1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৫:৩৯ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

শনির হাওরে সবুজধান জলের সঙ্গে খেলছে সাপলুডু

  • আপডেট সময় শনিবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৭

শামস শামীম ::
শুক্রবার বিকেল চারটা। মেঘলা আকাশে সূর্য মুখ লুকিয়ে হাসছে তো উঁকি দিয়ে চলেও যাচ্ছে। এমন দৃশ্যে বুকে ধরফরানি শুরু হয় কৃষকের। সেই ধরফরানি নিয়েই হারাধনের শেষ ছেলেকে রক্ষার প্রাণপণ চেষ্টা করছেন শনির হাওরপাড়ের ৮/১০টি গ্রামের কৃষকেরা। প্রায় অর্ধ শতাধিক কৃষক হাওরের জাঙ্গাল থেকে বস্তায় মাটি তুলে লালুর গোয়ালা বাঁধে এনে ফেলছেন। এই উপজেলার ২৩টি হাওরের মধ্যে এই হাওরটিই হাজারো কৃষকের প্রাণান্তকর সংগ্রামে টিকে আছে। তবে পাটলাই নদীর পানি থরথর করে বৃদ্ধি পাওয়ায় শঙ্কায়ও আছেন তারা। ইতোমধ্যে এই হাওরের নি¤œাঞ্চল বৃষ্টির পানিতে সবুজধানের সঙ্গে সাপলুডু খেলছে। উদ্বিগ্ন কৃষকের অবয়বে দুশ্চিন্তার ছাপ লক্ষণীয় হয়ে উঠছে। কারণ গত বছরও এই হাওরের সম্পূর্ণ ফসল তলিয়েছিল আগাম বন্যায়।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এই হাওরে পিআইসি ও ঠিকাদার মিলিয়ে ৫২ কি.মি. বেড়িবাঁধ নির্মাণ, মেরামত কাজ চলছে। এই হাওরে রয়েছে ৮২৯৮ হেক্টর জমি। এই হাওরে প্রায় সাড়ে ৯ কোটি টাকার ধান উৎপাদন হয়। গত ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরুর কথা থাকলেও যথাসময়ে ও যথানিয়মে প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ হয়নি বলে কৃষক ও জনপ্রতিনিধিরা জানান। যার ফলে পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির প্রাথমিক ধাক্কা সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাওরটিকে। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধে এখনো রাতদিন কাজ করছেন স্থানীয় কৃষক। গত ৩১ মার্চ থেকে হাওরটিকে রক্ষায় কাজ করলেও এখনো ঝুঁকিপূর্ণ রয়ে গেছে লালুরগোয়ালা বাঁধটি। রাতদিন এখনো বাঁধে কাজ করছেন শতাধিক কৃষক। বাঁধের কোনো ক্ষতি যাতে না হয় সেজন্য তিনজন প্রহরি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা রাতদিন ২৪ ঘণ্টা অবস্থান করছেন বাঁধে। তাদের সঙ্গ দিচ্ছেন উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল। কৃষকদের কখন কি লাগবে সেটা আগাম জেনে নিয়ে তা বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে কথা বলে সংস্থান করছেন তিনি।
বাঁধে অন্যান্য কৃষকদের মতো কাজ করছিলেন নোয়ানগর গ্রামের কৃষক তওফিক ইসলাম। তার প্রায় ১ কেয়ার জমি রয়েছে এই হাওরে। ধার-দেনা করে এই জমিতে চাষ করেছেন ধান। ফসল ঘরে উঠলে ধারদেনা পরিশোধ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে দু’বেলা দু’মুঠো নিরাপদে খাওয়াটাই তার একমাত্র স্বপ্ন। তাই রাতদিন ফসলরক্ষার যুদ্ধে শরিক হয়েছেন তিনি। তার সঙ্গে মাথায় লাল গামছা বেঁধে জাঙ্গাল থেকে মাটি কেটে বস্তায় ভরে বাঁধে মাটি ফেলছেন বীরনগর গ্রামের কৃষক ময়না। মিয়া দুশ্চিন্তায় তার চোখ মুখ লাল। রাতে ঘুম হচ্ছেনা। কিন্তু নিয়ম করে প্রতিদিনই লালুর গোয়ালা বাঁধে ছুটে আসছেন তিনি। এসে দেখে যাচ্ছেন বাঁধের অবস্থা। তিনি জানালেন, পিআইসি ও ঠিকাদার সঠিক সময়ে সঠিক নিয়মে এবারও বাঁধে মাটি ফেলেনি। যার ফলে দীর্ঘদিন ধরে প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করতে হচ্ছে তাদের। তিনি জানালেন, তার মতো হাজার হাজার কৃষকের কষ্ট হলেও শেষ পর্যন্ত ধান গোলায় তোলতে পারলেই খুশি তারা। সেই প্রার্থনাই এখন করছেন তারা।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুলকেও দেখা গেল বাঁধে দাঁড়িয়ে আছেন। কৃষকরা জানালেন গত এক সপ্তাহ ধরেন প্রতিদিন তিনি বাঁধে ছুটে আসেন। নিজে মাটিও কাটেন। কিন্তু ভালোবেসে কৃষকরা মাটির বস্তা ও কোদাল কেড়ে নিয়ে তাকে তদারকি করার দায়িত্ব দেন। গত এক সপ্তাহ ধরেই তিনি কাজ করছেন।
কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, আমি কৃষকের সন্তান। কৃষকের কষ্ট বুকের গহীন থেকে অনুভব করি। ফসল মার গেলে তাদের করুণ মুখের দিকে তাকানো যায়না। এক অনিশ্চিত জীবনের দিকে ধাবিত হন তারা। তিনি বলেন, ২৩টি হাওর ডুবে গেছে। বাকি আছে একটি। সব হারিয়ে আমরা এই হারাধনের ছেলেটিকে যুদ্ধ করে এখনো বাঁচিয়ে রেখেছি। আশা করি প্রকৃতি রুদ্ররূপী না হলে আমরা পরাজিত হব না। সম্মিলিত শক্তি দিয়েই আমরা জয়ী হব। এই জনপ্রতিনিধি পাউবো, পিআইসি ও ঠিকাদারদের কাজেরও সমালোচনা করেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আফছার উদ্দিন বলেন, শনির হাওরটি এখনো টিকে আছে। এবার এই বাঁধে কাজ হয়েছে ভালো। তবে ইতোমধ্যে প্রায় দেড়ফুট পানি বাঁধের চেয়ে বেশি হয়ে যাওয়ায় ঝুঁকিতে আছে। ৬.৫ ফুট পর্যন্ত বাঁধ পানি ধারণ করতে পারে। এখন এই মাপের চেয়ে বেশি হয়ে গেছে পানি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com