স্টাফ রিপোর্টার ::
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার বিছনাকান্দি পাথর কোয়ারিতে বৃহস্পতিবার রাতে গর্ত থেকে পাথর উত্তোলনের সময় মাটি চাপায় নিহত তিনজনের মধ্যে দু’জনের লাশ সুনামগঞ্জ থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার দুপুরে সদর উপজেলা কাঠইর ইউনিয়নের গুলেরগাঁও থেকে লাশ দুটি উদ্ধার করা হয়। অপর এক শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে নেত্রকোনার খালিয়াজুড়ি উপজেলার চানপুর গ্রাম থেকে।
নিহতরা হচ্ছেন কাঠইর ইউনিয়নের গুলেরগাঁও গ্রামের নজির হোসেনের পুত্র জাকির হোসেন (১৮) ও মৃত ওয়াতির আলীর পুত্র তোলাই মিয়া (৩০) এবং নেত্রকোনার কালিয়াজুড়ি উপজেলার চানপুর গ্রামের নির্মলের ছেলে পরিমল (২৫)।
অভিযোগ উঠেছে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য শুক্রবার তাদের লাশ পুলিশের চোখ ফাঁকি শ্রমিকদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় পাথর কোয়ারির মালিক পক্ষ।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে বিছনাকান্দি পাথর কোয়ারির বাদেপাশা খেয়াঘাট সংলগ্ন একটি গর্তে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় গর্তের মধ্যে থাকা তিন শ্রমিক মাটি চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন। প্রাণহানির ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে মালিকপক্ষের লোকজন রাতেই লাশগুলো সরিয়ে ফেলে। শুক্রবার সকালে নিহত তিন জনের মধ্যে দুই জনের লাশ স্থানীয় পুলিশকে না জানিয়ে তাদের গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জে পাঠিয়ে দেয়। শুক্রবার দুপুরে সিলেট পুলিশের খবরের ভিত্তিতে দুটি লাশ উদ্ধার করে সুনামগঞ্জ সদর থানা পুলিশ। অপরদিকে, নেত্রকোনার খালিয়াজুড়ি থেকে পরিমল (৩২) নামে আরেক শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
সুনামগঞ্জ সদর ও নেত্রকোনার খালিয়াজুড়ি থানাপুলিশ পৃথক অভিযান চালিয়ে মরদেহ তিনটি উদ্ধার করে শুক্রবার রাতেই ময়নাতদন্তের জন্য ওসমানী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে প্রেরণ করেছে।
নিহত জাকিরের মামা নূর আলম জানান, আমার ভাগ্নে জাকির পাথর কোয়ারিতে কাজ করতো। বৃহস্পতিবার রাতে কোয়ারির গর্তে চাপা পড়ে সে মারা যায়। পরে একটি অ্যাম্বুলেন্স এসে দুই জনের লাশ আমাদের বাড়িতে দিয়ে যায়। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে যে লাশ পাঠানো হয়েছে তা আমাদের জানা ছিল না।
নিহত জাকিরের পিতা নজির মিয়া জানান, কাজে গিয়ে সপ্তাহ পেরুনোর আগেই লাশ হয়ে ফিরলো আমার ছেলে, এভাবেই কোয়ারির মালিকদের নিষ্ঠুরতায় আরও কতো মায়ের কোল খালি হবে তা কেউ জানে না।
নিহত তোলাই মিয়ার চাচাতো ভাই ইয়াকুব আলী বলেন, আমার হতদরিদ্র ভাই কিছু টাকার জন্য ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে মারা গেল। যে কোয়ারিতে কাজ করতো সে কোয়ারির লোকরা লাশ পাঠিয়ে দিয়েছে। একটা খোঁজ-খবরও নেয়নি তারা।
স্থানীয় বাসিন্ধা সাবেক ইউপি সদস্য আজিজুর রহমান জানান, সিলেটের পাথর কোয়ারিতে অনিরাপদ পরিবেশে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এলাকার অনেক গরিব শ্রমিক কাজ করেন। তাদের জীবনের কোনও নিরাপত্তা নেই। মারা গেলেও কেউ খোঁজ নেয় না। অ্যাম্বুলেন্সে লাশ পাঠিয়ে দেয়।
সুনামগঞ্জ সদর থানার এসআই পবিত্র কুমার সিনহা জানান, সিলেট পুলিশের খবরের ভিত্তিতে লাশগুলো উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে।
গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন জানান, পাথর কোয়ারিতে কর্তব্যরত অন্য শ্রমিকদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে জানতে পারি নিহতদের মরদেহ সুনামগঞ্জ এবং দিরাইয়ে গুমের উদ্দেশ্যে রাতেই সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে আমরা স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় তিন জনেরই মরদেহ উদ্ধার করে তাদের পরিচয়ও নিশ্চিত করতে পেরেছি। মরদেহগুলো ময়নাতদন্তের জন্য ওসমানী মেডিকেল কলেজের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
সিলেট জেলা পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান জানান, নিহত শ্রমিকদের মরদেহ গোপন করার কাজে জড়িতদের ও পাথর উত্তোলনের ওই গর্তের মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।