস শামীম।
আগামীদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান ও বিজন সেন রায়।
উপস্থিত কৃষক জনতার উদ্দেশ্যে তারা আগামী ১৫ এপ্রিল বিকাল ৪ ঘটিকায় বিক্ষোভ সমাবেশ, ২০ এপ্রিল জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান এবং ২৬ এপ্রিল পাউবো’র দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার কুশপুত্তলিকা দাহ এবং থুথু নিক্ষেপ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তারা অবিলম্বে সুনামগঞ্জকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য রেশনিং কার্ড চালু এবং সারা বছর খোলা বাজারে সরকারের উদ্যোগে চাল আটা বিক্রি, কৃষি ঋণ ময়কুফ ও বাঁধ নির্মাণে লুটপাটের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান।
ঘেরাও সমাবেশ ও কৃষক সমাবেশে বক্তারা বলেন, সুনামগঞ্জের লাখো কৃষক তার ফসল হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে। পাহাড়ি ঢলে একের পর এক বাঁধ ভেঙে জেলার প্রায় ৯০ ভাগ ফসলের ক্ষতি হয়েছে। খাদ্যসংকেটর মুখে পড়েছে কৃষক। বক্তারা জনপ্রতিনিধিদের নির্লিপ্ততায় তাদেরও কঠোর সমালোচনা করেন। তারা সারা বছর ১০ টাকা কেজিতে সকল কৃষকদের মধ্যে চাল বিক্রির আহ্বান জানান।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com