1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ১১:৩৬ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

ডুবছে হাওর, বাড়ছে ক্ষতি

  • আপডেট সময় সোমবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৭

শামস শামীম ::
শনিবার রাতে ক্ষেতে কাঁচা ধান দেখে ঘুমুতে যান দেখার হাওরপাড়ের গ্রাম বাহাদুরপুরের কৃষক শফিকুল ইসলাম। এই হাওরে তার ১২০ শতক জমি রয়েছে। গতবার অর্ধেক ফসল হারিয়ে এবার ধার-দেনা করে এই প্রান্তিক চাষী আবারও ফসল লাগিয়েছিলেন। বাম্পার ফলন হলে ঋণশোধের পাশাপাশি পরিবারকে নিয়ে দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের নিশ্চয়তা খুঁজছিলেন তিনি।
রোববার সকালে উঠে দেখেন হাওর পানিতে সাদা হয়ে গেছে। তিনি জানালেন, দেখার হাওরের উথারিয়া উথারিয়া বাঁধ ভেঙ্গে, আসামপুর, আস্তোমা বেড়িবাঁধ উপচে হাওরে পানি ঢুকে সর্বনাশ ডেকে এনেছে তার মতো হাজারো কৃষকের। গত ২৯ মার্চ থেকে প্রতিদিন ডুবছে হাওরের কাঁচা বোরো ফসল। বাড়ছে ক্ষতির মাত্রা। তবে বোরো ভা-ার দেখার হাওরের ফসল এবার আগাম চলে যাওয়ায় চোখে অন্ধকার দেখছেন কৃষকরা।
শফিকুল ইসলাম জানান, ‘ইবার ডিগা ধান নিছেগি। চৈতমাসে কোনবালা ফসল ডুবাইছেনা। ইলা বিপদ আমার ঠারে দেখিনাই। (এবছর কাচা ধান নিয়ে গেছে। আমার স্মৃতিতে চৈত্র মাসে কোনসময় ফসল ডুবছেনা। এমন বিপদ জীবনে দেখিনি’। তার কথা কেড়ে নিয়ে একই গ্রামের কৃষক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘ ইবার কিতা খাইয়া বাঁচমু। আল্লায় আমরারে একটার পর একটা বিপদ কেনে দের। চোরেরা বান্দ না বাইন্দা টাকা মাইরা খাওয়ায় আমরার রিজিক নষ্ট হচ্ছে। ই চোররার কুন্তা অয়না। ইবার সরকার আমরার বাদি না চাইলে উপাস থাকতো অইব’। (এ বছর কি খেয়ে বাঁচব। প্রভু আমাদের একটার পর একটা বিপদ কেন দিচ্ছে। ফসলরক্ষা বাঁধের দায়িত্বপ্রাপ্ত চোররা আমাদের বাঁধের টাকা খেয়ে আমাদের রিজিক ধ্বংস করছে। তাদের কিচ্ছু হয় না। এবছর সরকার আমাদের সহযোগিতা না করলে উপোস থাকতে হবে)।
এই দুই ফসলহারা কৃষকের মতোই সুনামগঞ্জের লাখো কৃষকের কণ্ঠে এখন ক্ষোভ ও হতাশার সুর। মোটা অংকের বরাদ্দ পেয়েও সময় মতো বাঁধ না নির্মাণ না করায় তারা এখন রাজপথে নেমে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একইসঙ্গে ফসল ডুবে যাওয়ার কারণে চোখে অন্ধকার দেখা কৃষকরা সরকারি সহযোগিতা কামনা করেছেন।
আসামমোড়া গ্রামের কৃষক এনামুল হক বলেন, উথারিয়া বাঁধ ভেঙে, আসামপুর, আস্তোমা বেড়িবাঁধ উপচে শনিবার রাত থেকে হাওরে পানি ঢুকছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিসেম্বরে এই বাঁধে মাটি ফেলার কথা থাকলেও এক সপ্তাহ আগে মাটিকাটার সরঞ্জাম নিয়ে এসেছিল। কিন্তু বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আর মাটি ফেলতে পারেনি। যার ফলে বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে আমাদের হাওরটি তলিয়ে গেছে।
উল্লেখ্য, চলতি মৌসুমে সরকার পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ৫৫ কোটি টাকার উপরে বাঁধ নির্মাণ, মেরামত ও সংস্কারের জন্য বরাদ্দ দিয়েছিল। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শুরুর কথা থাকলেও কাজ শুরু হয় ফেব্রুয়ারিতে এসে। যার ফলে কিছু কিছু কাজ হলেও বাঁধ টেকসই না হওয়ায় ঢল ও বৃষ্টিতে বাঁধ ভেঙে ফসল তলাচ্ছে বলে কৃষকদের অভিযোগ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ সদর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, দোয়ারাবাজার ও ছাতক উপজেলা নিয়ে বিস্তৃত জেলার সর্ববৃহৎ হাওর দেখার হাওর। কৃষি বিভাগের মতে এই হাওরে প্রায় ৯ হাজার হেক্টর বোরো জমি রয়েছে। এ থেকে প্রায় ৯০ কোটি টাকার ফসল উৎপাদিত হয়। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতে এই হাওরে প্রায় ২৪ হাজার ২১৪ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়ে থাকে। ফসলের উৎপাদনমূল্য ২ শ কোটি টাকার উপরে। রোববার বিকেল ৫টায় কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, বাঁধ ভেঙে এবং বিভিন্ন স্থান দিয়ে বাঁধ উপচে দেখার হাওরের ৫ হাজার হেক্টর জমির বোরো তলিয়ে গেছে। অবশিষ্ট জমিও ধিরে ধিরে ডুবে যাচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জাহেদুল হক বলেন, বাঁধ ভেঙে দেখার হাওরে পানি ঢুকছে। রোববার বিকেল পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ধান তলিয়েছে। অবশিষ্ট ফসলও ডুবছে। এই হাওরের মতো অন্যান্য হাওরেরও একই অবস্থা। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কোথাও বাঁধ ভেঙে, বাঁধ উপচে পানি ঢুকছে। ধান কাচা থাকায় এবার কোন ফলনই ঘরে তুলতে পারবেনা কৃষক। তিনি জানান, এ পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ ১৯০ কোটি টাকা। সব হাওরই ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানান তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আফসার উদ্দিন বলেন, অতিবর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে দেখার হাওরসহ অন্যান্য হাওরে পানি প্রবেশ করছে। এতে হাওরের কাঁচা ফসল তলিয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেই ফসলহানি হচ্ছে বলে তিনি জানান।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com