মো. শাহজাহান মিয়া ::
জগন্নাথপুরে ফসলহানির ঘটনা সামাল দেয়ার আগেই কৃষকরা নানামুখী সমস্যায় পড়েছেন। ঘরে নাই ভাত, মাথায় ঋণের বোঝা, বন্যায় তলিয়ে যাচ্ছে বাড়ি, বাজারে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। সব মিলিয়ে আগাম দুর্ভিক্ষের অশনি সংকেত বিরাজ করছে জগন্নাথপুরে। এমন অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত হাওরপাড়ের কৃষকদের কান্না থামছে না। তাদের সাথে নি¤œ আয়ের সাধারণ মানুষ হয়ে পড়েছেন দিশেহারা। কারো মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। সবাই দুঃশ্চিন্তায় ভারাক্রান্ত। বেঁচে থাকার তাগিদে পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রাণান্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকসহ খেটে খাওয়া মানুষজন।
জানাগেছে, জগন্নাথপুরে এবার বাম্পার বোরো ফসল উৎপাদিত হয়েছিল। হাওরে হাওরে সবুজের সমারোহ দেখে কৃষকদের মুখে ফুটে উঠে তৃপ্তির হাসি। হঠাৎ পাহাড়ি ঢলে ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে তাদের সকল আনন্দ ম্লান হয়ে যায়।
গত ৩১ মার্চ বেড়িবাঁধ ভেঙে উপজেলার নারিকেলতলা, কুবাজপুর ও ইছগাঁওসহ ছোট ৩টি হাওর তলিয়ে ফসলহানির ঘটনা ঘটে। ১ এপ্রিল বেড়িবাঁধ ভেঙে জগন্নাথপুর উপজেলার সবচেয়ে বড় নলুয়ার হাওর তলিয়ে যায়। এরপর এক এক করে উপজেলার সকল হাওর তলিয়ে গেছে। বিগত বছর পাকা-আধা পাকা ফসল তলিয়ে গেলেও এবার কাঁচা ফসলহানি হয়েছে।
ফসলহানির ঘটনায় জগন্নাথপুরের চিত্র বদলে যায়। হাওরপাড়ের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠে। এ যেন এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য।
অন্যদিকে ঢলের পানিতে উপজেলার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন হাওরপাড়ের বিভিন্ন গ্রামের লোকজন। অনেকের বাড়ি-ঘরে পানি উঠে গেছে। নদী ও হাওরে পানি বেড়েই চলেছে। এদিকে, গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা।
নলুয়ার হাওরপাড়ের গ্রাম ভূরাখালি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক দিলদার হোসেন, মাসুক মিয়া, আবুল কালাম, আব্দুন নুর, আশ্রব উল্লাহ, ছাতির মিয়াসহ আরো অনেকে বলেন, হাওর তলিয়ে ফসল হানিতে ঘরে নাই ভাত। এলাকায় নিদান দেখা দিয়েছে। তার উপর ঋণের বোঝা। জমি চাষাবাদ কালীন সময়ে ধানুয়া লগ্নির ঋণ এখন চাপ দিচ্ছ। এর মধ্যে বন্যার পানি বেড়ে বাড়ি-ঘর তলিয়ে যাচ্ছে। ঢেউয়ের কবল থেকে বাড়ি বাঁচাতে বাঁশের আড় তৈরি করার ক্ষমতা আমাদের নেই। নেই গবাদিপশুর খাদ্য। বাজারে বেড়েছে চালসহ নিত্যপণ্যের দাম। কেনার ক্ষমতা নেই। পরিবারের লোকজনদের নিয়ে কোথায় যাবো, কি খাব বুঝে উঠতে পারছি না।
উপজেলার ভূরাখালি গ্রামের বাসিন্দা জগন্নাথপুর হাওর উন্নয়ন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, চলে গেছে ধান, পেটে নাই ভাত। গরুর খাদ্যও নাই। বন্যার পানিতে ডুবে যাচ্ছে বাড়ি। তাই জগন্নাথপুরকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করার দাবিতে বৃহস্পতিবার জগন্নাথপুরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এদিকে, আগাম দুর্ভিক্ষের আশঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে ক্ষতিগস্ত কৃষকসহ জনসাধারণ খাবার সংগ্রহ শুরু করেছেন। প্রতিদিন জগন্নাথপুর সদর বাজারসহ উপজেলার সকল হাট-বাজারের চাল, আটা, ময়দা, তেল, ডালসহ নিত্যপণ্য কিনতে দোকানে ভিড় করছেন ক্রেতারা। অনেক দোকানে লাইন দিয়ে কার আগে কে এমন প্রতিযোগিতা করে মালামাল কিনছেন ক্রেতারা। এ সুযোগে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাড়িয়ে দিয়েছেন নিত্যপণ্যের দাম। এছাড়া পৌর শহরের রাস্তা-ঘাটে বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙাচোরা সড়কগুলো বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। এতে জন ভোগান্তি বেড়েছে। প্রতিনিয়ত বিদ্যুতের ভেলকিবাজি তো রয়েছে। সব মিলিয়ে এক কঠিন পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
যদিও বাজার নিয়ন্ত্রণে জগন্নাথপুর উপজেলা প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। অসৎ চাল ব্যবসায়ীদের করা হচ্ছে জরিমানা।
গতকাল বুধবার জগন্নাথপুর পৌরসভার মেয়রের উদ্যোগে দিনব্যাপী পৌর এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। এতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান করা হয়েছে, এ দুঃসময়ে যেন নিত্যপণ্যের দাম না বাড়ানো হয়। এছাড়া বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বাজার বণিক সমিতি, বাজার তদারক কমিটিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।