1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০১:৩৬ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

এদের সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে : অনুপম মাহমুদ

  • আপডেট সময় রবিবার, ৯ এপ্রিল, ২০১৭

ইতিমধ্যে চৈত্র মাসে তুমুল বৃষ্টি দেখেছি সাথে শিলাখণ্ড। চৈত্রে সাধারণত এমন আবহাওয়া দেখে আমরা অভ্যস্ত নই। এই বৃষ্টিতে পেঁয়াজ, রসুন, ভুট্টা ও আলুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ধানের চারায় কেবল শীষ উঁকি দিচ্ছে কোথাও কোথাও। এই শিলাবৃষ্টিতে ধানের ফলনেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে নিশ্চিত। ধান কাটার আগে প্রতিবছর আমাদের হাওর এলাকার কৃষকদের নির্ঘুম রাত কাটে, বাঁধ ভেঙে উজান থেকে পানি এলো কিনা এই ভয়ে। ইতিমধ্যে আমরা জানতে পেরেছি সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলার বাঁধ ভেঙে ফসল তলিয়ে যাওয়ায় কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
পানি নিচের দিকে নামে, এটাই পানির ধর্ম। উজান থেকে নেমে আসা পানি বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে হাওরে অবস্থান করে ভাদ্র-আশ্বিন মাসের দিকে বিদায় নেয়। হাওর এলাকা একটা চায়ের কাপের পিরিচের মতো, যেখানে কয়েকমাস পানি জমে থাকে আর উজান থেকে পলি নিয়ে এসে ভাটির জমিকে করে উর্বর। এতে কৃষকের শ্রম ও সার কম লাগে।
জমিতে পলি জমায় হাওরে সত্যিই সোনা ফলে। উজানের দুই থেকে তিন ফসলের তুলনায় এখানে এক ফসলেই তার চেয়ে অনেক বেশি ফলন পাওয়া যায়। কিন্তু দুঃখের বিষয় প্রায় প্রতি বছর ভয়ে আর শঙ্কায় কাটে আমাদের দিন। গোটা বছরের অপেক্ষার পালা শেষ হয় ক্ষেতের ফসল ঘরে তুলতে পারলে। তা না হলে পন্ডশ্রম।
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এই সাত জেলার প্রায় ৩৪ উপজেলা বিস্তৃত ৪১১ ছোট বড় হাওর নিয়ে আমাদের ভাটি এলাকা। প্রায় আট হাজার বর্গ কিলোমিটার, অর্থাৎ দেশের প্রায় সাত শতাংশ।
হাওর এক বিচিত্র এলাকা। দেশের অন্য যে কোন এলাকা থেকে এটা সম্পূর্ণরূপে ব্যতিক্রম। এখানকার কৃষ্টি, সংস্কৃতি, জীবনযাত্রা, ভূ-প্রকৃতি, জলবায়ু, ভাষা, খাদ্যাভ্যাস, বাহন সব কিছুই ব্যতিক্রম। বছরের প্রায় চার মাস গোটা এলাকা থাকে পানিতে নিমগ্ন।
ভাটি এলাকার পেশা মূলত দুটি। ১. কৃষি, ২. মৎস্য আহরণ। কৃষিপণ্যের মধ্যে প্রধান হচ্ছে ধান। এছাড়া আছে গম, পাট, ভুট্টা, সরিষা, ধইঞ্চা, মরিচ, বাদাম। এই এলাকার ৯০ ভাগ মানুষ সরাসরি কৃষির ওপর নির্ভরশীল। তবে তাদের অধিকাংশ জমির মালিক নয়। আধিয়া ও বর্গা চাষ করে তারা টিকে আছে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে। কৃষি উৎপাদন ব্যয় যে হারে বাড়ছে সেই হারে কৃষক তার ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। মহাজন, দাদন, এনজিওর ক্ষুদ্রঋণ এর মায়াজালে বন্দী কৃষক তিন থেকে চার মাসের জন্য ৫০ শতাংশ হারে পর্যন্ত ঋণ নিয়ে থাকে।
সরকারি ও বেসরকারি তফসিলি ব্যাংকগুলো এখানে অপ্রতুল। শিক্ষা ও পর্যাপ্ত তথ্যবঞ্চিত প্রকৃত কৃষক এই সেবা পায় না। স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত কিছু সুবিধাবাদী ব্যক্তিবর্গ এই সুবিধাগুলো কুক্ষিগত করে রেখেছে। তাই প্রান্তিক কৃষক দাদনের ফাঁদে বন্দী হয়ে ক্রমেই নিঃস্ব হচ্ছেন।
যাবতীয় মানব সৃষ্ট প্রতিকূলতা এড়িয়ে যেতে পারলেও প্রকৃতির রুদ্র রোষের কাছে আমরা হাওরবাসী ভীষণ অসহায়। অসময়ে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ক্ষুদ্র তথা প্রান্তিক কৃষক, যারা কর্জ (ধার) করে চাষাবাদ করেন। সরকার প্রতি বছর তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নানা উদ্যোগ নিলেও খুব কাজে আসছে বলে মনে হয় না। প্রকৃতির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে না পারলেও তার গতিপথে একটু পরিবর্তন তো আনা যায়?
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড হাওর এলাকায় ডুবো বাঁধ নির্মাণ করার প্রক্রিয়া শুরু করলেও মাঠ প্রশাসনের উদাসীনতা ও ঠিকাদারদের অসৎ কর্মকা-ে সরকারি অর্থের বিপুল অপচয়ে লাভবান হচ্ছে কিছু অর্থলোভী নরপশু আর বঞ্চিত হচ্ছে হাওরবাসী।
অষ্টগ্রাম, ইটনা, মিঠামইন, নিকলীর, এমনকি সুনামগঞ্জের বন্ধুদের ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখলেই বোঝা যায়, কি নিদারুণ অস্থিরতায় কাটছে তাদের দিনরাত! মসজিদে গভীর রাতে ভেসে আসছে উদাত্ত আহ্বান, ‘আপনাদের ডালা, কোদাল নিয়ে বাঁধ বাঁচাতে এগিয়ে আসুন…।’ অমুক বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে…।
অথচ সরকারি ওয়েব পোর্টালে শোভা পাচ্ছে তাদের নানা কাজের ফিরিস্তি। যেমন বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর এর ওয়েবসাইট এর তথ্য অন্যুায়ী:
১। হাওর অঞ্চলের বন্যা ব্যবস্থাপনা ও জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন প্রকল্প (কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলার ২৯টি হাওরে বন্যা ব্যবস্থাপনা ও কৃষিসহ বিভিন্নভাবে আয়বৃদ্ধি কার্যক্রমের মাধ্যমে জীবনমান উন্নয়ন এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য) বাস্তবায়নকাল: ২০১৪-২০২২ প্রাক্কলিত ব্যয়: ৯৯৩৩৭.৭২ লাখ টাকা, অর্জন ৫.৫০%।
২। হাওর এলাকায় আগাম বন্যা প্রতিরোধ ও নিষ্কাশন উন্নয়ন প্রকল্প (৫২টি হাওরে আগাম বন্যা নিয়ন্ত্রণে বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত করার ফলে ২ লাখ ৮৯ হাজার ৯১১ হেক্টর জমির বোরো ফসল আগাম বন্যার কবল হতে রক্ষা পাবে) বাস্তবায়নে: বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বছর সময় বৃদ্ধির জন্য একনেক সভায় উপস্থাপনের প্রস্তুতি চলছে। বাস্তবায়নকাল: ২০১১-২০১৬। প্রাক্কলিত ব্যয়: ৭০৪০৭.৩৬ লাখ টাকা, অর্জন ১৭.৯০%।
৩। সিলেট বিভাগ ক্ষুদ্র সেচ উন্নয়ন প্রকল্প : বাস্তবায়নে: বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন। সেচ কাজের জন্য খাল খনন, পা¤প স্থাপন, বিদ্যুৎ সংযোগ ইত্যাদি কাজ করা হচ্ছে। ১৪৩৭৫ হেক্টর জমি সেচের আওতায় আসবে। প্রাক্কলিত ব্যয় : ১৩৮০৫.৯০ লাখ টাকা। বাস্তবায়নকাল: ২০১৪-২০১৯, অর্জন ৩৩%।
৪। কিশোরগঞ্জ হাওর ক্ষুদ্র সেচ উন্নয়ন কর্মসূচি : বাস্তবায়নে: বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন। সেচ কাজের জন্য খাল খনন, পাম্প স্থাপন, বিদ্যুৎ সংযোগ ইত্যাদি কাজ করা হয়েছে। প্রকল্প ব্যয়: ৪৫৩.৯৫ লাখ টাকা । বাস্তবায়নকাল: ২০১২-২০১৫, সমাপ্ত (১০০%) ।
৫। উজানচর-বাজিতপুর-অষ্টগ্রাম সড়ক উন্নয়ন (বাজিতপুর-অষ্টগ্রাম অংশ) প্রকল্প বাস্তবায়নে : সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে অষ্টগ্রাম উপজেলার সাথে কিশোরগঞ্জ জেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে, প্রাক্কলিত ব্যয়: ১৩৪২১.৮৫ লাখ টাকা, বাস্তবায়নকাল: ২০১১-২০১৬, অর্জন ৮১.০০%।
উল্লেখিত প্রকল্প সমূহের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ২ নম্বর প্রকল্পটি। দুঃখের বিষয়, ২০১১-২০১৬ সাল পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হওয়ার কথা থাকলেও যথাসময়ে অর্জন টেনেটুনে ৩৩% অর্থাৎ পাস!
আর এটা বাস্তবায়নের জন্য আরো দুই বছর সময় চাওয়া হয়েছে। তার মানে বাজেটও বাড়বে, এতে লাভ হবে কার? বলাই বাহুল্য। এই প্রকল্পেই প্রমাণ হয় আমাদের হাওর এলাকার ২ লাখ ৮৯ হাজার ৯১১ হেক্টর জমির বোরো ফসল আগাম বন্যার ঝুঁকিতে থাকে। এটা জানার পরেও কেন নির্ধারিত সময়ে তা বাস্তবায়ন হয়নি? কে বা কারা এর জন্য দায়ী, হাওরের সন্তান হিসেবে এটা আমার জানার অধিকার আছে নিশ্চয়ই…
দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ট্যাক্স দেবো, সেই টাকায় জমিদারী করবে রাজকর্মচারী, আবার বাঁধ ভেঙে যাবে এই আশঙ্কায় রাত জেগে পাহারা দিতে হবে আমাদেরই, তাহলে এই কর্মচারী পোষার আবশ্যকতা কোথায়? এদের সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
[লেখক : উন্নয়ন ও অধিকার কর্মী, মোহাম্মদপুর, ঢাকা]

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com