1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৮:০২ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

ঝুঁকিতে হাওরের বোরো ফসল

  • আপডেট সময় রবিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

বিশেষ প্রতিনিধি ::
হাওরজুড়ে কচি বোরো ধানগাছে সবুজের ঢেউ। হাওয়ায় কাঁপছে লকলকে উঠতি ধান। থোর আসার সময় এখনো আসেনি। এরই মধ্যেই হানা দিয়েছে আগাম পাহাড়ি ঢল। ফলে ডুবতে বসেছে হাওরের বোরো ফসল। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শুরু না হওয়ায় পানি ঢুকে তলিয়ে নিচ্ছে হাওর। গত তিনদিনে ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্রসোনার তাল হাওরের প্রায় ৩০০ একর জমির ধান তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় ১৬০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। তাছাড়া তাহিরপুর উপজেলার ৪টি বড় হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ যথাসময়ে শুরু না হওয়ায় ভাঙ্গা বাঁধ দিয়ে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও কৃষকরা জানিয়েছেন এই সময়ে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বেশিরভাগ প্রকল্পেরই কাজ শুরু হয়নি।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক ২৩০টি প্রকল্পের অধীনে প্রায় ৮০ কি.মি. ফসলরক্ষা বাঁধের নির্মাণ, সংস্কারে ১০ কোটি ৭২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দরপত্রের মাধ্যমে আরো প্রায় ৩০০ কি.মি. বাঁধ নির্মাণে ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার ও জনপ্রতিনিধিদের মতে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি এখনো বেশিরভাগ স্থানেই কাজ শুরু করেনি। পাউবো জানিয়েছে এ পর্যন্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি প্রায় ৬০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করেছে। কৃষক ও জনপ্রতিনিধিরা পাউবো’র এই ‘আজগুবি’ তথ্যকে উড়িয়েই দেননি তারা জানান, এখন পর্যন্ত গড়ে ত্রিশ ভাগও কাজ হয়নি। জানা গেছে নিয়মানুযায়ী গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শুরু করে ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়ার কথা ছিল। সময় মতো কাজ না হওয়ায় বৃষ্টির পানি ও পাহাড়ি ঢলে ভাঙ্গা বাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে হাওরের ফসল তলিয়ে নিচ্ছে। ঝুঁকিতে আছে অন্যান্য হাওরের ফসল।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্রসোনার তাল হাওরের শয়তানখালি বাঁধ ভেঙ্গে এই হাওরের প্রায় ৩০০ একর জমির কাচা বোরো ধান তলিয়ে গেছে। তাহিরপুরের সন্যাসি, এরালিয়া কোনা, গণিয়াকুড়ি, টাঙ্গুয়ার হাওর, সমসার হাওরসহ কয়েকটি হাওরের কাজ শুরু না হওয়ায় নিমজ্জিত হচ্ছে ফসল। এছাড়াও দিরাই, শাল্লা, জগন্নাথপুর, জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ও ছাতক-দোয়ারাবাজারেও ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ সবেমাত্র শুরু হয়েছে বলে কৃষক ও জনপ্রতিনিধিরা জানান। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যথাসময়ে কাজ শুরু না হওয়ায় তাহিরপুরের একাধিক হাওরের ফসল পাহাড়ি ঢলের ঝুঁকিতে রয়েছে। ওই উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওর ও গণিয়াকুড়ি হাওরের নিম্নাংশের জমি তলিয়ে গেছে।
ধর্মপাশা উপজেলার মান্দারবাড়ি গ্রামের কৃষক জালাল মিয়া বলেন, গত বছরও আমাদের পাকা ধান তলিয়েছিল। এবার পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির গাফিলতির কারণে চন্দ্রসোনারতাল হাওরের উঠতি ধান তলিয়ে গেলো। যথাসময়ে কাজ শুরু হলে ফসলহানি ঘটতোনা বলে তিনি জানান।
জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তাদীর আহমদ বলেন, গত বছরের ফসলহারানো কৃষকের আর্তনাদ এখনো থামে নাই। সবেমাত্র তারা ফসল বুনেছিলেন। এর মধ্যেই সেই ফসল ঝুঁকিতে পড়েছে। তিনি বলেন, প্রাক্কলন অনুযায়ী সময় মতো কাজ শুরু না হওয়ায় বাঁধ টেকসই হয় না। যার ফলে বৃষ্টি বা পাহাড়ি ঢল শুরুর চাপেই বাঁধ ভেঙ্গে ফসলের ক্ষতি হয়।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, তাহিরপুরের ৯০ ভাগ ফসল গেল বছর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবার মৌসুমের শুরুতেই ৬টি হাওরের ফসল ঝুঁকিতে আছে। নির্ধারিত সময়ে কাজ না হওয়ায় ভাঙ্গা দিয়ে বিভিন্ন হাওরে পানি ঢুকছে। তিনি বলেন, এখন ৮০-৯০ ভাগ কাজ হওয়ার কথা থাকলেও মাত্র ৩০ ভাগ কাজ হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. জাহেদুল হক বলেন, ধর্মপাশার চন্দ্রসোনারতাল হাওরের ৩০০ একর জমির ধান তলিয়ে প্রায় ১৬০ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ওই হাওরে ফসলরক্ষা বাধের কাজ শুরু না হওয়ায় ফসলহানি ঘটেছে বলে তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, তাহিরপুরের একাধিক হাওরের বাঁধে যথাসময়ে কাজ শুরু না করায় ফসল ঝুঁকির মুখে রয়েছে। পুরো জেলার ফসল রক্ষা বাঁধের কাজেই বিলম্ব হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আফসর উদ্দিন বলেন, ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্রসোনার তাল হাওরের বাঁধের কাজে স্থানীয় পিআইসির গাফিলতি ছিল। অন্যান্য বাঁধের কাজ প্রায় ৬০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। হঠাৎ পাহাড়ি ঢলের চাপে তাহিরপুর ও ধর্মপাশার কয়েকটি হাওরে পানির চাপ বাড়ছে। তবে ধর্মপাশা বাদে অন্য কোথাও কোন ক্ষতি হয়নি বলে তিনি জানান।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com