সুখ :
জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত, যখন সে বুঝতে শেখে তা থেকে শুরু করে মরণ ঘণ্টা বাজার আগ পর্যন্ত সবাই সুখী হতে চায়। কিন্তু সবার কপালে সুখ আসেনা। সুখ মানুষের কাছে একেক জনের একেক রকম। কারো টাকাতে সুখ, কারো বাড়িতে সুখ, কারো গাড়িতে সুখ, কারো সুন্দরী বউয়ে সুখ, কারো নাম ও যশে সুখ, কারো বিলাসিতায় সুখ, কারো ভোগে সুখ, কারো ত্যাগে সুখ, কারো ফেসবুকে সুখ, কারো ইন্টারনেটে, কারো করো জগিংয়ে, কারো রাইডিংয়ে, কারো লেখালেখিতে, কারো আবার পড়াশোনায় সুখ। সুখ বাজারে কিনতে পাওয়া যায়না, কুড়িয়ে পাওয়া যায়না, এমনকি সুখ ভাড়াতেও পাওয়া যায়না। আসলে সুখ উপলব্ধির ব্যাপার, বেশিরভাগ মানুষই নিজেকে অসুখী বলে মনে করে। অসুখী মনে করার অনেক কারণ আছে। দেহে যেরকম রোগ আছে, মনেরও তেমনি রোগ আছে। অন্যের সুখ দেখে আপনি যদি জেদ করেন? তাহলে আমি বলব বোকামি করেন। কারণ জেদ, হিংসা হলো খুনীর মত, আপনার সুখকে হত্যা করে। পরশ্রীকাতরতাও ঠিক তেমনি। এখন আসি স্বার্থপরদের কথায়, স্বার্থপর কোনো লোককে সুখী হতে আমি দেখিনি। স্বার্থপর মানুষের অস্তিত্ব নিয়ে টানাটানি শুরু করে, সে নিজেই টিকতে পারে কিনা সন্দেহ। সুখী হওয়াতো বহু পরের কথা।
ভীরুতা ও দুশ্চিন্তাও ঠিক তেমনি। দুশ্চিন্তার কাজ হল ক্ষয় করা। দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মানুষ ক্ষয়রোগে আক্রান্ত, সেই মানুষ সুখী হবে কিভাবে?
সুখী হবার উপায় নিজেকে সুখী করা। বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে সুখ নিয়ে আলোচনা করুন। নিজেকে সুখী বলে প্রচার করুন। প্রচুর হাসুন, মানুষকে হাসান এবং আপনি সুখী একথা ভেবে গর্ব অনুভব করুন। দেখবেন সত্যি সত্যি সুখী একজন মানুষে পরিণত হয়েছেন। যেখানেই যান সাথে করে সুখী সুখী ভাবটা নিয়ে যান। সুখের ভঙ্গি করা সুখী হওয়ার নামান্তর। এভাবে চললে যে সুখী হতে চায় সে সুখী হতে পারবে, সবার কপালে সুখ আসেনা সে কথাটি মিথ্যায় পর্যবসিত হবে। এবার আসি বুড়ো হওয়া সম্বন্ধে, বুড়ো হওয়ার কোনো বয়স নেই। আসলে মানুষ বুড়ো হয় তখনই যখন সে নিজেকে বুড়ো বলে মনে করে। কেউ চল্লিশ বছর বয়সে নিজেকে বুড়ো বললে কারো কিছু করার নেই। আসলে বয়সই সম্পদ, আপনার বয়স পঞ্চাশ-আশি-নব্বই যাই হোক, বড়বড় মনীষীদের জীবনী ঘেঁটে দেখুন তারা তাদের তথাকথিত মধ্যবয়স অতিক্রম করার পরই মহৎ কিছু সৃষ্টি করেছেন। নিজেকে বুড়ো মনে করলেই আপনি বুড়ো।
নিজেকে বুড়ো মনে করলে মৃত্যু ভয় জাগে। মৃত্যু ভয় মৃত্যুকে কাছে ডেকে আনে। পঞ্চাশ বছর বয়সের দিকে অনেক মানুষ মনে করে তারা বুড়ো হয়ে গেছে। তাদের আচার ব্যবহারে, কথা বার্তায় মুরব্বীয়ানা প্রকাশ পায়। এরা আসলে নিজেদেরকে বুড়ো হতে সাহায্য করছে। তারা জানেনা এ সাহায্য করাটা যে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার সমান।
মৃত্যু অবধারিত কারণ অনন্তকাল বেঁচে থাকার মহৌষধ যা এখনো আবিষ্কার হয়নি। মরার আগে কেনো আমি মরব? নিজেকে বুড়ো মনে করা মৃত্যুর সমান। আপনার বয়স যতই হোক, কখনো নিজেকে বুড়ো বলে মনে করবেন না। সেই লোকই বুড়ো যে নিজেকে বুড়ো বলে মনে করে।
মনের একটা বিশেষ অবস্থার নাম সুখ, আমি সুখী। আমার ভালো স্বাস্থ্যের জন্য আমি সুখী। আমি দিনে দিনে সামনের দিকে এগুচ্ছি এবং নিজের উন্নতি করছি। তাই আমি সুখী। আমি মানুষ হয়ে জন্মেছি তাই আমি সুখী। আমি নিজেকে সুখী বলে মনে করি, তাই আমি সুখী। এই বাক্যগুলি মনে মনে প্রতিপদে প্রয়োগ করব। মা-বোনদের প্রতি অনুরোধ রইল আপনারা হাসি-খুশি-সুখ-সমৃদ্ধি ভরপুর করে রাখবেন আপনাদের জীবন। দুশ্চিন্তা করবেন না, দুশ্চিন্তার সাথে সাথে ক্ষতি হবে আপনার স্বাস্থ্যের ও আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ রূপ আর লাবণ্য।
তথ্য : সুখ ও সমৃদ্ধি, বিদ্যুৎ মিত্র।