1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ১০:১৭ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

যুদ্ধে গিয়েও স্বীকৃতি পাননি ইদ্রিছ আলী

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

আকরাম উদ্দিন ::
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে গুপ্তচরের কাজ করেছেন ইদ্রিছ আলী। দেশ স্বাধীনের পর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হলেও মুক্তিবার্তায় তাঁর নাম না থাকায় মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পাননি তিনি। স্বাধীনতার ৪৬ বছরেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি না পেয়ে তিনি হতাশা প্রকাশ করেছেন। যদিও প্রথমবার তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা হয়েছিলেন, অজ্ঞাত কারণে মুক্তিবার্তায় তাঁর নাম তোলা হয়নি। পরবর্তীতে তিনি আপিল করেও মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পাননি।
ইদ্রিছ আলীর জন্ম ১৯৫৮ সালের ৩১ অক্টোবর। তিনি সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গোয়ারছড়া গ্রামের মো. ইমান আলীর ছেলে। বর্তমানে শহরের কালীবাড়ি এলাকার বাসিন্দা তিনি।
ইদ্রিছ আলী জানান, ১৯৭১ সালে তিনি তখন সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণির ছাত্র। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি পাকহানাদারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে বালাট সাব-সেক্টরে যান। দেওয়ান ওবায়দুর রাজার চৌধুরী সাথে দেখা করেন এবং যুদ্ধে অংশ নিবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। ইদ্রিছ আলীর বয়স কম থাকায় তখন দেওয়ান ওবায়দুর রাজা চৌধুরী ‘সি’ কোম্পানির অধীনে গুপ্তচর নিযুক্ত করেন তাঁকে। তখন জুলাই মাস। ওই মাসে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের গুপ্তচর হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে গুরুত্বের সাথে কাজ শুরু করেন তিনি। সি-কোম্পানির অধীনে থেকে মুজিবনগর সরকারের পত্রিকা ও লিফলেট এবং পোস্টার সুনামগঞ্জ শহর পর্যন্ত বিলি করতেন ইদ্রিছ আলী। আবার সুনামগঞ্জ থেকে শহরের সকল রাজাকার ক্যাম্পের তথ্য সংগ্রহ করতেন। শহরের কোন বাংকারে কি ধরনের অস্ত্র রয়েছে, তা খোঁজ-খবর নিয়ে মানচিত্র অংকন করে লিখিতভাবে তথ্য প্রদান করতেন ইদ্রিছ আলী। বালাট সাব-সেক্টরের মেজর মোতালিব, ক্যাপ্টেন সালাহ উদ্দিন, ল্যাফটেন্যান্ট এস. কে. লালা, কর্নেল শওকত আলীর সাথে দেখা করে সকল তথ্য সরবরাহ করতেন ইদ্রিছ আলী। এই গুপ্তচরী কাজের দক্ষতার জন্য একবার একজন বিদেশি সাংবাদিক ইদ্রিছ আলীর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। এ সময় মেজর মোতালিবও উপস্থিত ছিলেন। সাক্ষাৎকার গ্রহণের সময় ইদ্রিছ আলীর হাতে রক্ষিত স্টেনগানসহ ছবি তোলা হয় এবং তাঁর যুদ্ধাকালীন সময়ের কথা রেকর্ড করা হয়।
ইদ্রিছ আলী আরো জানান, সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের ইচ্ছারচর গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা পীযুষ দে, শহরের তেঘরিয়া এলাকার বাসিন্দা শাহীনুর চৌধুরী বর্ষার সময় বিশ্বম্ভরপুর এলাকা থেকে গৌরারং ইউনিয়নের গৌরারং গ্রামে ইদ্রিছ আলীকে নৌকা করে নিয়ে আসতেন। পরে ইদ্রিছ আলী কৌশলে শহরে ঢুকে গুপ্তচরের কাজ করতেন।
সি-কোম্পানিতে শহরের আরপিননগরের বাসিন্দা মালদার আলী, বড়পাড়ার বাসিন্দা কামাল উদ্দিন, শহরতলির অচিন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন, আব্দুল জব্বার, ইব্রাহিমপুরের আমজদ আলী, মঙ্গলকাটা এলাকার ঘাসিগাঁওয়ের বাসিন্দা জয়নাল ভান্ডারী, হবিগঞ্জ বানিয়াচংয়ের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান, সিলেট বিশ্বনাথের বাসিন্দা ডেপুটি কোম্পানি কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম, দিরাই চন্ডিপুরের বাসিন্দা মহিউদ্দীন এবং সিলেট শহরের কাশেম আলীসহ অনেকে ছিলেন।
যুদ্ধকালীন সময়ে ইদ্রিছ আলীকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন শহরের ষোলঘর এলাকার বাসিন্দা হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, পুরাতন বাসস্টেশন এলাকার বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম টিপু, কালীবাড়ি এলাকার বাসিন্দা নসরু মিয়া, ডা. শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
দেশ স্বাধীন হলে ইদ্রিছ আলী সি-কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে চলে যান সিলেটের মেডিকেল ছাত্রাবাসে। সেখানে খাওয়া ও থাকার ব্যবস্থা ছিল। সিলেটে কয়েকদিন থাকার পর বিদায় নিয়ে সুনামগঞ্জে আসেন ইদ্রিছ আলী। তখন তিনি শহরের প্রাইমারি ট্রেনিং ইন্সটিটিউট (পিটিআই) থেকে অনেক মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে মুক্তিযুদ্ধের সনদপ্রাপ্ত হন। তখন থেকে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বিভিন্ন কাজে স্বেচ্ছায় জড়িত হন ইদ্রিছ আলী।
দীর্ঘদিন পর ইদ্রিছ আলী জানতে পারেন মুক্তিবার্তায় তাঁর নাম নেই। ২২/০৪/৯৯ খ্রি. তিনি মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্র ১৬২২৭২ নম্বরের আলোকে আপিলের আবেদন করেন। ইদ্রিছ আলীর আবেদন নম্বর ২৭৭৭৫৭ এ তৎকালীন এমপি ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আব্দুজ জহুর, শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রব্বানী, জেলা ইউনিট কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা কে.বি রশিদ, বড়পাড়া এলাকার বাসিন্দা সদর থানার ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা রেনু মিয়া, পৌর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা কুতুব উদ্দিন ও লঞ্চঘাট এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমানের স্বাক্ষর রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিছ আলীর নাম সদর থানা মুক্তিযোদ্ধাদের খসড়া তালিকায় মুক্তিযোদ্ধা দাবিদার ২৩৫ নম্বর বইয়ের ৬ নম্বর ক্রমিকে লিপিবদ্ধ রয়েছে।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান বলেন, ‘ইদ্রিছ আলী মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের একজন গুপ্তচর ছিলেন। তাঁকে আমি বালাট সাব-সেক্টরে দেখেছি। সে আমাকে বালাট হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিল। এ বিষয়ে অনেক প্রমাণাদি রয়েছে। তাঁর মুক্তিবার্তায় নাম উঠেনি। এটা আমি শুনেছি।’
শহরের লঞ্চঘাট এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান বলেন, ‘মক্তিযুদ্ধের সময় ইদ্রিছ আলী একজন সক্রিয় গুপ্তচর ছিল। সে গুরুত্বসহকারে দায়িত্ব পালন করেছে।’

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com