1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ১০:১৩ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

বাঁধের অর্থ ‘লোপাট হওয়ায়’ হাওর তলিয়ে সর্বস্বান্ত কৃষক

  • আপডেট সময় সোমবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৭

সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
পাহাড়ি ঢলে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওরগুলো তলিয়ে যাওয়ার জন্য বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের অর্থ লোপাটকেই দায়ী করা হচ্ছে।
রোববার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করা হয়। একই দিনে সুনামগঞ্জে অর্থ প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নানও বলেছেন, বাঁধ মেরামতে গাফিলতির অভিযোগ স্থানীয়দের কাছে পেয়েছেন তিনি।
সম্প্রতি পাহাড়ি ঢলে ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অধিকাংশ হাওর প্লাবিত হয়ে কৃষকের বোরো ধান তলিয়ে গেছে।
‘হাওর অ্যাডভোকেসি প্ল্যাটফর্ম’ নামে একটি সংগঠনের উদ্যোগে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে হাওর অঞ্চল থেকে উঠে আসা তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মোস্তফা জব্বার বলেন, অন্যান্য বছর ফসলহানি হলেও এবারের ক্ষয়ক্ষতি ব্যতিক্রম।
“আগের বছরগুলোতে হাওর পানিতে ডুবে গেলেও ধান পাকা থাকে। তখন পানির তল থেকে হলেও কিছু না কিছু ধান কেটে আনা হয়। এবার ধানক্ষেতে থোর আসেনি। এমন বিপর্যয় আমি দেখিনি।”
হাওর অ্যাডভোকেসির যুগ্ম আহ্বায়ক শরিফুজ্জামান জানান, তারা গত ১১ থেকে ১৩ মার্চ সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওর পরিদর্শন করে বাঁধ সংস্কারের কাজে অব্যবস্থাপনা দেখেছেন।
ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ, বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়া, অনেক বাঁধের কাজ শুরু না হওয়া, সংস্কারের উদ্যোগ না নেওয়া, অপ্রয়োজনীয় জায়গাতে বাঁধ নির্মাণসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও অসঙ্গতির কথা সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়।
বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মোস্তফা জব্বার বলেন, “একটি জেলাতেই (সুনামগঞ্জ) যদি বছরে ৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়ে থাকে, তাহলে বলব না টাকার কোনো অভাব ছিল।
“বিষয়টা খুব ¯পষ্ট যে দুর্নীতির মধ্যে দিয়েই টাকাগুলো আত্মসাত করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ঠিকাদার পর্যন্ত তাদের মাধ্যমে এই টাকাগুলো লুটপাট হচ্ছে।”
তিনি বলেন, হাওরে বহু বিল রয়েছে, এসব বিলের সঙ্গে খালগুলো যুক্ত। অকাল বন্যার পানি ভারত থেকে বাংলাদেশে আসে। পাহাড়ি ঢলে সুরমা, কুশিয়ারা, ঝুনুসহ অন্যান্য নদী দিয়ে পানি বাংলাদেশে নেমে আসে। বর্তমানে এসব নদী পাহাড়ি ঢলের পানি বহনের ক্ষমতা নেই। সবগুলো নদী ভরাট হয়ে গেছে।”
হাওরের ফসল তলিয়ে যাওয়ার সমস্যার কোনো সমাধান গত ৪৬ বছরেও পানি উন্নয়ন বোর্ড খুঁজে না পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন মোস্তফা জব্বার। এই সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান চান তিনি।
প্রতিমন্ত্রী মান্নান সুনামগঞ্জে সাংবাদিকদের বলেন, “পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ নির্মাণের গাফিলাতির বিষয়ে এখানকার সাধারণ মানুষের জনমত অত্যন্ত প্রবল। আমি গাফিলতির বিষয়টি খতিয়ে দেখার এবং এজন্য কারা দায়ী তা নির্ধারণে একটি বড় কমিটি করার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করব।”
শরিফ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, এবার সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জে এক লাখ ৭১ হাজার ১১৫ হেক্টর জমির ধান পানিতে ডুবে গেছে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জেরই এক লাখ ৩০ হাজার হেক্টর ধানের জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া নেত্রকোনায় ৩৮ হাজার ১১৫ ও কিশোরগঞ্জে ২০ হাজার হেক্টর ধানের জমি পানিতে ডুবে গেছে। এতে ওই তিন জেলায় ২ কোটি ৫ লাখ মন ধান কৃষকের ঘরে উঠছে না। এতে মোট ক্ষতির পরিমাণ ২ হাজার ৫৩ কোটি টাকা।
মোস্তফা জব্বার বলেন, হাওরগুলো তলিয়ে যাওয়ায় এবার দেশে ধান উৎপাদন ২৫ শতাংশ কম হবে। “হাওর অঞ্চলের দুই কোটি মানুষ তাদের নিজেদের খাওয়া-দাওয়া পুরো এক বছর জোগাড় করতে পারবে না। দেশের উৎপাদিত ধানের ২৫ শতাংশ হাওর এলাকা থেকে আসে। এর মানে হচ্ছে দেশের ২৫ ভাগ ধান এবার উৎপাদিত হল না।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জের দুই কৃষক ধান হারানোর কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের ডিঙ্গাপুতা হাওর এলাকার কৃষক নারায়ণ চন্দ্র দাস বলেন, “আমি জন্ম নেওয়ার ফর (পর) এমন পাইছি না, ধানের মধ্যে ফুল ধরছে, এর আগে এমন অবস্থায় পানি।
“ধান ক্ষেত ঘাসের মতো অবস্থায় আছে, যদি ফাইক্কা (পাকা) ডুবতো, তাহলে পানির নিচ থেকে হইলেও ডুবাইয়া ডুবাইয়া কিছু তুলতা পারতাম।”
হাওর প্লাবিত না হলে এবছর আড়াই হাজার মণ ধান তুলতে পারতেন বলে জানান নারায়ণ। এই ধান দিয়ে তাদের পরিবারের ২৮ জন সদস্যের খাওয়া-দাওয়া এবং সারা বছরের ব্যয় এবং পরবর্তী বছরের বোরো আবাদের ব্যবস্থা হত। কিন্তু এখন তিনিসহ এই অঞ্চলের কৃষকরা অসহায় হয়ে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছে বলে জানান নারায়ণ।
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার হালির হাওর এলাকার কৃষক মাফিকুল ইসলাম বলেন, “আমি এবার নিজের ও নগদ জমায় অপরের জমিসহ মোট ৬ একর জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। কিন্তু বাঁধ ভেঙে সব শেষ হয়ে গেছে। ধার-দেনা করে চাষাবাদ করেছিলাম। আগামী ১৪ মাস আমাদের ঘরে আর কোনো ফসল উঠবে না। ধার-দেনা পরিশোধ ও জীবন ধারণের কোনো উপায় খুঁজে পাইতেছি না।”
মোস্তফা জব্বার বলেন, “এবার হাওরের মানুষ দুর্ভিক্ষে পড়বে। এক সময় চৈত্র মাসেই হাওরের মানুষ কচু-লতা-পাতা ও আটার রুটি খেয়ে জীবন ধারণ করত। দুর্ভাগ্যক্রমে এই সময়েই এবার তাদের উপর আঘাতটা আসল।
“এই আঘাত মোকাবেলা করার মতো সামর্থ্য হাওর এলাকার মানুষের নেই। তাদের জীবিকা একটাই সেটা হচ্ছে বোরো মৌসুমে ধান চাষ।”
হাওরের কৃষকদের এই বিষয়টি জাতীয় পর্যায়ে আলোচিত হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
অর্থ প্রতিমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, হাওরে যেসব কৃষকের ফসল নষ্ট হয়েছে তাদের ঋণ মওকুফে সরকারকে সুপারিশ করা হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com