জয়ন্ত সেন ::
শাল্লায় একে একে তলিয়ে গেল সবগুলো হাওর। গতকাল শনিবার সকালে সুলতানপুরের মাউতি বেড়িবাঁধের আফার উপচে ছায়ার হাওরে পানি ঢুকে। এর আগে নিয়ামতপুর ও জয়পুর গ্রামের মধ্যে বাঘারিয়া (বাঘরাধরার অংশ বিছনাইর ও চরের দাইড়) বাঁধটি ভেঙে ছায়ার হাওরে পানি প্রবেশ করে। এ হাওর রক্ষায় গত ৭ দিন যাবৎ কঠোর পরিশ্রম করে বিভিন্ন বেড়িবাঁধ ও পিআইসির বহু বাঁধে অর্ধশত গ্রামের কৃষকরা স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করেছেন।
একদিকে নদীর নাব্যতা কম, অন্যদিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে ক্রমশই নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছিল। নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণেই ছায়ার হাওর তলিয়ে যায়। কৃষকরা দায়ী করছেন পাউবো’র, ঠিকাদার ও পিআইসির দুর্নীতির কারণে এসব হাওর তলিয়ে গেছে। ৬ এপ্রিল বাহাড়া ইউপির হরিনগর গ্রামের শংকরের বাড়ি হতে পূর্ব হাটি ১শ’ ৬০ মিটার বেড়িবাঁধ এবং বাগেরহাটি বাঁধটি ভেঙে ভান্ডা বিল হাওরটি তলিয়ে যায়।
এলাকাবাসী জানান, ওই বাঁধে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোনো কাজ করেননি। একইদিনে মাচ্ছাকাড়া বাঁধ ও হবিবপুর ইউপি’র কাশিপুর বাঁধটি ভেঙে ঘিলুটিয়া হাওরটি তলিয়ে যায়। আরো তলিয়ে যায় উপজেলার শাল্লা ইউপি’র গোবর হাটি কুটিয়া, কৈয়ারবন, ছাকইর, লামরা, উহুরা, বরপুতা, খিল্লি, ও সোনাতলাসহ উপজেলার সব ক’টি হাওর।
গত ৩ এপ্রিল শ্রীহাইলের জোয়ারিয়ার ৮শ’ মিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে ৪৭৪ হেক্টর বোরো ফসল তলিয়ে যায়। এখানেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোনো কাজ করেনি বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
বেড়িবাঁধগুলোতে সজীব রঞ্জন দাশ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজ করার কথা ছিল। বাঁধের কাজে অনিয়ম-দুর্নীতির কারণেই বৈশাখ আসার আগেই চৈত্র মাসে হাওরগুলো তলিয়ে গিয়ে কৃষকদের আজ পথে বসতে হচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, শাল্লা উপজেলায় জনসংখ্যা রয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৭ জন। কৃষক পরিবারের সংখ্যা ৮ হাজার ৫৫৪টি, প্রান্তিক পরিবার ৫১৮টি, মাঝারি পরিবার ৬ হাজার ৮১৮টি, সচ্ছল পরিবার ৫৩২টি, ভূমিহীন ও বর্গাচাষী পরিবার রয়েছে ২ হাজার ৮৮৪টি। উপজেলায় ২২ হাজার হেক্টর বোরো জমি রয়েছে। এতে প্রায় পৌনে ২ লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপন্ন হয়।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার ড. আজিজুর রহমান বলেন, ‘শাল্লা উপজেলায় বোরো ফসলের শতভাগ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমরা এই রিপোর্ট উপ-পরিচালকের কার্যালয়ে পাঠিয়েছি। আশা করি এ রিপোর্ট মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার পর তালিকাভুক্ত হয়ে কৃষকেরা ক্ষতিপূরণ পাবেন।