1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

প্রসঙ্গ : সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনের মাঠে নির্মাণে ক্ষুব্ধ সুধীজন

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

বিশেষ প্রতিনিধি ::
সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতরে নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন শহরের সুধীজন। তারা জানিয়েছেন এই জায়গার চেয়ে সাধারণের প্রবেশে কোন বাধা নেই এমন স্থানে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ করা হোক। এ নিয়ে আন্দোলনে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছেন সুধীজন। ক্ষুব্ধ সংস্কৃতিকর্মী ও সুধীজন এই সিদ্ধান্ত থেকে উদ্যোক্তাদের সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন শহীদ মিনারের ‘নিরাপত্তা’র কথা বিবেচনা করেই এমন স্থান বেছে নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, জেলা পরিষদের অর্থায়নে বহু জল্পনা-কল্পনার পর আগামীকাল রোববার সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনের মাঠে ‘সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে। ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এদিকে এর আগে সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ‘কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে’র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলে এর প্রতিবাদে ডিএস রোডস্থ শহীদ মিনারকে সংস্কার করে ও নতুন কাঠামোয় নির্মাণকার্যক্রম হাত দেওয়ার আন্দোলন করেন বিদ্যালয়ের ছাত্ররা। প্রতিবাদের মুখে জেলা পরিষদ ওই সময়ে তাদের বাস্থবায়নে কিছুটা পিছিয়ে যায় সম্প্রতি সর্বসাধারণকে অবগত না করে আবারও ‘কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার’ নির্মাণে উদ্যোগ নেওয়া হয়। সর্বসাধারণের দাবির ডিএস রোডস্থ শহীদ মিনারকে উপেক্ষা করে সার্বক্ষণিক রক্ষিত থাকে এবং সর্বসাধারণের সবসময় প্রবেশে অনুমতি নেই এমন স্থান জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের মাঠে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই খবরে ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়েছেন সুধীজন।
সুধীজন জানান, সাধারণত দেশের সর্বসাধারণের সবসময় প্রবেশাধিকার থাকে এমন উন্মুক্ত স্থান, অনুষ্ঠানে মাইক বাজানো যায়, নিয়মিত জাতীয় জাতীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন ইস্যুতে প্রতিবাদ, প্রতিরোধসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রম অবাধে চালানো যায় এমন স্থানকেই শহীদ মিনার নির্মাণে বেছে নেওয়া হয়। গণবিরোধী সিদ্ধান্ত ও স্থানীয় প্রশাসনের বিতর্কিত বিভিন্ন কর্মসূচিসহ জনসাধারণের দাবি-দাওয়া নিয়ে নিয়মিত কর্মসূচি পালিত হয় শহীদ মিনারে। একটি আবেগ, প্রতিবাদ, প্রতিরোধের স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে শহীদ মিনার। জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে সম্মান করেন শহীদ মিনার। কিন্তু সুনামগঞ্জে ‘হঠকারি সিদ্ধান্তে’ যে স্থানকে বেছে নেওয়া হয়েছে তাতে অবাক হয়েছেন সুধীজন। তাদের দাবি এখানে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মিত হলে সর্বসাধারণের নিয়মিত প্রবেশাধিকার থাকবে না। রক্ষিত একটি স্থানে শহীদ মিনার থাকায় জনসাধারণ নিয়মিত কর্মসূচিতে মাইক বাজাতে পারবেনা, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম চালাতে পারবেনা। তাছাড়া সরকারি দু’টি প্রতিষ্ঠানের ভিতরে শহীদ মিনারটির অবস্থান থাকায় সরকারি কর্মদিবস পরে সর্বসাধারণ কোন কর্মসূচিও গ্রহণ করতে পারবেনা। মূলত গণআন্দোলন থেকে জনসাধারণকে দূরে রাখতেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণে এই কৌশল নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ সুধীজন ও সংস্কৃতিকর্মীদের।
জানা গেছে, সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার যথাস্থানে নির্মাণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সুনামগঞ্জের আপামর জনসাধারণ দাবি জানিয়ে আসছেন। তারা নানা কর্মসূচিও পালন করেছেন। গণজাগরণ মঞ্চের উত্তাল সময়ে নতুন প্রজন্ম শহীদ মিনার সম্প্রসারণে স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগও নেন। এ নিয়ে একাধিক কমিটি হলেও রহস্যজনক কারণে কমিটিও নীরব। ডিএস রোড এলাকার শহীদ মিনার সংস্কারে কেউ গুরুত্ব দেয়নি। এ নিয়ে সুনামগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সদস্যসচিব মালেক হুসেন পীর ডিএস রোড এলাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার রক্ষায় আদালতের দ্বারস্থ হলে তার আবেদনও খারিজ করা হয়েছে। সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র নানা ষড়যন্ত্র করছে বলে সুধীজনের অভিযোগ।
সুনামগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সদস্যসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মালেক হুসেন পীর বলেন, এমন একটি রক্ষিত স্থানকে কিভাবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য বেছে নেওয়া হলো তা বোধগম্য নয়। এ বিষয়টি আমাকে অবাক করেছে। তিনি বলেন, সাধারণত উন্মুক্ত স্থানে জনসাধারণের অবাধ প্রবেশাধিকার এবং উন্মুক্ত কর্মসূচি পালনের স্বাধীনতা থাকে এমন স্থানেই সারাদেশে শহীদ মিনার নির্মিত হচ্ছে। কিন্তু সুনামগঞ্জে এমন স্থানে শহীদ মিনার নির্মিত হচ্ছে যেখানে ইচ্ছে করলেও কেউ কর্মসূচি পালন করতে পারবেনা। বাঙালির আবেগ ও আন্দোলনকে দমিয়ে দিতেই এমন স্থান বেছে নেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, যেখানে শহীদ মিনার নির্মিত হচ্ছে সেখানে অফিস চলাকালে কোন কর্মসূচি চালানো যাবেনা। অফিস শেষেও কেউ কর্মসূচি করতে পারবেনা।
সুনামগঞ্জ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি শীলা রায় বলেন, এমন আবদ্ধ (ডিসি-জজ আদালত)-এর মধ্যবর্তী রক্ষিত স্থানে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের বিষয়টি আমাকে হতবাক করেছে। বাংলাদেশের কোথাও এমন স্থানে শহীদ মিনার নেই। এত জানাশোনা উচ্চশিক্ষিত লোক হয়ে আয়োজকরা কিভাবে এই গণবিরোধী সিদ্ধান্তটি নিলেন। আমরা এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাই। তিনি বলেন, এখানে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মিত হলে কোন নাগরিক অবাধে কোন কর্মসূচি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ কর্মসূচি পালন করতে পারবেনা। তিনি বলেন, এমন একটি আবদ্ধ স্থানে শহীদ মিনার নির্মাণের অনুমতি তাদের কে দিল।
বিশিষ্ট আইনজীবী ও লেখক বীর মুক্তিযোদ্ধা বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু বলেন, শহীদ মিনার আমাদের আবেগ ও সম্মানের জায়গা। সর্বসাধারণ শহীদ মিনারকে শ্রদ্ধা করেন। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে যারা উন্মুক্ত স্থানের বদলে বিশেষ বিশেষ সময় ছাড়া সর্বসারধারণের প্রবেশাধিকার নেই এমন স্থানটি বেছে নেওয়ায় আমরা নির্বাক। এমন একটি স্থানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হচ্ছে যেখানে ইচ্ছে করলেই যখন তখন আমরা প্রতিবাদ করতে পারবনা, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম চালাতে পারবনা। এমন স্থানে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের আগে সর্বসাধারণের মতামত নেওয়া উচিত ছিল।

সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট বলেন, আমরা অনেক চেষ্টা করেছি ডিএস রোড এলাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নতুন করে বিশাল পরিসরে নির্মাণ করব। কিন্তু জেলা জজ আদালতের সংশ্লিষ্টরা কোনক্রমেই রাজি হননি। অন্য কোথাও স্থান পাওয়া যাচ্ছিলনা। যার ফলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের মাঠকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া শহীদ মিনারের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই এমন স্থান বেছে নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, তবে এখানে শহীদ মিনার নির্মিত হলে জনসাধারণের অবাধ কর্মসূচি পালন করতে পারবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com