1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০১:২২ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

ডোবরায় ডুবছে হাওরের ফসল

  • আপডেট সময় শনিবার, ১ এপ্রিল, ২০১৭

শামস শামীম ::
হাওর এলাকার নদ-নদী খাল খননের অভাবে পানি ধারণের প্রাকৃতিক আধার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে বৃষ্টি ও ঢলের পানি অপসারণের সুযোগ না সেই পানি মুহূর্তেই নিম্নাঞ্চল হিসেবে হাওরে গিয়ে আঘাত করছে। স্থানীয়ভাবে এটাকে ‘ডোবরা’ বলা হয়। গত এক দশক ধরে এভাবেই ডোবরায় ডুবাচ্ছে সুনামগঞ্জ জেলার হাওরের একমাত্র বোরো ফসল। গত তিন দিনের বৃষ্টিতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্মিত বাঁধ ভেঙে, বাঁধ উপচে জেলার ৫টি হাওরের উঠতি বোরো ধান তলিয়ে যাচ্ছে। অন্যান্য হাওরের বোরো ধানও ঝুঁকিতে আছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাওরাঞ্চলের নদ-নদীর তলদেশ ভরাটের ফলে পানির রিজার্ভার নষ্ট হয়ে যাওয়ায় নিম্নাঞ্চল হাওরে মওসুমে পানির চাপ বাড়ায় ফসলহানি ঘটে।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত ৩ দিন ধরে সুনামগঞ্জে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃদ্ধি পেয়েছে পাহাড়ি ঢলও। এর ফলে হাওরে পানির চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঝুঁকির মুখে পড়েছে ১৩৩টি হাওরের কাঁচা বোরো ধান। সূত্রে মতে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর ও দিরাই উপজেলার ৫টি হাওরের ১৭শ হেক্টর জমির সম্পূর্ণ বোরো ধান তলিয়ে গেছে। ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্রসোনার তাল, ডুবাইল, পাশোয়া, গুরমা ও মেঘনা হাওরের প্রায় ১৫০০ হেক্টর জমির বোরো ধান বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সোনাতলা কাইক্কার দাইর হাওরের ২০০ হেক্টর জমির বোরো ফসল তলিয়ে গেছে। দিরাই উপজেলার বরাম হাওরের কাদিরপুর সংলগ্ন তুফানখালি বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকতে শুরু করেছে শুক্রবার সকাল থেকে। স্থানীয় কৃষকরা বাঁশ, বস্তা সংগ্রহ করে পানি আটকানোর চেষ্টা করছে। এই হাওরে ৩ হাজার ২০০ হেক্টর জমি রয়েছে। এছাড়াও ধর্মপাশা উপজেলার টগার হাওর, বোয়ালিয়া, শালদিঘা, কাইল্যানি, বাইনচাপড়া, ফোল দোয়ারি, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওর, সদর ও দক্ষিণ উপজেলা দেখার হাওর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার সাংহাই হাওর, তাহিরপুর উপজেলার শনি ও মাটিয়ান হাওর, জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়া ও মইয়ার হাওর, জামালগঞ্জ উপজেলার পাগনার হাওর, হালির হাওরসহ জেলার অন্তত ৩০টি হাওরে ডোবরার পানি ঢুকছে। এছাড়াও কৃষি বিভাগের মতে জেলার ১৩৩টি হাওরের ফসল ঝুঁকিতে রয়েছে। অন্যান্য হাওরে বিভিন্ন স্থান দিয়ে পানি ঢুকছে বলে কৃষক ও জনপ্রতিনিধিরা জানান।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্র শুক্রবার রাত পৌনে ৯টায় এ প্রতিবেদককে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত ও শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ১৭০০ হেক্টর জমির বোরো ধান তলিয়ে গেছে। যার আর্থিক ক্ষতি প্রায় ১২ কোটি টাকা।
এদিকে স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও কৃষকরা জানান, পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিতে পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি পানি উন্নয়ন বোর্ড যথাসময়ে ও যথানিয়মে বাঁধ নির্মাণ না করায়, বাঁধে মাটি না ফেলায় হাওরে পানি ঢুকছে। কোথাও কোথাও বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকছে বলে জানা গেছে। কৃষি বিভাগের মতে পাউবো’র বাঁধ ভেঙে ধর্মপাশা উপজেলার ৫ হাওরের ফসলহানি ঘটেছে।
জানা গেছে, ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৪৮টি হাওরের বোরো ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ মেরামত, সংস্কার ও নতুন বাঁধ নির্মাণে ৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছিল। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরুর কথা থাকলেও কাজ শুরু হয়েছিল এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে। যার ফলে এখনো বাঁধের কাজ শেষ হয়নি। কোন কোন বাঁধে এখনো মাটি ফেলা হয়নি। শুক্রবার সকালে ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের ডোবাইল হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধে মাটি না দেওয়ায় পানি ঢুকে ফসল তলিয়ে গেছে। এই বাঁধটি প্রথমে পিআইসিকে (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) দেওয়া হলেও পরবর্তীতে পানি উন্নয়ন বোর্ড একজন ঠিকাদারকে বাঁধ নির্মাণের দায়িত্ব দিয়ে নিজেরাই তদারকির দায়িত্ব নিয়েছিল। ওই ঠিকাদার কাজ না করানোয় পানি ঢুকে ফসল তলিয়ে গেছে বলে কৃষকরা জানান। এছাড়াও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কয়েকজন মেসার্স গুডম্যান এন্টারপ্রাইজের নামে নিজেরাই ঠিকাদারের কাজ করছেন বলে অভিযোগ আছে।
সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমানুর রাজা চৌধুরী বলেন, ডুবাইল বাঁধে মাটি না ফেলায় পানি ঢুকে হাওরের ফসল তলিয়ে গেছে। পার্শ্ববর্তী অন্যান্য হাওরেরও একই অবস্থা। ফসল পাকার আগেই হাওর ডুবে যাওয়ায় এবার কৃষকরা বড় ক্ষতির মুখে পড়বে। এক মুঠো ধানও এবার গোলায় তোলতে পারবেনা কোন কৃষক। ধানে থোর আসার আগে গত কয়েক বছরে এমনভাবে ফসলহানি ঘটেনি বলে তিনি জানান।
কৃষক নেতা ও জেলা সিপিবি’র সভাপতি চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের সময়েই আমরা হাওরাঞ্চলের নদ-নদী খননের দাবি জানিয়েছিলাম। সেই দাবি এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। হাওরাঞ্চলের নদ-নদী খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টিপাতেই হাওর তলিয়ে যায়। প্রতি বছর এভাবে অর্ধেকেরও বেশি ফসল নষ্ট হচ্ছে। তিনি বলেন, ডোবরার পানি এখন কৃষকের সর্বনাশ ডেকে আনছে। অবিলম্বে নদী খনন না হলে আগামী এক দশক পর কৃষক আর জমিতে ধান লাগাবে না।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আফসর উদ্দিন বলেন, হঠাৎ প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে বিভিন্ন হাওরে পানি ঢুকে ফসলহানি ঘটাচ্ছে। ধর্মপাশায় চন্দ্রসোনার তাল হাওরের ফসল তলিয়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি। এছাড়াও তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, জগন্নাথপুর, বিশ্বম্ভরপুর হাওরের ফসলও ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানান।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জাহেদুল হক বলেন, বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত কয়েকটি উপজেলায় বাঁধ ভেঙে, বাঁধ উপচে হাওরে পানি ডুকছে। ধর্মপাশা ও বিশ্বম্ভরপুরে প্রায় ১৭০০ হেক্টর জমির ফসল ডুবে গেছে। অন্যান্য হাওরের অবস্থাও ঝুঁকিপূর্ণ জানিয়ে তিনি বলেন, এ বছর ফসল পাকার আগেই দুর্যোগের মুখে পড়েছে। ফসল পাকতে আরো ২০দিন সময় লাগবে বলে তিনি জানান। তিনি আরো জানান, এবছর ২লাখ ১৫ হাজার ৮১৭ হেক্টর জমিতে বোরো লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হলেও ফলন হয়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার ৮২ হেক্টর জমিতে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক সুজিত কুমার বালা বলেন, হাওরাঞ্চলে মওসুমের বৃষ্টিপাত ও ঢলের পানি সংরক্ষণের প্রাকৃতিক আধার নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে বৃষ্টিপাত হলে নিম্নাঞ্চল হিসেবে হাওরে পানির চাপ বাড়ে। এতে ফসলহানি ঘটে। এ কারণে আবহাওয়া বিভাগও পূর্বাভাস দিতে পারেনা। যার ফলে কৃষকরা নিজেদের করণীয় বুঝে উঠতে পারেনা। তিনি বলেন, আমরা হাওরাঞ্চলের কৃষকদেরকে আবহাওয়া সংক্রান্ত নেটওয়ার্কিংয়ের আওতায় নিয়ে আসার কাজ করছি। হাওরাঞ্চলে প্রায় ৩০টির মতো আবহাওয়া স্টেশন স্থাপিত করা হবে। এর মাধ্যমে কৃষক এলাকায় থেকে তার ও অন্যান্য এলাকার আবহাওয়া বিষয়ে জানতে পেরে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com