মো. আমিনুল ইসলাম ::
ছোট্ট কুঁড়েঘরের টিনের চালায় অসংখ্য ছিদ্র। বাঁশের খুঁটিগুলো নড়বড়ে। অনেকটাই ভেঙে পড়ার অবস্থা। সে ঘরেই ৬শিশু সন্তান আর স্ত্রী নিয়ে সংসার সাজিয়েছিলেন দরিদ্র আনিস মিয়া। পরিবার নিয়ে ছিল স্বপ্ন। সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে টাকা উপার্জন করতেই সম্প্রতি সিলেটের কোম্পানিগঞ্জে পাথর কোয়ারিতে গিয়েছিলেন তিনি। ৩৫ বছর বয়সি আনিস মিয়া সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের আহমদাবাদ গ্রামেই বসবাস করতেন। তার পিতার নাম মৃত কমর উদ্দিন। ৬ সন্তানের মধ্যে ৪ জনই কন্যা। আর ২জন ছেলে সন্তান। শনিবার সব ছোট ছেলের জন্মের ৩দিন। ছোটছেলের পৃথিবীতে আসার খবরটি কোম্পানিগঞ্জ পাথর কোয়ারিতে কর্মরত আনিস মিয়ার কাছে পৌঁছলেও ছেলের মুখ দেখা হল না তার। আজ রোববার আনিসের লাশ নিজ বাড়িতে নিয়ে আসা হবে। গতকাল শনিবার বিকেলে কোম্পানিগঞ্জের শাহ আরেফিন টিলায় পাথর সংগ্রহ করতে গেলে টিলা ধ্বসে মাটি চাপায় মৃত্যু হয় আনিসের।
আনিসের মৃত্যু সংবাদ আহমদাবাদ গ্রামে তার নিজ বাড়িতে পৌঁছে শনিবার সন্ধ্যার পর। আর এরপর থেকেই আনিস মিয়ার মা মনোয়ারা বেগমের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠে গোটা এলাকা।
আনিস মিয়ার বোনের জামাই মো. জমির আলী জানান, গত সপ্তাহের রোববার কোম্পানিগঞ্জের পাথর কোয়ারিতে কাজ করতে যান আনিস। এর আগে তিনি এলাকায় মৎস্য শিকারের কাজ করেই সংসার চালাতেন। আনিস মিয়ারা ছিলেন ৫ভাই। এদের মধ্যে তিনিই ছিলেন সবার বড়। সংসারের উপার্জনের ভরসা ছিলেন আনিস। পাশাপাশি তার সঙ্গে কোম্পানিগঞ্জে কাজে গিয়েছিলেন ছোটভাই শফিক মিয়া ও আলিম উদ্দিন। আজ রোববার বড় ভাই আনিস মিয়ার লাশ নিয়ে তাদের ফেরার কথা রয়েছে।
আনিসের মা মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমরার আর কোনতা রইলো না, আমার ছেলের এতোগুলা ছোট ছোট ছেলে মেয়ের আর কোন ভবিষ্যৎ থাকলো না, তারা কেমনে বাঁচবো? আমরা ওখনে কি করমু? আল্লায় এই কোন খেলা খেললো? আমি আমার ছেলের এমন মরণের লাগি কোয়ারির মালিকের বিচার চাই’।
এদিকে, সিলেটে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ফের মাটি চাপায় কো¤পানিগঞ্জের শাহ আরফিন টিলায় সুনামগঞ্জের আরো এক পাথর শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় শুরু হয়েছে আলোচনা। জানা যায়, টিলা কেটে পাথর উত্তোলনকালে গর্তের মাটিতে চাপা পড়ে মৃত্যু হয় পাথর শ্রমিক আনিস মিয়ার। এ ঘটনায় আহত হন আরও দুই জন। শনিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। বাকি আহত দুজন হচ্ছেন সদর উপজেলার ইচ্ছাছড়া গ্রামের ওয়ারিছ আলীর ছেলে গফুর (২৫) এবং তাহিরপুর উপজেলার আনোয়ারপুর গ্রামের সামছু মিয়ার ছেলে মিজানুর রহমান (২৮)।
কো¤পানিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) রুহুল আমিন হতাহতের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মাটি চাপায় শ্রমিকের মৃত্যুর খবর পেয়ে থানার এসআই মোয়াজ্জেমের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তারা হতাহতদের উদ্ধার করে। এছাড়া তাৎক্ষণিকভাবে একজনকে আটকও করা হয়েছে।
এদিকে, এ ঘটনায় কো¤পানিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বায়েছ আলমকে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) সুজ্ঞান চাকমা।