1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৫:৩৭ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

অন্তরঙ্গ আলাপনে সরওয়ার নিজাম : সুনামগঞ্জ আমার রক্তের ভেতরে মিশে আছে

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ, ২০১৭

স্টাফ রিপোর্টার ::
সুনামগঞ্জ মহকুমা প্রশাসক বি.আর. নিজামের সন্তান, অবসরপ্রাপ্ত কমোডোর সরওয়ার নিজামকে নিয়ে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাঠাগারে অন্তরঙ্গ আলাপন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার রাতে অনুষ্ঠিত এই আলাপনের শহরের সুধীজন ৫৭ বছর আগে চলে যাওয়া এক কিশোর ও তার সুযোগ্য পিতাকে নিয়ে নানা স্মৃতি রোমন্থন করেন। পুরনো বন্ধুদের কাছে পেয়ে আপ্লুত হন আমন্ত্রিত অতিথি সরওয়ার নিজাম। বি. আর নিজামের পুরনো কয়েকজন সহকর্মীও তাঁর কর্মময় জীবন নিয়ে আলোচনা করেন। তারা সুনামগঞ্জের অবকাঠামো গঠনে বি.আর নিজামের কথা স্মরণ করেন।
শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাঠাগারের সহ-সভাপতি পৌর মেয়র আয়ূব বখত জগলুলের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সালেহ আহমদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত অন্তরঙ্গ আলাপন অনুষ্ঠানে শহরের বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সুধীজন বক্তব্য রাখেন।
সংবর্ধিত ব্যক্তিত্ব সরওয়ার নিজাম পুরনো দিনের স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, আমরা জন্মসূত্রে চিটাগাংয়ের। কিন্তু মনেপ্রাণে সুনামগঞ্জী। সুনামগঞ্জ আমাদের পুরো পরিবারের রক্তের সঙ্গে মিশে আছে। আমার ৭০ বছরের জীবনের ১০ ভাগ সময় এখানে কেটেছে। এখানে আমি প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে পড়েছি। পুরনো স্মৃতি স্মরণে এনে তিনি বলেন, ৫৭ বছর আগে চলে গেলেও একদিনের জন্যও সুনামগঞ্জকে ভুলতে পারিনি। তিনি তার প্রয়াত পিতা ও সুনামগঞ্জের প্রাক্তন মহকুমা প্রশাসক বি আর নিজাম সম্পর্কে বলেন, বাবা কর্মসূত্রে এসে এখানে কয়েক বছর থেকে চলে গেলেও কখনো সুনামগঞ্জকে ভুলতে পারেননি। অন্যত্র গিয়েও তিনি এই জেলার উন্নয়নে কাজ করেছেন। কলেজের উন্নয়ন ও লাইব্রেরির উন্নয়নে কাজ করেছেন। লাইব্রেরির জন্য বই সংগ্রহ করে দিয়েছেন।
সরকারি জুবিলী স্কুলের স্মৃতি বিষয়ে তিনি বলেন, আমি বিদ্যালয়ে স্কাউট করতাম। ড্রাম বাজাতাম। আজ আমার সতীর্থ বন্ধুরা আমাকে যে সম্মান দিয়েছে তা আজীবন মনে থাকবে। পাবলিক লাইব্রেরির স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, আমার আম্মা এখান থেকে শৈশবে আমাদের নাচ গান শিখাতেন। আমরা এখানে পাঠের প্রথম শিক্ষা নিয়েছিলাম।
১৯৭১ সনের স্মৃতি সম্পর্কে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আমি নৌবাহিনীর অফিসার ছিলাম। সেখান থেকে সাবমেরিন ছিনতাই করে পালাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেই বিষয়টি একজন বাঙালি অফিসার পাকিস্তানিদের অবগত করলে বিচারে আমার ফাঁসির আদেশ হয়। পরবর্তীতে তিন বছর জেল খেটে বঙ্গবন্ধুর কল্যাণে দেশে ফিরে আসি।
সরওয়ার নিজামের সতীর্থ শাহগির বখত ফারুক বলেন, এই পাঠাগারের ৫ দশকের ছায়াতরু পড়ে সরওয়ার নিজামের একটি লেখায় আমার ও জাকেরীনের নাম পাই। তারপরেই আমাদের হারিয়ে যাওয়া বন্ধুটিকে খুঁজে বের করি। গত বছর লন্ডনে তার সঙ্গে আমার দেখা হয়। এই লাইব্রেরির মাধ্যমেই আমার বন্ধু তার শিকড়ের সন্ধান পেয়েছে।
সরওয়ার নিজামের অপর সতীর্থ সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন বলেন, বি. আর নিজাম আমাদের সুনামগঞ্জের সকল মৌলিক স্থাপনা নির্মাণের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন। আজ ৫৭ বছর পরে আমার শৈশবের বন্ধুটিকে নিয়ে তার স্মৃতিময় জায়গা ঘুরে বেড়িয়েছি। সে হারানো শৈশব ফিরে পেয়ে আপ্লুত হয়েছে।
ব্রিগেডিয়ার হুমায়ুন বখত মুহিত বলেন, আজ যখন আমার বড় ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের অতিথি সরওয়ার নিজাম মহোদয়ের সঙ্গে আসছিলাম তখন ৫৭ বছর আগের স্মৃতি তিনি রোমন্থন করছিলেন। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক নিয়ে কথা বলছিলেন। এই সুনামগঞ্জ তার নাড়ির সঙ্গে কতটা জড়িয়ে আছে এই কিছু সময়ের যাত্রায় বুঝতে পেরেছি। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একজন মেধাবী অফিসার হিসেবে এখনো স্মরণীয়।
বি. আর নিজামের সময়ের সহকর্মী খুরশিদ আহমদ বলেন, সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ স্থানান্তরে বি.আর নিজামের অবদান অনস্বীকার্য্য। তিনি এই কলেজের প্রতিটি গাছ-পালা লাগিয়েছিলেন।
বিশিষ্ট আইনজীবী হুমায়ূন মঞ্জুর চৌধুরী বলেন, সুনামগঞ্জের ইলেকট্রিক সাপ্লাই প্রতিষ্ঠায় বি.আর নিজামের অবদান ভোলার নয়। তিনি ছাতকের কৈতক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায়ও ভূমিকা রাখেন।
অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমি বি. আর নিজামের সঙ্গে চাকরি করেছি। তিনি যখন সুনামগঞ্জের এসডিও আমি তখন ধর্মপাশার তহশিলদার। সরকার এই সময়ে প্রথমে নারীদের সরাসরি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ তৈরি করে। তিনি ধর্মপাশায় এ বিষয়ে প্রচারণার জন্য গিয়েছিলেন। তখন অনেক খাজনা বাকি ছিল। তিনি খাজনার লিস্ট এনে আমাকে কয়েকজনের নাম দিতে বলেন। একজনকে ধরে এনে তিনি খাজনা আদায় না করলে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। পরে সকল নেতারা ওই ব্যক্তির পক্ষ নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানালে তিনি তাদের বলেন, এই এলাকার সকল বকেয়া খাজনা আদায় করার অঙ্গীকার করলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। এই ঘটনার পর রাতে লাইট জ্বালিয়ে খাজনা আদায় করেছি। মানুষ পাগল হয়ে বকেয়া খাজনা পরিশোধ করতো। এভাবে সুনামগঞ্জের উন্নয়নে কাজ করেছেন তিনি।
অ্যাডভোকেট হোসেন তওফিক চৌধুরী বলেন, সুনামগঞ্জ মহিলা সমিতি গঠনে বি.আর নিজামের স্ত্রী শামছুন্নেছা বেগমের অবদান রয়েছে। অ্যাডভোকেট স্বপন কুমার দেব বলেন, এসডিওর জিপ গাড়ি থাকলে বি. আর. নিজাম সাইকেল চড়িয়ে অফিসে যেতেন। সুনামগঞ্জের অবকাঠামো উন্নয়নে তার অবদান ভোলার নয়।
অ্যাডভোকেট বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু বলেন, সুনামগঞ্জে অনেকেই এসেছিলেন। তাদেরকে কেউ মনে রাখেনি। কিন্তু সুনামগঞ্জবাসী বি. আর নিজামকে তাঁর কর্মের কারণে মনে রেখেছে। তিনি আমলাগিরি করেননি। সাধারণ মানুষের সেবক হিসেবে কাজ করেছেন। সুনামগঞ্জ সিনেমা হল প্রতিষ্ঠায়ও বি. আর নিজামের অবদানের কথা স্মরণ করেন তিনি।
পৌর মেয়র আয়ূব বখত জগলুল বলেন, যখনই পাবলিক লাইব্রেরি, সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠার কথা উঠে তখনই আমরা শ্রদ্ধায় বি. আর. নিজামকে স্মরণ করি। সুনামগঞ্জের ইলেকট্রিসিটি, সরকারি কলেজ স্থানান্তরসহ নানা কারণে সুনামগঞ্জবাসীর কাছে তিনি অমর হয়ে আছেন। তিনি বলেন, আরো অনেক এসডিও এসেছেন সুনামগঞ্জের মানুষ তাদের মনে রাখেনি। কিন্তু বি.আর. নিজামকে তার কাজের জন্য মানুষ মনে রেখেছে। তিনি আমলা ছিলেন না সাধারণ মানুষের সেবক ছিলেন। আমাদের সুনামগঞ্জবাসীর হৃদয় জয় করেছিলেন তিনি। আমাদের আলোকিত করে গেছেন।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে সরওয়ার নিজামের অপর সতীর্থ অ্যাডভোকেট রইস উদ্দিন আহমদও স্মৃতিচারণ করেন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com