শাল্লা প্রতিনিধি ::
কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা ও সুনামগঞ্জ জেলার মিলনস্থল ছায়ার হাওরের বিভিন্ন বাঁধ রক্ষায় রীতিমতো যুদ্ধে নেমেছেন হাজারো কৃষক। যে বেড়িবাঁধ নির্মাণ-সংস্কারের কথা ছিল পিআইসি ও ঠিকাদারদের, সেই বাঁধ রক্ষায় এখন কাজ করছেন কৃষক।
গতকাল বৃহস্পতিবার শাল্লা উপজেলার নিয়ামতপুর গ্রামের বাঘারিয়া (বাঘরাধরা) বাঁধ রক্ষার জন্য কাজ করছিলেন অনেক কৃষক। তাদের অভিযোগ, পিআইসি’র সভাপতি শিথিল চন্দ্র দাস ১৬ লাখ টাকার প্রকল্পে বাঁধে মাটি ফেলেছে ৪ লাখ টাকার। দুর্নীতি আড়াল করতে বাঁধে সাইনবোর্ডও স্থাপন করা হয়নি। এমনকি হাজার হাজার কৃষক এই বাঁধে মাটি ফেলতে আসলেও পিআইসির সভাপতি শিথিল চন্দ্র দাস গা ঢাকা দিয়েছেন।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাঘারিয়া বাঁধটি রক্ষার জন্য উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের আনন্দপুর, নিয়ামতপুর, চরগাঁও, আটগাঁও ইউনিয়নের শশারকান্দা, মামুদনগর, উজানগাঁও, দাউদপুর, গঙ্গানগর, বাহাড়া ইউপির মুক্তারপুর মেঘনাপাড়া, ডুমরা সুখলাইন, আঙ্গারুয়া, নওয়াগাঁওসহ কিশোরগঞ্জ-নেত্রকোনা জেলার হাজার হাজার কৃষক স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ নির্মাণ করছেন।
এলাকার বিশ্বনাথ চক্রবর্তী, কালাই মিয়া, মিহির কান্তি রায়, আজিজ মিয়া, তরুণী কান্ত দাস, নিতাই চন্দ্র দাস, অখিল চন্দ্র দাস, আব্দুল খালেক, নিকলেশ রায়, অজয় রায়, অমেলন্দু দাস বলেন, পিআইসির সভাপতি শিথিল চন্দ্র দাস ১৬ লাখ টাকার প্রকল্পে কাজ করেছেন মাত্র ৪ লাখ টাকা। পিআইসি কমিটির এই দুর্নীতির জন্য ছায়ার হাওরের বোরো ফসল মারাত্মক হুমকির মুখে। গত বছরও এই বাঁধটি ভেঙে সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলার হাজার হাজার হেক্টর বোরো ফসল আগাম বন্যায় তলিয়ে যায়। এবছরও পিআইসির সভাপতি শিথিল চন্দ্র দাস প্রকল্পের মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করে অল্প কিছু মাটি ফেলেছে বাঁধে। এলাকার হাজার হাজার মানুষ বাঁধে মাটি না কাটলে আজ-কালের মধ্যেই বাঁধটি ভেঙে ছায়ার হাওরসহ কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনার হাওরগুলো তলিয়ে যেত।
কৃষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার কোটি কোটি টাকা হাওর উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ করে ঠিকই, কিন্তু দুর্নীতিবাজরা ও পাউবো কর্মকর্তারা লুটপাট করে হাওর রক্ষা বাঁধের নামে কৃষকের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। তাদের এসব দুর্নীতি বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আমরা হাওরপাড়ের কৃষকরা সরকার কাছে দাবি জানাচ্ছি।
অন্যদিকে, মাউতি দেড় কিলোমিটার বেড়িবাঁধে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সজীব রঞ্জন দাস অল্প মাটি ফেলেছে। যে কারণে এই বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে। পরিস্থিতি বিবেচনায় গত ৩মার্চ হাজারো কৃষক-জনতা এই ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধটি রক্ষায় স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে মাটি ফেলে ছায়ার হাওরটি রক্ষা করেন। এছাড়া আনন্দপুর মাদারিয়া বাঁধে কৃষক-জনতা ৩-৪ দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে মাটি, বস্তা ও বাঁশের আড়ি দিয়ে বাঁধটি রক্ষা করেন। এছাড়াও কাশিপুর ভোলানগর ও আনন্দপুর বেড়িবাঁধে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে বাঁধ রক্ষা করেছেন হাজার হাজার কৃষক।
উল্লেখ্য, শাল্লা উপজেলার ২২ হাজার হেক্টর বোরো জমি রয়েছে। এই বোরো জমিতে ধান উৎপন্ন হয় পনে দুই লাখ মেট্রিক টন।