হাওর। ভাটির মানুষের যেমন সংগ্রামের স্থল, তেমনি সারা বছর প্রাপ্তির একমাত্র মাধ্যম। বছরের বাকি সময় হাওর হতে তোলে আনা ফসলের উপরই নির্ভর করতে হয় লক্ষ লক্ষ ভাটির মানুষকে। এবার অকাল বানের পানিতে সেই ফসল তলিয়ে গেল। একমাত্র বোরো ফসল এভাবে বানের পানিতে ভেসে গেলে মানুষের যে কতটুকুন দুর্ভোগ হয় তা ভুক্তভোগীরাই শুধু জানে। তা কিন্তু নতুন নয়। এভাবে অতীতে, বিগত অনেক বছরে হাওরবাসী ফসল তুলতে পারে নাই। হাওর তলিয়ে যাবার পরপরই শুরু হয় সকল পেশার লোকজনসহ রাজনীতিবিদগণের চিৎকার। এখানে সেখানে যাওয়া-আসা। তারপর কয়েক দিন পর তা নিয়ে আর কোন কথা হয় না।
হাওরবাসী আবার স্বপ্ন দেখে। ফসল বুনে। ঠিক ফসল ধরে তোলবার পূর্বেই বানের পানিতে ফসল তলিয়ে যায়। সবাই মিলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা সরকারি অফিসের দায়িত্ববানদের দোষারূপ করছেন যুক্তিসংগত কারণেই। তুলে ধরছেন অবহেলার নানা উদাহরণ। তারপরও ভুলে যাবেন না উনারা সরকারি কর্মচারী। তারা যে কোন ছল-চাতুরির সুযোগ নিয়ে উনাদের চাকরি বহাল রেখে দেবেন। আর ঠিকাদার তাদের যেমন খুঁটির জোর, তেমনি কৈফিয়তের নানা অজুহাত। আর মানববন্ধন তো অনেক আগেই বলেছি সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়।
বর্তমান বাংলাদেশে যা কিছু হচ্ছে বা আগামীতে হবে তার সব একমাত্র নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে ও আগ্রহে হচ্ছে। তাই আমাদের সুনামগঞ্জের বিপুল হাওর এলাকার এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান একমাত্র এবং একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহে হওয়া সম্ভব। এখানে রাজনৈতিক চমক দেখাতে, এখানে-ওখানে দু-একজন গিয়ে কোন লাভ নেই। যার নিকট সমস্যা সমাধানের জন্য গেলেন, উনি উনার নিজের এলাকার ন্যূনতম সমস্যার এক আঙ্গুল সমাধান করতে পারেন নাই।
জেলার বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষমতাসীন দলের সব নেতৃবন্দসহ দলের সকল এমপি, স্থানীয় বিরোধী দলের নেতাদের নিয়ে দলবদ্ধভাবে নেত্রীর কাছে যান। এমনকি নিকট অতীতে যে দু’জন নেতা ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। সকল বিভেদ ভুলে বড় ভাই, ছোট ভাইয়ের মন নিয়ে জোটবদ্ধভাবে প্রধানমন্ত্রীকে দেখান আপনারা এখন সবাই ঐক্যবদ্ধ। মনে রাখবেন, আপনি যা দেখছেন না জনগণ যেমন দেখেছে, তেমনি প্রধানমন্ত্রীর সকল এজেন্সি প্রতিদিন উনাকে অবহিত করে চলছে।
হাওরের এই সমস্যা পাউবো’র পক্ষে সমাধান করা সম্ভব নয়। ৫০ কোটি খরচ করে, কিছু মাটি ফেলে, ২০/২৫টি বাঁশ দিয়ে বালির বাঁধের পর্যায়ে নয়। তাই বলছি এখনো সময় আছে। দলের সভাপতি-সাধারণ স¤পাদকগণ একযোগে জনপ্রতিনিধিদের তা আওয়ামী লীগ হোক অথবা জাতীয় পার্টির সবাইকে নিয়ে নেত্রীকে বলেনÑ আপনিই পারেন এর দীর্ঘমেয়াদী সমাধান।
নেত্রীর মাথায় এখন আগামী নির্বাচন। তাই আর কোন বিভেদ দেখতে চান না। চারদিকে শুধু ঐক্য দেখতে চান। তাই বলছি আল্লাহর দোহাই লাগে মিথ্যা অহমিকায় আর ডুবে না থেকে ছুটে যান সঠিক স্থানে। তখন সেই সঠিক স্থান হতে পাবেন সঠিক সমাধান। সমস্যা সমাধানে যেখানে শত শত কোটি টাকা বিশেষ বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন। সেখানে পাউবো, এলজিইডি, লোকাল ডিসি অফিস ওদের দোষারূপ করে লাভ নেই। সমস্যার বাস্তব সমাধান করতে হলে বাস্তব পদক্ষেপ চাই।