1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৮:১৮ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

ঝড় ও শিলায় ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি

  • আপডেট সময় সোমবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৭

আকরাম উদ্দিন ::
ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রোববার ভোররাতে প্রায় আধ ঘণ্টাব্যাপী শিলাবৃষ্টি ও ঝড় হয়। এতে সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রায় ৬ হাজার বসতঘর ও গাছপালা এবং রবিশস্যর মারাত্মক ক্ষতি হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নে। এই ইউনিয়নে বসতঘর, রবিশস্য, গাছ-পালা, মসজিদ, মাদ্রাসা, আনন্দস্কুল ও মক্তবের টিনের চালার মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। সোমবার সকালে জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মুকশেদ আলী ও সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. মানিক মিয়া ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বিভিন্ন গ্রাম পরিদর্শন করেছেন। এ সময় স্থানীয় চেয়ারম্যান মো. মুকশেদ আলী জানান, ইউনিয়নে ৩১টি গ্রামের প্রায় সাড়ে ৬ হাজার পরিবার রয়েছেন। শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় ৫ হাজার দুই শত পরিবার। ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে প্রায় ৫০টি। রোববার সকালে সরেজমিনে জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা যায়, ইউনিয়নের নারায়ণতলা, চৌমুহনীবাজার, ঝরঝরিয়া, গুচ্ছগ্রাম, ফেনিবিল, নতুন গোদীগাঁও, পুরাতন গোদীগাঁও, ভৈরবহাটী, কামারগাঁও, নৈদারখামার, আমপাড়া, কোণাপাড়া, রাজানগর, মঙ্গলকাটা, দুর্লভপুর, কদমতলাহাটি, ইসলামপুর, খাগেরগাঁও, দলাইরপাড়, ঢালারপাড় ইত্যাদি এলাকায় অতিমাত্রায় শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এসব এলাকায় কাঁচা ঘরের টিনের চাল শিলাবৃষ্টির আঘাতে ঝাঝরা হয়ে গেছে। কোনো কোনো গ্রামে একাধিক ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ফলজ গাছ ও মূল্যবান কাঠের গাছ ভেঙে পড়েছে। জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের রবিশস্য শসা, কাকরুল, ঢেঁড়স, বাদাম, ঝিঙা, মরিচ ইত্যাদির মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। নারায়ণতলা ও কোণাপাড়া গ্রামের সবুজ মিয়া, ইদ্রিছ আলী, জসীম উদ্দিন ও আব্দুল মোতালিব বলেন, ‘শনিবার ভোররাতে হঠাৎ ঝড়ের সাথে শিলা বৃষ্টি শুরু হয়। বড় আকারের শিলায় ঘরের ভেতরে থাকা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। কোনো মতে মাথা বাঁচিয়েছি। কিন্তু ঘরের সকল জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গেছে।’ নতুন গোদীগাঁওয়ের আলী মিয়া বলেন, ‘আমি দিনমজুর, আমার টিনের ঘর ঝড়ে উড়িয়ে নিয়ে গেছে। ঘরের ভেতর থেকে দ্রুত দৌড়ে বের হয়ে পাশের ঘরে গিয়ে আশ্রয় নিই স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে।’ একই গ্রামের ফজলু মিয়া, শ্রীহীরা লাল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘প্রবল বেগের ঝড়ের সাথে শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। কোনো মতে প্রাণে বেঁচে যাই।’ একই কথা বলেন ফেনিবিলের মোবারক হোসেন, শহীদ মিয়া, আশ্বাদ আলী, সিরাজ মিয়া এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফুর রহমান জজ মিয়া। একই গ্রামের দিনমজুর মাঈনুদ্দীনের স্ত্রী সুফিয়া খাতুন বলেন, ‘আমার চার সন্তান ছোট। আমার স্বামী মানুষের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান। এখন শিলাবৃষ্টিতে পুরো ঘরের চাল ঝাঝরা হয়ে গেছে। কিভাবে টিন লাগাবো ঘরে।’ গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা ইদু মিয়া, আক্তার মিয়া, সফর আলী, গোলাপ মিয়া বলেন, জীবনেও এমন শিলাবৃষ্টি দেখিনি। ঝরঝরিয়া গ্রামের রেশদ আলী, মোস্তফা আলী, আসমত আলীও একই কথা বলেন। কান্দাপাড়ার ইলিয়াছ আলী ও কামারভিটার ইদ্রিছ আলী বলেন, ‘চৈত্র মাসে কোনোদিন এমন ঝড় দেখিনি এবং শিলাবৃষ্টিও দেখিনি।’ নারায়ণতলার জেতুনী সাংমা, বড়ইতলার আব্দুল মন্নান ও মো. সিরাজ মিয়াও একই কথা বলেন। পুরাতন গোদীগাঁওয়ের পরজেনি মারাক, সেলিম মিয়া ও কামারগাঁওয়ের মুর্শেদ মিয়া বলেন, ‘চৈত্রমাসে এমন ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে মারাত্মক ক্ষতি হবে, তা ভাবতেও পারিনি।’ কামারগাঁওয়ের লাইলী বেগমের বসতঘর ও পুরাতন গোদীগঁওয়ের শাহিদা বেগমের বসতঘরও শিলাবৃষ্টি ঝাঝরা করে দিয়েছে। ঝড়ে ও শিলা বৃষ্টিতে আমপাড়ার বকুল মিয়ার ঘরও পড়ে গেছে। ইউপি সদস্য আব্দুল মোতালিব বলেন, ‘শিলাবৃষ্টিতে মঙ্গলকাটা এলাকায় ৯০ভাগ মানুষের বসতঘর নষ্ট হয়েছে। বোরো ফসল ও রবিশস্যের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।’ এদিকে, সুরমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আব্দুছ ছত্তার জানান, শনিবার ভোররাতে শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। এতে ইউনিয়নের পশ্চিম সাহেবনগর, কৃষ্ণনগর, বেরীগাঁও, সৈয়দপুর, হুড়ারকান্দা, মুসলিমপুর, ভাদারটেক, বালিকান্দি, হালুয়ারঘাট, মইনপুর, রহমতপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় সাড়ে তিনশত পরিবারের বসতঘর, গাছ-পালা ও রবিশস্যের ক্ষতি হয়েছে। শিলাবৃষ্টির আঘাতে ঝাঝরা হয়ে গেছে বিভিন্ন পরিবারের বসতঘরের টিনের চাল। রবিশস্যের বেশি ক্ষতি হয়েছে পশ্চিম সাহেবনগর, কৃষ্ণনগর, বেরীগাঁও, সৈয়দপুর, হুড়ারকান্দা, মুসলিমপুর এলাকায়। সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল আওয়াল ও মুক্তিযোদ্ধা চাঁন মিয়া বলেন, ‘নলুয়া, বাণীপুর, কৃষ্ণনগর, ঢালাগাঁও ইত্যাদি এলাকায় বসতঘরের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। রবিশস্যেরও ক্ষতি হয়েছে।’ মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুরুল হক জানান, শনিবার ভোররাতে শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। এতে ইউনিয়নের প্রায় ৪শত পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের বসতঘরের টিনের চাল, গাছ-পালা ও রবিশস্যের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মোহনপুর, বর্মাউত্তর, বানীপুর, রাসনগর, মুরারবন্দ, নৌকাখালী, রহমতপুর গ্রামে। লক্ষণশ্রী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াদুদ জানান, শনিবার ভোররাতে শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। এতে ইউনিয়নের প্রায় ৮শত পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের বসত ঘরের টিনের চাল, গাছ-পালা ও রবিশস্যের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানিগাঁও, বাহাদুরপুর, রাবারবাড়ি, নীলপুর গ্রামে। কাঠইর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুফতি সামছুল ইসলাম জানান, শনিবার ভোররাতে শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। এতে ইউনিয়নের ৩ শতাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের বসতঘরের টিনের চালের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। কুরবাননগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল বরকত জানান, শনিবার ভোররাতে শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। এতে ইউনিয়নের সহ¯্রাধিক পরিবারের বসতঘরের ক্ষতি হয়েছে। শিলাবৃষ্টির আঘাতে রবিশস্যের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। বসতঘরের বেশি ক্ষতি হয়েছে, ধারারগাঁও, গোদারগাঁও, মাইজবাড়ি, আলমপুর গ্রামে। এছাড়াও মসজিদ, মাদ্রাসার টিনের চাল নষ্ট হয়েছে। মোল্লাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল হক জানান, শনিবার ভোররাতে শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। এতে ইউনিয়নের শতাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। শিলাবৃষ্টির আঘাতে বসতঘর ও রবিশস্যের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। বেশি ক্ষতি হয়েছে দরিয়াবাজ, ভবানীপুর, লালপুর, পীরপুর ও সাদকপুর বেশি ক্ষতি হয়েছে। গৌরারং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফুল মিয়া জানান, শনিবার ভোররাতে শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। শিলাবৃষ্টির আঘাতে বসতঘর ও রবিশস্যের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। সারা ইউনিয়নজুড়ে শিলাবৃষ্টি ও ঝড় হয়েছে। রঙ্গারচর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান মো. আব্দুল হাই জানান, শনিবার ভোররাতে শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। শিলাবৃষ্টির আঘাতে বসতঘর ও রবিশস্যের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। সারা ইউনিয়নজুড়ে শিলা বৃষ্টি ও ঝড় হয়েছে। শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে অনেক বসতঘরের টিনের চাল ল-ভ- ও ঝাঝরা হয়ে গেছে। ইউনিয়নের বিরামপুর, রঙ্গারচর, হরিনাপাটি, বৃন্দাবন নগর, শিংপুর হাটি, ভল্লবপুর, হাসাউড়া, চাঁনপুর চাতলপাড় গ্রামসহ অন্যান্য গ্রামগুলিতে ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com