স্টাফ রিপোর্টার ::
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের অন্তর্গত সুনামগঞ্জ-বেতগঞ্জ ৬ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে প্রায় আড়াই কিলোমিটার সড়কের বেহাল অবস্থা। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে কোনো মেরামত কাজ হয়নি বলে জানান স্থানীয়রা। এ ভাঙাচুরা সড়ক দিয়ে যাতায়াত করেন ৩ ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। এতে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন যাতায়াতকারীরা।
শুক্রবার সরেজমিনে গেলে এ সড়কের উন্নয়নের দাবি জানান এলাকাবাসীসহ যানবাহনের চালকরা।
তবে এলজিইডি’র সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘শহরের শেষ অংশ থেকে বেতগঞ্জ বাজার পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার সড়ক। এ সড়কের উন্নয়ন কাজের জন্য প্রায় ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। সড়কের বেশিরভাগ অংশ বিটুমিনাস কাজ হবে। বেতগঞ্জ বাজারের অংশে ৩শত মিটার শুধু ঢালাইয়ের কাজ হবে। প্রথমবার দরপত্র আহ্বান করে আমরা ঠিকাদার পাইনি। এখন ২য় বার দরপত্র আহ্বান করেছি। দরপত্রের ঝামেলা শেষ হলেই কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।’
কুরবাননগর, মোল্লাপাড়া ও মান্নারগাঁও ইউনিয়নের লাখো মানুষ ও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন যাতায়াত করে থাকেন এ সড়ক দিয়ে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকার রোগীরাও এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। এতে নানা সমস্যা হয় রোগীদের। এ সড়কজুড়ে রয়েছে ৪টি সেতু। সেতুর উভয় পাশের সংকীর্ণ অ্যাপ্রোচ ভাঙাচুরা এবং ওপরে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কে যাতায়াত করার সময় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ চানপুর গ্রামের সেতু। সড়কের ৫০টিরও বেশি স্থানে ঢালাই ভেঙে রড বেরিয়ে পড়েছে। রড এলোপাতাড়ি হয়ে পড়ে আছে। এতে যেকোন সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। আবার সড়কের কোনো কোনো স্থানে রয়েছে বড় আকারের গর্ত। ছোট গর্ত ও বড় গর্তে বৃষ্টির পানি জমে কাদায় পরিণত হয়েছে। ফলে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
যানবাহনের চালকরা জানান, সড়কে গাড়ি চালাতে হয় মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে। ভাঙা সড়কের প্রচ- ঝাঁকুনিতে রোগীসহ সুস্থ মানুষরাও নানা সমস্যায় ভুগেন। তাছাড়া গাড়িরও মারাত্মক ক্ষতি হয়। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন পিকআপ, সিএনজি, লেগুনা, ট্রাক ইত্যাদি যানবাহন চলাচল করে থাকে।
জালালপুর গ্রামের সিএনজি চালক মো. এনামুল হক বলেন, ‘আমাদের এ সড়কে প্রতিদিন প্রায় ৬০টি সিএনজি চলাচল করে। এছাড়াও লেগুনা প্রায় ৫০টি, প্রায় ১৫টি পিকআপ এবং কয়েকটি ট্রাকও এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করে। এ ভাঙাচুরা সড়কে গাড়ি চলাচল করায় যাত্রীসহ গাড়িরও মারাত্মক ক্ষতি হয়। বিকল্প সড়ক না থাকায় এ সড়কে গাড়ি চালাতে হয় আমাদের।’
গাড়ির যাত্রী শহরের আশিক মিয়া, দুর্লভপুর গ্রামের কদ্দুছ মিয়া ও লালপুর গ্রামের বৃদ্ধা সৈয়দুন নেছা বলেন, ‘আমাদের প্রয়োজনে প্রতিদিন এ সড়কে চলাচল করতে হয়। ভাঙাচুরা সড়কের মেঝেতে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের ঝাঁকুনিতে শরীর ব্যথা করে। তবুও চলতে হয় এ সড়ক দিয়ে।’
চাঁনপুর গ্রামের আকল মিয়া, মুক্তার হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সুনামগঞ্জ-বেতগঞ্জ সড়ক দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়ন বঞ্চিত। সড়কের উন্নয়নে স্থানীয় দায়িত্বশীলরা কোনো সময় ব্যবস্থা নেয়নি। ভাঙাচুরা সড়কের ঝাঁকুনিতে যাত্রীদের মারাত্মক সমস্যা হয়।’
একই গ্রামের মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘এ ভাঙাচুরা সড়ক দিয়ে বিভিন্ন এলাকার স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন কষ্ট করে আসা যাওয়া করেন। এছাড়া চাকরিজীবীরা এবং রোগীরা যাতায়াত করেন। কিন্তু এসব মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য কেউ কোনো উদ্যোগ নেননি সড়ক সংস্কারের। আমরা জরুরিভিত্তিতে সড়কের উন্নয়ন চাই।’
মোল্লাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুরুল হক বলেন, ‘দীর্ঘ ১২ বছর ধরে সুনামগঞ্জ-বেতগঞ্জ বাজারের সড়কের উন্নয়ন কাজ হয়নি। এ সড়ক দিয়ে লক্ষাধিক মানুষ চলাচল করেন প্রতিদিন। তবে ৮-৯ বছর আগে সড়কে গর্ত ভরাটের মেরামত কাজ হয়েছিল, কিন্তু এরপর আর কাজ হয়নি। যাতায়াতকারীদের দুর্ভোগ লাঘবে জরুরিভিত্তিতে এ সড়কের পূর্ণ মেরামত কাজ করা উচিত।’