মোসাইদ রাহাত ::
দেখার হাওরের অসহায় কৃষকদের দেখার কেউ নেই। টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে পাউবো ও ঠিকাদারের দুর্নীতিতে ফসল হারিয়ে কৃষকরা এখন সর্বহারা হয়েছেন। কৃষকরা জানান, দিনে এক বেলাও ভালো খাবার জুটছে না এখন তাদের পরিবারে।
বৃহস্পতিবার সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাওরে যে দিকে চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজের কোনো চিহ্ন নেই। স্থানীয়রা জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড গত দুই বছরের মধ্যে হাওরে বাঁধের কোনো কাজ করেনি।
হাওরপাড়ের বাসিন্দা করিমুন নেছা বলেন, ‘আমার স্বামী মারা গেছেন ১২ বছর হয়। জমি বাগি দিয়ে আমার দুই ছেলে আবাদ করেছিল। বাঁধ ভেঙে এখন সব ফসল তলিয়ে গেছে। আমরা এখন অসহায় হয়ে পড়েছি। ঘরে ভাত নেই, হাঁড়িতে চাউল নেই। গতকাল ৩ কেজি আটা এনে রুটি তৈরি করে খাই। হালের গরু বিক্রি করবো। সরকারের কেউ আমাদের দেখে না।’
কৃষক কুদরত আলী বলেন, ‘আমার ৬ কেয়ার জমি ছিল। সব জমির ধান তলিয়ে গেছে। আমি এখন অসহায়। আমার পরিবারে ৪ মেয়ে, ১ ছেলে। ঘরে খাবারের কিছুই না থাকায় আটা এনেছি। কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ এনেছিলাম। এখন ঋণ পরিশোধ করবো কেমনে।’
কৃষকের স্ত্রী নেহারুন নেছা বলেন, ‘আমার স্বামী পঞ্চাশ হাজার টাকা সুদে জমি আবাদ করেছেন। এখন সব শেষ। গজবের পানি সব ভাসাইয়া নিয়েছে। তুফানে ঘরের চাল উড়ে গেছে। কেউ এসে সাহায্যও দেননি।’
হাওরপাড়ের কৃষক চান মিয়া বলেন, ‘আমার সব কিছু শেষ হয়েছে। এখন খাবারের কিছুই নেই ঘরে। মহাজনের কাছ থেকে ঋণ এনেছিলাম। বিপদের সময় দেখার কেউ নেই।’
দেখার হাওরপাড়ের জানিগাঁও গ্রামের কৃষক উকিল আলী বলেন, ‘সকাল থেকে ঘরে খানি নেই। ঘরের দুটি মুরগী বিক্রি করছি। এই টাকা দিয়ে নাতি-নাতনিদের জন্য বিস্কুট কিনে এনেছি। আজকে তাদের কান্না থামানো গেল, কালকে কি করবো?’
লক্ষণশ্রী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল ওদুদ বলেন, আমাদের এলাকার শতভাগ মানুষ দেখার হাওরের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু পুরো হাওরের ফসলই তলিয়ে গেছে। মানুষের মাঝে হাহাকার বিরাজ করছে। তাদের সান্ত¦না দেয়া ভাষা আমাদের নেই। এ কৃষকদের বাঁচাতে জরুরি ভিত্তিতে সাহায্যের দরকার। বছরব্যাপী আর্থিক অনুদান দরকার।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আফসর উদ্দিন বলেন, ‘জেলায় ২২টি হাওর পানিতে ডুবেছে। বাকি যে বাঁধগুলো আছে, আমরা বাঁশ ও বালু পাঠানোর ব্যবস্থা করছি এবং যে সকল ঠিকাদাররা কাজ করেননি, তাদের লাইসেন্স বাতিলসহ বিলের টাকা আটকানো হবে।’
জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম জানান, ‘দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ৩শ মেট্রিক টন চাল এবং ১০ লক্ষ টাকা আমাদেরকে বরাদ্দ করা হয়েছে। আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত ১৬ লক্ষ টাকা আর ৩৬০ মেট্রিক টন চাল, ১৫৫ বান্ডিল টিন রয়েছে। বিভিন্ন উপজেলায় ইউএনওরা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে এই ত্রাণ বিতরণ শুরু করেছেন। মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের জানানো হয়েছে খাদ্যের কোনো সংকট নেই, প্রয়োজন অনুযায়ী বিতরণ করা হবে।’