স্টাফ রিপোর্টার ::
‘ঠিকাদারদের দেখলেই মাইর দিবায়, একটা মাইরও যেন মাটিত পরে না। ইতার লাগি আমরার হারা বছর খুরাকি গেছে গি।’
গতকাল রোববার সন্ধ্যায় খরচার হাওরের রাধানগর পয়েন্টের কাছে কৃষক ইস্কন্দর মিয়া এ কথা বলছিলেন।
শুধু ইস্কন্দর মিয়া নন, জেলার হাজার হাজার কৃষকের ক্ষোভের শেষ নেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদারদের উপর।
এদিকে সদর উপজেলার নীলপুর বাজার এলাকায় এক ঠিকাদারকে স্থানীয় কৃষকরা গণধোলাই দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
খরচার হাওরের বাহাদুরপুর থেকে ফুলকুঁড়ি পয়েন্টে এক ঠিকাদার কাজ করেছেন। ওই ঠিকাদারের দেখা না পেয়ে শহীদ মিয়া নামের এক কৃষক বলেন, যাদের একদিন জামা-কাপড় ছেঁড়াফাড়া ছিল, তারা আজ হাওরের ঠিকাদারি কাজ পেয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকার বাড়ি করছে, গাড়ি কিনছে। আর আমরা প্রতি বছর ফসল হারিয়ে রাস্তায় রাস্তায় রুটিরুজির আশায় ঘুরছি।
এদিকে ঠিকাদার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শত শত ফসল হারানো কৃষক-জনতা। রোববার বেলা ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের আস্তমা এলাকায় অবরোধ করে রাখেন বিক্ষুব্ধরা।
উপজেলা আ.লীগ সভাপতি তহুর আলী বলেন, দেখার হাওর তলিয়ে যাওয়ায় ঘরে ঘরে অভাব দেখা দিয়েছে। বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে মানুষ বিপদে পড়েছে। পাউবো কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের আমি ফাঁসি দাবি করি।
তারেক নামের আরেক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, প্রতি বছর বৈশাখের আগে দু’এক টুকরি মাটি ফেলা হয়। আর সব টাকা লুটপাট করা হয়। যারা এসবের সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত।
তসকির মিয়া ধারদেনা করে তিন কিয়ার জমিতে বোরো ধান রোপণ করেছিলেন। ঢল ও বৃষ্টির প্রথম ধাক্কায় সব জমিই তার তলিয়ে গেছে। তিনি বলেন, ঠিকাদাররে ফাইলে মাইরা হাড্ডিগুড্ডি ভাঙলাম নে, ইতার লাগি আমার সব জমি পানিত ডুবছে।
হাওর বিষয়ে কাজ করেন সালেহীন চৌধুরী শুভ। তিনি বলেন, প্রতি বছর ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে বাঁধ সংস্কারের গাফিলাতির। শেষ সময়ে তারা যে কাজ করে সে কাজ আর হাওরের ফসল রক্ষা করতে পারে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আফসার উদ্দিন বলেন, বাঁধ সংস্কারে গাফিলাতির অভিযোগ সঠিক নয়। যদি কারো বিরুদ্ধে এই অভিযোগ পাওয়া যায়, তাহলে তার বিল আটকে দেয়া হয়।