স্টাফ রিপোর্টার ::
ড. জয়া সেনগুপ্তার স্বামী জাতীয় নেতা ও বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছিলেন ৮ বারের নির্বাচিত সাংসদ। গত ৫ ফেব্রুয়ারি এই জননেতার প্রয়াণে তৃণমূল আওয়ামী লীগের দাবির প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীক নৌকা তুলে দেয় তাঁর স্ত্রী জয়ার হাতে। সাধারণ নেতা-কর্মীরা তাকে কাছে পেয়ে আপ্লুত হন। অল্পদিনেই প্রয়াত নেতার ছায়া তাঁর মাঝে খুঁজে পান তারা। অতীতে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে যেভাবে মানুষ বারবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে নির্বাচিত করেছিলেন সেভাবে তাঁর স্ত্রী হিসেবে জয়া সেনগুপ্তাকেও গতকাল বৃহস্পতিবার উপনির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছেন। তাঁকে নিয়ে নেতাকর্মীরা এখন বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেছেন। এদিকে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই নির্বাচন সম্পন্ন করায় নির্বাচনী এলাকার সংশ্লিষ্টদের কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৫৪ মিনিটে জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ সাদেকুল ইসলাম ১১০টি ভোটকেন্দ্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ড. জয়া সেনগুপ্তা ৯৫ হাজার ৯৯৫ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন বলে জানান। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ছায়েদ আলী মাহবুব হোসেন সিংহ প্রতীকে ৪০ হাজার ৯২৯ ভোট পেয়েছেন। ৫৫ হাজার ৬৬ ভোট বেশি পেয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও সুরঞ্জিত পত্নী ড. জয়া সেনগুপ্তা নির্বাচিত হন। ২ লাখ ৫২ হাজার ৪৩০ ভোটারের এই আসনে ভোট কাস্ট হয়েছে ৫৫.৯৭ শতাংশ।
ভোটগ্রহণ শেষে রিটার্নিং কর্মকর্তা এজাহারুল ইসলাম বলেন, ১১০টি ভোটকেন্দ্রে শান্তিপ্রিয়ভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোথাও কোন অনিয়ম ও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। নির্বাচনী এলাকার সাধারণ জনতাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, সকলের সহযোগিতায় একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আমরা সম্পন্ন করতে পেরেছি।
ড. জয়া সেনগুপ্তার বিজয়ের আভাস পেয়ে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকেই দিরাই-শাল্লার রাজপথে নেমে আসেন সাধারণ নেতাকর্মীরা। তারা প্রয়াত নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের নামে স্লোগান দিয়ে জয়া সেনকে অভিনন্দন জানান। স্থানীয় যুবলীগ দিরাই পৌর চত্বরে সন্ধ্যা ৬টায় তাৎক্ষণিক সভা করে জনগণকে অভিনন্দন জানায়। বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢোল করতালের বাদ্য নিয়ে সভাস্থলে ছুটে আসেন উৎফুল্ল নেতাকর্মীরা। এই সভায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি পক্ষের দিকে ইঙ্গিত করে নেতাকর্মীরা দলীয় প্রার্থীর বিরোধী একটি পক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন। উল্লেখ্য সম্প্রতি সিলেটে অনুষ্ঠিত তৃণমূল আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতার দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেন। তারা অভিযোগ করেন কিছু আওয়ামী লীগের নেতা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে রাতে কাজ করছেন, তবে দিনে তারা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে লোক দেখানো কাজ করেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এসব দ্বিমুখী নেতাদের দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করার অনুরোধ জানান।
এদিকে বিজয়ের পর পৌনে ১১টায় দৈনিক সুনামকণ্ঠকে ফোন করে ভোটারদের কৃতজ্ঞতা জানান বিজয়ী প্রার্থী ড. জয়া সেনগুপ্তা। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে ভোটাররা জননেত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থী হিসেবে আমাকে নির্বাচিত করেছেন। আমি সকল ভোটারের প্রতি কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, মহান স্বাধীনতার মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভোটাররা স্বাধীনতার প্রতীক নৌকায় ভোট দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রেখেছেন। আশা করি আগামীতেও ভোটাররা আমার পাশে থাকবেন। আমার প্রয়াত স্বামীর দেখানো পথেই আমার জীবন উৎসর্গ করব। সাধারণ মানুষের কাক্সিক্ষত সেবাই হবে আমার লক্ষ্য।