মোসাইদ রাহাত ::
বাংলা নববর্ষ বরণ বাঙালির প্রাণের উৎসব। পহেলা বৈশাখ সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দেয় আনন্দের রঙ। কিন্তু পাউবো’র বাঁধ ভেঙে সুনামগঞ্জের বোরো ফসলহানিতে এখানে বৈশাখী আনন্দ বলে কিছু নেই, নেই বৈশাখের রঙ। পাউবো’র দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, ঠিকাদার সিন্ডিকেট কেড়ে নিয়েছে কৃষকের মুখের হাসি। আজ হাওরজুড়ে হাহাকার। ফসল হারিয়ে অনেক কৃষক হয়ে পড়েছেন দিন মজুর। কৃষক কাজের সন্ধানে গ্রাম থেকে শহরে, শহর থেকে নগরে ছুটে চলছেন। ছেলে-মেয়ে নিয়ে দু’বেলা খাবারের আশা ও মহাজনের কাছ থেকে মোটা টাকার ঋণ পরিশোধের জন্য কৃষকরা আর কোনো বিকল্প পথ পাচ্ছেন না।
সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের কালীবাড়ি মোড়, সাহেব বাড়ি ঘাট, ষোলঘর পয়েন্ট, দিরাই রাস্তা মোড়সহ বিভিন্ন সড়কের পাশে সকাল থেকে বসে আছেন দিনমজুররা। তবে তারা সবেমাত্র দিনমজুরের কাজে যোগ দিয়েছেন। তারা আগে কৃষি কাজ করতেন। অনেকের ধানি জমিও ছিল। কিন্তু ফসল হারিয়ে আজ তারা নিঃস্ব।
কথা হয় হাশেম আলী’র সাথে। তিনি প্রকৃতপক্ষে একজন কৃষক। তার আমার ৬ কিয়ার জমি রয়েছে। কিন্তু বাঁধ ভেঙে সব ফসল তলিয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমার যা আছিল সব ঢলে নিয়ে গেছে। ঘরে ৩ সন্তান। তাদের খাবারের কিছু নাই। তাই এই দিনমজুরের কাজে যোগ দিলাম। কিন্তু কাজ নাই। আমরা অসহায়।
শহরের কালীবাড়ি মোড়ে বসে আছেন কৃষকের স্ত্রী মরিময় বেগম মরিয়ম বেগম। তার স্বামী মারা গেছেন অনেক আগে। দুই কিশোর পুত্রকে নিয়ে ঋণ করে স্বামীর রেখে যাওয়া জমিতে বোরো লাগিয়েছিলেন। কিন্তু সেই ফসল তলিয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমার স্বামী নাই। আমি অনেক কষ্টে টাকা ঋণ করে ধান লাগাইছলাম। কিন্তু আমাদের সর্বনাশ হইছে। আমার দুই সন্তান। তাদের খাবার দিতে পারি না। মহাজনরা টাকার জন্য চাপ দিতাছে। খাইতে পারিনা ঋণ পরিশোধ করমু কেমনে।
দিনমজুর রউফ মিয়া বলেন, আমি এই লাইনে আছি ৪ বছর হবে। নতুনদের জন্য আমরা পর্যাপ্ত দাম পাইনা। আগে যেখানে পাইতাম ৫০০-৭০০ টাকা এখন পাই ৩০০-৫০০ টাকা।
দেখার হাওরপাড়ের কৃষক আতাউর রহমান বলেন, ফসল হারিয়ে আজ দিনমজুর হইছি। আমার বাপ-দাদায়ও কোনোদিন এই কাম করছে না। আমরা বাঁচমু কিলা বুঝরাম না। যতদিন আইতাছে কষ্ট বাড়তাছে। আমরার ভাগ্য লইয়া দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, ঠিকাদার ছিনিমিনি খেলছে। এরা আমরার মুখে খানি কাইড়া নিছে। আল্লায় এরার বিচার করবো।