1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৮:২০ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

বিপর্যস্ত কৃষি : নিদানের আশঙ্কা

  • আপডেট সময় সোমবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৭

মোসাইদ রাহাত ::
ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে পাউবো’র ‘বালির বাঁধ’ ভেঙে ফসলহানির ঘটনায় হাওরজুড়ে হাহাকার বিরাজ করছে। হাওরের ফসল তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ঝড় এবং শিলাবৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে রবিশস্যও। এতে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। জেলার বিভিন্ন এলাকা ঢলের পানিতে প্লাবিত হওয়ায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন মানুষ। ওই সকল এলাকায় দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের সংকট। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষ আশঙ্কা করছেন নিদানের।
গত একমাস আগে পুরাতন আতব ২৮ চালের দাম খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ছিল ৩৬ টাকা করে। এখন একই চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা করে। গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে খুচরা বাজারে পুরাতন আতব ২৮ চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে আরও ৫ টাকা করে। এছাড়াও পুরাতন আতব ২৯ গত সপ্তাহে ছিল ৪৪ টাকা প্রতি কেজি, বর্তমানে ৪৮ টাকা প্রতি কেজি। আমন নতুন ২৮ ছিল প্রতি কেজি ৩৮ টাকা, বর্তমানে ৪২ টাকা প্রতি কেজি খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে। আমনের পাইজং গত সপ্তাহে ছিল ৪০ টাকা প্রতি কেজি। বর্তমানে ৪৫ টাকা প্রতি কেজি খুচরা দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে বাইরে থেকে আমদানিকৃত প্যাকেটজাত দামি চালের দাম বৃদ্ধি পায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানান, বাঁধ নিয়ে দুর্নীতির হওয়ার আলোচনা শুরু হতেই এক শ্রেণির ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে চালের দাম বৃদ্ধি করে চলেছেন। প্রতি সপ্তাহে এক, দুই টাকা করে এখন খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চালে প্রায় দ্বিগুণ দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু খুচরা বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছে চাল পর্যাপ্ত মজুদ আছে।
এদিকে, হাওরের ফসল তলিয়ে যাওয়ায় এবং ঝড় ও শীলায় রবিশস্য নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বাজারে সবজির দামও বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। বর্ষাকালীন সবজি এবার অঙ্কুরেই শেষ করে দিয়েছে প্রকৃতি। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শহরের খুচরা বাজারের চালের ব্যবসায়ী ও মালতি ট্রেডার্সের মালিক মনা রায় বলেন, ‘গত কয়েকদিনে চালের দাম কেজিতে সামান্য বেড়েছে। এই দাম বাড়াটা স্বাভাবিক। এখন তো চালের দাম বাড়ার সময়ই।’
শাহজালাল চালের আড়ৎ-এর মালিক ও খুচরা ব্যবসায়ী মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ‘এ সপ্তাহে প্রতি কেজিতে ৪-৫ টাকা করে দাম বেড়েছে। ওএমএস-এর চাল বাজারে বিক্রি হলে অবশ্যই চালের দাম কম থাকতো।’
সুধাংশু এন্ড সন্স-এর মালিক ও খুচরা ব্যবসায়ী সুধাংশু পাল বলেন, ‘বর্তমানে খুচরা বাজারে চাল যে দামে বিক্রি হচ্ছে, চালের কিছুটা দাম বেড়েছে। তবে আগামীকাল (আজ) বাজারে চাল আসবে। এতে হয়তো চাল ন্যায্য দামেও বিক্রি হতে পারে।’
শহরতলির জগন্নাথপুরের বাসিন্দা দিনমুজুর তৈয়ব আলী বলেন, ‘আমি বিকাল পর্যন্ত ১২০ টাকা রুজি করেছি। চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সংসারে চালের টাকাও রুজি করতে পারছি না আজকাল। আগে ২শত টাকায় মোটামুটি সংসার চালানো যেত। এখন যদি খোলাবাজারে চাল পাওয়া যেতো তাহলে জান বাঁচতো।’
মইনপুরের কাছম আলী বলেন, ‘সারাদিন দিনমুজুরী করে যা উপার্জন করি, এখন তা দিয়ে সংসারের খরচ পুষিয়ে নেয়া যায় না।’
শহরতলির ইব্রাহীমপুর গ্রামের বাসিন্দা সাজাউর রহমান বলেন, ‘বাঁধ নির্মাণ নিয়ে ছিনিমিনি খেলায় এখন হাওর গেছে। এই সুযোগ পেয়ে চালের দাম বাড়াচ্ছে ব্যবসায়ীরা। কেউ হবে কোটিপতি আর কেউ ফকির। মানুষ না খেয়ে মরার সময় ঘনিয়ে এসেছে। এখন অভাবে প্রায় পড়ে গেছেন সাধারণ মানুষ। খোলাবাজারে চাল বিক্রি হলে তখন মানুষ কিছুটা সংকট কাটিয়ে উঠতে পারতো।’
দেখার হাওরপাড়ের কৃষক শফিক মিয়া বলেন, পাউবো ও ঠিকাদারের লাগি আমরা সব ধান শেষ হইগেছে। শিলা আর ঝড়ে সবজি ক্ষেতও গেছে। মাঠ-ময়দানো পানি গরুরে কিতা খাওয়াইতাম। আমরা কিতা খাইতাম। আমরা বাঁচতাম কিলা। আমরার জীবন লইয়া যারা ছিনিমিনি খেলে এরার বিচার চাই।
এদিকে, গত রোববার সুনামগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ চলমান খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি এপ্রিল ২০১৭ থেকে বাড়িয়ে সারা বছর বহাল রাখার ব্যবস্থা ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও নতুন করে আরও হতদরিদ্র পরিবারকে এই খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতাভুক্ত করার জন্য খাদ্য মন্ত্রীর কাছে সুপারিশ করেছেন। তিনি খাদ্যমন্ত্রী বরাবর প্রেরিত পত্রে উল্লেখ করেন, আমার নির্বাচনী এলাকা সুনামগঞ্জ ৪-এর সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সব ক’টি হাওরের বোরো ফসল শিলা বৃষ্টি ও অকাল বন্যায় ইতিমধ্যেই পানিতে তলিয়ে গেছে। উল্লেখিত এলাকার কৃষকগণের একমাত্র ফসল বোরো ফসল। এবং শিলা বৃষ্টিতে ফসল ও ঘরবাড়ি ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। যা দিয়ে তাদের সারা বছরের খাদ্য চাহিদা মিটতো। কিন্তু আকস্মিক অকাল বন্যায় বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ায় অত্র এলাকার কৃষকগণ নিরুপায় হয়ে পড়েছে। তাদের খাদ্য চাহিদা মিটানোর বিকল্প কোনো কর্মসংস্থান এই এলাকায় নেই। আবার বোরো ফসলের উপর নির্ভরশীল শ্রমিকেরা হতাশাভুক্ত হয়ে পড়েছে। কারণ তারাও এই বোরো ফসল থেকে তাদের খাদ্য চাহিদার একটা অংশ শ্রমের বিনিময়ে উপার্জন করতো। হাওরের ফসল তলিয়ে যাওয়ায় সুনামগঞ্জের এই হাওর এলাকার মানুষেরা আজ নিরুপায় ও ক্ষতিগ্রস্ত হাজার হাজার কৃষক এবং দরিদ্র পরিবারকে চলমান খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা ছাড়া আর কোনো বিকল্প পথ নেই। তাই চলমান খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি এপ্রিল-২০১৭ থেকে বাড়িয়ে সারা বছর বহাল রাখার ব্যবস্থা ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও নতুন করে আরও হতদরিদ্র পরিবারকে এই খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতাভুক্ত করার জন্য আপনার নিকট জোর সুপারিশ জানাচ্ছি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com