মাহমুদুর রহমান তারেক ::
৬ সন্তানের জনক ছিলেন আনিস মিয়া। পরিবারের সচ্ছলতার জন্য বাড়তি রোজগারের আশায় গিয়েছিলেন সিলেটের কোম্পানিগঞ্জে। সেখানে গিয়ে কাজ নেন শাহ আরেফিন টিলা পার্শ্ববর্তী একটি কোয়ারিতে। প্রতিদিনের মত শুক্রবার রাতেও আনিস টিলা পার্শ্ববর্তী একটি গর্তে পাথর তোলার কাজ করতে যান অন্য শ্রমিকদের সঙ্গে। পাথর তোলার সময় হঠাৎ উপর থেকে মাটি গর্তের মধ্যে পড়ে। এতে চাপা পড়েন কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা। এতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় আনিস মিয়ার। আহত হন সুনামগঞ্জের আরো দুই শ্রমিক।
শুধু আনিস মিয়া নয় বৃহস্পতিবার গোয়াইনঘাটের বিছনাকান্দিতে একইভাবে পাথর কোয়ারির গর্তে মাটি চাপা পড়ে নিহত হন তিন জন। তিন জনের লাশ গায়েব করার চেষ্টা করছিল কোয়ারির মালিক। সিলেট পুলিশ মারফত খবর পেয়ে সুনামগঞ্জ পুলিশ সদর উপজেলার কাঠইর ইউনিয়নের গুলেরগাঁও গ্রাম থেকে জাকির হোসেন ও তোলাই মিয়া নামের দুই শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করে। গোয়াইনঘাটের স্থানীয় পুলিশকে অবহিত না করে কোয়ারির মালিকপক্ষ দুই শ্রমিকের লাশ বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। অভিযোগ উঠেছে, মালিকপক্ষ নিহতদের পরিবারের লোকজনকে প্রথমে শ্রমিকদের স্বাভাবিক মৃত্যুর কথা জানায়। পরে পরিবারের লোকজনকে টাকা দেয়ার চেষ্টা করে কোয়ারির মালিকপক্ষ।
সদর উপজেলার আহমেদাবাদ গ্রামের বাসিন্দা নিহত শ্রমিক আনিস মিয়ার মা মনোয়ারা বেগম বলেন, মাত্র তিন দিন হয়েছে আমার ছেলে আনিস সন্তানের বাবা হয়েছে। সন্তানের মুখটাও শেষবারের দেখে যেতে পারলো না। আমার ছেলে মারা যাওয়ার ঘটনায় বিচার চাই।
নিহত আনিসের বোনের জামাই জমির আলী বলেন, সে মাছ ধরার কাজ করতো গ্রামে। একটু বেশি টাকা আয়ের আশায় কোয়ারিতে কাজ করতে গিয়েছিল, ফিরলো লাশ হয়ে। যারা শ্রমিকদের দিয়ে এসব ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করায় তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত।
নিহত আনিসের ভাই আলিম উদ্দিন বলেন, সুনামগঞ্জে শত শত শ্রমিক কাজ করে সিলেটের কোয়ারিগুলোতে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে তারা। মারা গেলে কোন দায় নেয় না কোয়ারির মালিকপক্ষ।
সদর উপজেলার কাঠইর ইউনিয়নের গুলেরগাঁও গ্রামের নিহত দুই শ্রমিকের পরিবারের চলছে শোকের মাতম। গতকাল রোববার গিয়ে দেখা যায় কান্নাকাটি করছেন নিহত পরিবারের সদস্যরা।
নিহত তোলাই মিয়ার মা মাইমুনা খাতুন জানান, আমার তোলাইয়ের রোজগারের টাকায় আমার সংসার চলতো। আমার পুত্র মারা যাওয়ায় উপার্জনক্ষম কেউ নেই সংসারে।
নিহত জাকিরের পিতা নজির মিয়া জানান, কাজে সপ্তাহ পেরুনোর আগেই আমার জাকির লাশ হয়ে বাড়ি ফিরলো। আমি চাই না আর কেউ কোয়ারিতে কাজ করতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরুক।
সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) সুজ্ঞান চাকমা বলেন, যারা শ্রমিকদের নিয়ে কোয়ারিতে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।